গরিবের চিকিৎসক লক্ষ্মী সায়গল

লক্ষ্মী সায়গল
লক্ষ্মী সায়গল

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সেনানী, আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য ও প্রখ্যাত চিকিৎসক, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী সায়গলের অষ্টম প্রয়াণ দিবস ছিল ২৩ জুলাই। দিবসটি সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। বর্তমানে অতিমারি করোনায় আক্রান্ত সমগ্র বিশ্ব। জনজীবন বিপর্যস্ত। এই মুহূর্তে প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা। লক্ষ্মী সায়গলের জীবনের আদর্শ ছিল জনস্বাস্থ্য এবং গরিব মানুষের চিকিৎসা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেই কাজে ব্রতী ছিলেন।
লক্ষ্মী সায়গলের জন্ম ১৯১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মাদ্রাজে। বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী এম স্বামীনাথন ও মা সমাজসেবী স্বাধীনতা সংগ্রামী আম্মুকুটি। তাঁর মা-বাবার বিয়ের ঘটনাও ছিল সে সময়ের একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। মা ছিলেন কেরালার উচ্চবর্ণের নায়ার পরিবারের মেয়ে। আর বাবা নাম্বুদ্রি পরিবারের ব্রাহ্মণ সন্তান। সেই সময়ে উভয় পরিবারের বিবাহ হতে পারত অপ্রাতিষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে। স্বামীনাথন বিয়ের বৈধতার ব্যাপারে কোনো অস্পষ্টতা রাখতে চাননি। প্রথাগত বিয়ের পর পনেরো বছরের বালিকা বধূকে ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে বিয়েটা রেজিস্ট্রি করে ফেলেন।
শৈশবে কেরালার জাতপাতের বেড়াজাল সমাজকে কঠোরভাবে ঘিরে রেখেছিল। ‘দলিতদের মধ্যে শুধু অস্পৃশ্যতাই ছিল না। এমন মানুষেরাও ছিল যাদের ছায়া পর্যন্ত মাড়ানো চলে না।’ লক্ষ্মীর ঠাকুমা তাঁকে বলেছেন আদিবাসীদের নোংরা ছেলেগুলোর সঙ্গে খেললে বা ছুঁলে অন্ধ হয়ে যাবে। বালিকা লক্ষ্মী পরোয়া না করে একদিন হাঁটতে হাঁটতে একটি নজরকাড়া আদিবাসী মেয়েকে ধরে ফেলল। তার গায়ে ছিল অজস্র পুঁতির মালা। তাকে ধরে ঠাকুমাকে বলল, ‘আমি ওকে ছুঁয়েছি। কী হয়েছে তাতে? আমি রোজ ওকে নিয়ে আসব। আমাদের সঙ্গে ও খেলবে।’ বিমূঢ় ঠাকুমা কিছু বললেন না, লক্ষ্মীর এক কাকা গান্ধীবাদী এবং অস্পৃশ্যতা বিরোধী ছিলেন। তিনি লক্ষ্মীকে সমর্থন করে বললেন, ‘কাউকে অস্পৃশ্য করে রাখা উচিত নয়। এখন থেকে আমাদের বাড়ির দরজা সবার জন্য খোলা থাকবে।’
বই পড়া, ঘোড়ায় চড়া, টেনিস খেলা, সাঁতার কাটা এগুলো ছিল কিশোরী লক্ষ্মীর একান্ত প্রিয়। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন মাদ্রাজের চার্চ পার্ক কনভেন্টে। ১৯৩০ সালে সিনিয়র স্কুল লিডিং সার্টিফিকেট পাস করেন। বিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাল্যবিয়ে সমাজসংস্কার বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। লক্ষ্মীর মা আম্মুকুটি নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনে যোগ দেন। মায়ের সঙ্গে সভাগুলোতে তিনিও যেতেন।
