নিউইয়র্কে সহিংসতা

একটা কথা প্রচলিত আছে—বিপদ কখনো একা আসে না। আর যদি সময়টি হয় আপৎকাল, তখন তো কথাই নেই। আজকের বিশ্ব যে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে আপৎকাল। আপদ মানে তো দুর্দশা, দুঃখের বিস্তার। এই করোনাকালের চেয়ে আর কী দুর্দশা থাকতে পারে মানুষের। মানুষ এই আপদের সঙ্গে লড়াই করছে। আর এই লড়াইয়ের মধ্যেই হাজির হচ্ছে একের পর এক বিপদ।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই বড় সংকটের মুখে রয়েছে। আর অর্থনৈতিক সংকট অবধারিতভাবেই টেনে আনছে বহু বিচিত্র সব বিপদকে। কর্মহীন হচ্ছে মানুষ। এই কর্মহীনতা অন্য সময়ের মতোও নয়। নিজের কোনো অযোগ্যতায় বা দুষ্কর্মের কারণে কাজ হারাতে হচ্ছে না। মানুষ ঘরবন্দী অবস্থাতেই কাজ হারিয়ে ফেলছে। কাজহীন, আয়হীন মানুষেরা এখন জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। আর এই অপরাধেরই এক ভয়াবহ উল্লম্ফন এখন দেখছে নিউইয়র্ক নগরী।
গত কয়েক সপ্তাহে নিউইয়র্ক নগরীতে ব্যাপকভাবে সহিংসতা বেড়েছে। শুধু এক সপ্তাহেই নিউইয়র্কে সহিংসতায় ১১ জন নিহত ও ৪৫ জন আহত হয়। শুধু নিউইয়র্ক কেন, শিকাগোসহ বেশ কিছু শহরেও সহিংসতা বাড়ছে। আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাই রাতে সহিংসতায় নিউইয়র্ক নগরীতে ৪০ জন ও শিকাগো নগরীতে ৭২ জন আহত হয়। এসব ঘটনায় ওই রাতেই নিউইয়র্কে নয়জন ও শিকাগোতে দুজনের মৃত্যু হয়। শুধু গত সপ্তাহান্তে নিউইয়র্কে সহিংসতায় ৪৯ জন আহত হয়। শহরটিতে এক মাসে ২০৫টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, যা গত ২৪ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও সঠিকভাবেই ঘটনার কারণ চিহ্নিত করেছেন। তিনি এ জন্য করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে মোটাদাগে দায়ী করেছেন। প্রথম শুনলে যেমনই মনে হোক, এর সত্যতা রয়েছে।
বৈশ্বিক এ মহামারিতে একক শহর হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউইয়র্ক। বলা যায় এক দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে শহরটিকে। এই মহামারির কারণে নগরীর বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানবিকতার দাবি মেনে বহু বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এই সময়ে, যাদের একটি অংশ ভীষণ রকম অপরাধপ্রবণ। সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট, দীর্ঘকালের ঘরবন্দী ইত্যাদিকে মিলিয়ে নিলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা সহজেই বোঝা যাবে।
এদিকে এই মহাদুর্যোগের মধ্যেই ঘটেছে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের জেরে আমেরিকাজুড়ে পুলিশ বিভাগ সংস্কারের দাবি ওঠে, যা যৌক্তিকও। এই দাবি কিছুটা মেনে নিয়ে সীমিত পরিসরে সংস্কারও হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ দমনে পুলিশের প্রচলিত পন্থাগুলোকে সীমিত করেছে। এখন এটিই আবার বুমেরাং হয়ে উঠছে। অপরাধীরা এই সুযোগটি নিতে শুরু করেছে।
এখন যখন সহিংসতা বাড়ছে, তখন কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তার কট্টর অভিবাসন নীতির পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেছে। তারা বলপ্রয়োগের নীতির পক্ষে কথা বলছে। ফলে এটি বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই কমিউনিটিগুলোকে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে অপরাধ দমনে প্রচারকাজ চালানোর পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে এর জের অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতে পারে।