ফাহিম সালেহকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন স্বজনেরা

ফাহিম সালেহ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
ফাহিম সালেহ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তাঁর একান্ত স্বজনেরা। ১৯ জুলাই পারিবারিক আয়োজনে নিউইয়র্ক আপস্টেট উইন্ডসর শহরে নূর মুসলিম কবরস্থানে তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজা ও সমাহিত করার সময় ফাহিম সালেহর পরিবারের একান্ত লোকজনসহ আমন্ত্রিতরা উপস্থিত ছিলেন।

ফাহিম সালেহর জানাজা ও দাফনের সময় কোনো সংবাদমাধ্যম্যকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফাহিম সালেহর আপস্টেটের স্কুলের কয়েকজন সহপাঠী জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বন্ধুর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফাহিম সালেহর মরদেহ কবরস্থানে পৌঁছায়। আধা ঘণ্টার মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। নিউইয়র্ক পুলিশের পাহারার মধ্য দিয়ে লাশবাহী একটি গাড়ি ফাহিম সালেহর মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। নিউইয়র্ক রাজ্যের সামাজিক ব্যবধানের নিয়ম মেনেই লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল ম্যানহাটানের ইস্ট ২৬৫ হাউস্টন স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে ফুল আর শোকের বার্তা দিয়ে লোকজন তাঁকে এখনো স্মরণ করছে। ১৯ জুলাই আমেরিকানদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদেরও দেখা গেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে শোক জানাতে। এর মধ্যে সংস্কৃতিকর্মী গোপাল সান্যাল ও শুভ রায়কে স্বদেশিদের নিয়ে ইস্ট হাউস্টনের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনে শোক জানাতে দেখা যায়। তাঁরা ফাহিম সালেহর জন্য দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। বিচারে ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।

১৯ জুলাই পারিবারিক আয়োজনে নিউইয়র্ক আপস্টেট উইন্ডসর শহরে নূর মুসলিম কবরস্থানে ফাহিম সালেহর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
১৯ জুলাই পারিবারিক আয়োজনে নিউইয়র্ক আপস্টেট উইন্ডসর শহরে নূর মুসলিম কবরস্থানে ফাহিম সালেহর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

নিউইয়র্কের কমিউনিটি নেতা ফকু চৌধুরীও ঘটনাস্থলে গেছেন। তিনি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে বলেন, ফাহিম সালেহ বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ একজন বিল গেটস বা এলন মাস্ককে পেত। তাঁর সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হতো। তাঁর সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানান।

ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে ফুল আর শোকের বার্তা দিয়ে বাংলাদেশিরাও তাঁকে স্মরণ করছে। ছবি: প্রথম আলো
ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে ফুল আর শোকের বার্তা দিয়ে বাংলাদেশিরাও তাঁকে স্মরণ করছে। ছবি: প্রথম আলো

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তাঁকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ১৮ জুলাই হ্যাসপিলের আইনজীবী স্যাম রবার্টস এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমরা সত্য ঘটনার খুবই প্রারম্ভিক অবস্থায়। এ মামলা দীর্ঘ এবং জটিল হবে।’ টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিলের আইনজীবী জনসাধারণকে এ নিয়ে মন খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউইয়র্কের কমিউনিটি নেতা ফকু চৌধুরীও ঘটনাস্থলে গেছেন শোক জানাতে। ছবি: প্রথম আলো
নিউইয়র্কের কমিউনিটি নেতা ফকু চৌধুরীও ঘটনাস্থলে গেছেন শোক জানাতে। ছবি: প্রথম আলো

এ ঘটনায় পুলিশের তদন্ত অব্যাহত আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আর কোনো অগ্রগতির কথা জানানো হয়নি নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে। তদন্ত–সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনার কারণেই পরিবারের পক্ষ থেকে নানা গোপনীয়তা ও সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে ফুল আর শোকের বার্তা দিয়ে আমেরিকানরা এখনো তাঁকে স্মরণ করছে। ছবি: প্রথম আলো
ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে ফুল আর শোকের বার্তা দিয়ে আমেরিকানরা এখনো তাঁকে স্মরণ করছে। ছবি: প্রথম আলো

১৪ জুলাই বিকেলে নিউইয়র্ক নগরের ম্যানহাটনে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিম সালেহর খণ্ড খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুরুতে এই হত্যাকাণ্ডকে চরম পেশাদার কোনো খুনির কাজ বলে ধারণা করা হয়। ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতককে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ফাহিম সালেহর সাবেক ব্যক্তিগত নির্বাহী মাত্র ২১ বছরের টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিলকে পুলিশ ১৭ জুলাই সকালে গ্রেপ্তার করে।