আমেরিকায় অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে

করোনা পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে ট্রাম্প আবারও অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণ করবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: ইউএসসিআইএসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
করোনা পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে ট্রাম্প আবারও অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণ করবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: ইউএসসিআইএসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

করোনা মহামারির অজুহাতে আমেরিকার অভিবাসন নিয়ে নতুন খেলায় নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আইন করে বন্ধ করতে না পারলেও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য অর্জনের প্রয়াস নিয়েছেন। করোনা মহামারি শুরু হলে গত এপ্রিল মাসে আমেরিকায় প্রথম দফা ইমিগ্রেশনের কাজ বন্ধ করে দেন ট্রাম্প। তখনই আশঙ্কা করা হয়েছিল তাঁর এ উদ্যোগ সাময়িক নয়। গত মাসে আরেকটি আদেশে চলতি বছরের জন্য তিনি আমেরিকায় অভিবাসীদের আগমন বন্ধ করে দিয়েছেন।

করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রিত হলেও সহজে যাচ্ছে না। মহামারির জের হিসেবে আমেরিকার অর্থনীতির নাজুকতাও দীর্ঘায়িত হবে। এমন পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে ট্রাম্প আবারও নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণ করবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পুনর্নির্বাচন নিয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ট্রাম্প এখন বেকায়দায় আছেন। তাঁর সমর্থকদের কাছে অভিবাসন বিরোধিতা খুবই জনপ্রিয়। শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটা অংশ মনে করে, আমেরিকা ক্রমেই অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিশ্রমী অভিবাসীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা তাঁদের জন্য এখন জোরালো হয়ে উঠেছে। এসব গোড়া সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরেক দফা অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা বাড়াবেন নির্বাচনের আগেই, এমন মনে করা হচ্ছে।

পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে মেধাভিত্তিক অভিবাসন চালু করার কথা ট্রাম্প এখন সুযোগ পেলেই বলছেন। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কংগ্রেসে আইন প্রণয়নের চেষ্টা ব্যর্থ হলে ট্রাম্প নানা অজুহাতে তাঁর নির্বাহী আদেশকে কাজে লাগাচ্ছেন। আমেরিকার কর্মজীবীদের চাকরির সুবিধা দেওয়ার জন্য কর্মী ভিসাও নিয়ন্ত্রণ করছেন। গত মাসে জারি করা নির্বাহী আদেশে অধিকাংশ কর্মী ভিসা প্রদানও সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মী ভিসায় আসা লোকজনের পরিবারের ভিসা প্রদানও বন্ধ রাখা হয়েছে।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন লোকজন এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, কোভিড-১৯ কে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন ট্রাম্প। আমেরিকার লাখো অভিবাসী এর মধ্যেই দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন। অনেকেই তাঁদের পরিবারের নিকটজন আদৌ আর আসতে পারবেন কি না, এ নিয়ে সন্দেহে পড়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনাকালীন নির্বাহী আদেশে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২৫ হাজার মানুষের অভিবাসন তিনি ঠেকাতে পেরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর এ প্রয়াসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন দেশগুলোর অভিবাসীরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকটা টার্গেট করেই এ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন। কর্মী ভিসায় এশিয়ার দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য অভিবাসন হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ল্যাটিনো, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে পারিবারিক অভিবাসনে আসা লোকজনের সংখ্যা বেশি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের পছন্দ ইউরোপীয় বা শ্বেতাঙ্গ প্রধান দেশের অভিবাসীদের। মহামারির কারণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন এখন এ অজুহাতকে কীভাবে দীর্ঘস্থায়ীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বেটার চায়নিজ আমেরিকান কমিউনিটি নামে একটি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক গ্রেস চ্যাঁ মিকিবেন বলেন, পারিবারিক অভিবাসন বন্ধের প্রয়াসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়া থেকে আসা পরিবারগুলো। আমেরিকায় প্রতিবছর চীন থেকে আসা অভিবাসীরা সবচেয়ে বেশি পারিবারিক অভিবাসনের আবেদন করে থাকেন। পারিবারিক অভিবাসনে আমেরিকায় আসার জন্য সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় চীন, ভারত, ফিলিপাইন ও মেক্সিকোর লোকজনকে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মহামারিকে একটা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

মহামারির কারণে নির্বাহী আদেশে আমেরিকার কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুবিধার কথা উল্লেখ করা হলেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। দক্ষ কর্মীদের অভাবে আমেরিকার বহু প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। গত মাসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি কম্পিউটারসংশ্লিষ্ট কাজের খালি পদে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এসব খালি পদ পূরণের জন্য কোম্পানিগুলো লোক পাচ্ছে না।

অভিবাসন আইনজীবী আবু বাকার মিয়া বলেন, নির্বাহী আদেশে অভিবাসন সাময়িক বন্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অভিবাসীরা। পরিবারের পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন। আমেরিকায় প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার পারিবারিক অভিবাসন ভিসা প্রদান করা হয়।