মাদ্রাজে কুইন মেরি কলেজে পড়ার সময় স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন। স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি সমাজসংস্কার আন্দোলনের দাবিগুলো যেমন দলিতদের মন্দিরে প্রবেশাধিকারের দাবি, বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে প্রচার আন্দোলনে তিনি উপস্থিত থাকতেন। কলেজে জাতীয় কংগ্রেসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেও লক্ষ্মী নিজেকে নিবেদিত কংগ্রেস কর্মী হিসেবে মনে করেননি কখনো। কংগ্রেস সমর্থক হিসেবে ভেবেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ছাত্রছাত্রীকে স্কুল-কলেজ ছাড়তে হবে—গান্ধীজির এই নির্দেশকে মানতে পারেননি তিনি। শিক্ষার সুযোগ যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরা যদি এগিয়ে না আসেন নতুন ভারত কারা গড়বেন? অহিংস উপায়ে দেশ স্বাধীন হবে তিনি তা বিশ্বাস করতেন না।
১৯৩২ সালে তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই সময়ে সাম্যবাদ ও সাম্যবাদী তত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত হন। একবার সরোজিনী নাইডুর ভগ্নী র‌্যাডিকেল বিপ্লবী সুহাসিনী মাদ্রাজে আসেন। তিনি বললেন, কমিউনিজম সাম্যবাদের মতন রাজনৈতিক ব্যবস্থাই ভারতকে সাহায্য করতে পারে। কমিউনিস্ট আন্দোলনের ওপর প্রথম যে বইটি পড়েছিলেন, সেটি হলো এডগার স্কোর ‘রেড স্টার ওভার চায়না।’
১৯৩৮ সালে এমবিবিএস পাস করেন লক্ষ্মী সায়গল। এক বছর পর স্ত্রীরোগ ও ধাত্রী বিদ্যায় ডিপ্লোমা করার পর ১৯৪০ সালে সিঙ্গাপুর চলে যান। সেখানে কেরালার এক চিকিৎসক বন্ধুর হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসু সিঙ্গাপুরে এসে একটি সম্মেলন করেন। সেখানে রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্টস লীগ ও আইএনএর অধিনায়কের দায়িত্ব সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে তুলে দিলেন। সেই আবেগঘন অনুষ্ঠানে লক্ষ্মী উপস্থিত ছিলেন। পরদিন এক প্রকাশ্য সভায় সেনাবাহিনীর লোকজন এবং জনগণের উপস্থিতিতে তিনি সুবিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।’ ‘সেখানেই তিনি ১৮-২৫ বছর বয়সীদের যোগদানের আহ্বান জানান। তিন সপ্তাহের মধ্যে আইএনএর আয়তন দ্বিগুণ হয়ে গেল। লক্ষ্মী আগ্রহ প্রকাশ করলেন নেতাজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। ১৯৪৩ সালের ৫ জুলাই এল সেই সুযোগ। ৫ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর নেতাজি তাঁকে প্রস্তাবিত ঝাঁসির রানি বাহিনীর অধিকারের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানান এবং লক্ষ্মী সায়গল সাগ্রহে রাজি হন।
লক্ষ্মী পরে ক্লিনিক বন্ধ করে দেন। ১৯৪৩ সালের অক্টোবরে ১৫০০ নারী সেনাকে নিয়ে প্রথম শিক্ষা শিবির শুরু হয়। নারীবাহিনীর আরেকটি শাখা তৈরি হলো ব্রহ্মদেশের রেঙ্গুনে। সেখানকার বেশির ভাগ মহিলা ছিলেন বাংলা ভাষী। তার দু দিন আগে ২১ অক্টোবর নেতাজি অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন। লক্ষ্মীকে তাঁর সরকারের মহিলাদের সমস্যা ও ঝাঁসি রানি বাহিনীর দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি শুধু বক্তৃতায় না বলে কার্যত প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ঝাঁসির রানি বাহিনী সিঙ্গাপুর থেকে বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) দিকে রওনা হয়। ১৯৪৪ সালে মে মাসে বাহিনীর ছোট অংশ রেঙ্গুন থেকে ইমফলের দিকে রওনা হয়। আইএনএর ইম্পল আক্রমণ মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় ব্রিটিশ বাহিনীর প্রতিরোধের কারণে। বর্ষা আগেই শুরু হওয়ায় যাতায়াত অসম্ভব হয়ে ওঠে। নেতাজি অনীহা সত্ত্বেও পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দেন।
১৯৪৫ সালের মে মাসে মিয়ানমারের জঙ্গলে ব্রিটিশবাহিনী লক্ষ্মীকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথমে রেঙ্গুনে, পরে মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চলে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। রেঙ্গুনে আইএনএ শিখ পরিবারে ওষুধের দোকানে রোগী দেখা শুরু করলেন। ১৯৪৫ সালে ২১ অক্টোবর আইএনএ সেনা ও সমর্থকদের নিয়ে এক বিশাল সভা হয়। কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তাদের মাধ্যমে আইএনএর সংবাদ ভারতে পৌঁছাল। ১৯৪৬ সালের মার্চে মুক্তি হলে ভারতে লক্ষ্মীকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হলো। লক্ষ্মী ও আইএনএর সহযোদ্ধাদের কাছে দেশভাগের বিষয়টি কঠিন আঘাত হিসেবে হাজির হলো। দেশভাগের জন্য কংগ্রেসকে পুরোপুরি দায়ী করা হলো। লক্ষ্মীর মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। সেই সময়ে তিনি বামপন্থীদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পি সি যোশী তাঁকে ‘অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরিয়ে দিলেন।’ লক্ষ্মী কারণটা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘জার্মান ও জাপানিদের সঙ্গে নেতাজির মৈত্রী।’
লক্ষ্মী ১৯৪৭ সালের মার্চে কর্নেল প্রেমকুমার সায়গলকে বিয়ে করেন। সায়গল ছিলেন বিখ্যাত আইএসএর ট্রায়ালের তিন অভিযুক্তদের মধ্যে একজন। তাঁরা বিয়ের পর লাহোর থেকে কানপুরে বসবাস করতে শুরু করেন। লক্ষ্মী সেখানে চিকিৎসকের পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। ১৯৪৭ সালের আগস্টে উদ্বাস্তুদের আসার স্রোত বেড়ে গেল। লক্ষ্মী উদ্বাস্তুদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে হিন্দু-মুসলিম কোনো বিভেদ টানেননি। ধর্মীয় মেরুকরণের সেই বছরগুলোতে তিনি ছিলেন কানপুরের একমাত্র চিকিৎসক, যিনি মুসলিমদেরও চিকিৎসা করতেন। প্রথমে নবাবগঞ্জে ডিসপেনসারি খোলেন। সেখানে তাঁর কাছে আসতেন মূলত গরিব ও শ্রমজীবী মানুষ। পরে আর্য নগরে বসত শুরু করেন । এখানেও বেশির ভাগ রোগী ছিলেন শ্রমজীবী। অনেকেই কানপুরের কাপড় কলের শ্রমিক। তাঁর ক্লিনিকের কর্মীদের অনেকেই ছিলেন লাহোর থেকে আসা উদ্বাস্তু। এই ক্লিনিকটি গরিব আমজনতার কাছে ‘মাম্মীর ক্লিনিক’ নামে পরিচিত ছিল।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধ ও পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তুদের চলে আসার পরিস্থিতি ফের লক্ষ্মী সায়গলকে রাজনীতিতে টেনে আনে। পিপলস ডেমোক্রেসির একটি সংখ্যায় জ্যোতি বসুর আবেদন লক্ষ্মীর চোখে পড়ে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু শিবিরে চিকিৎসক ও ওষুধের আবেদন জানিয়েছেন বসু। সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়ে বস্ত্র ও ওষুধের সরবরাহ নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন লক্ষ্মী। সেখান থেকে পিপলস রিলিফ কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বনগাঁ সীমান্তে চলে গেলেন। সেখানে টালির ছাউনির ছোট্ট একটি ঘরে আর্তদের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করেন। বনগাঁর স্বাস্থ্যশিবির থেকে ফিরে এসে রইলেন কলকাতায় সিপিআই (এম)-এর পলিট ব্যুরোকে পরিস্থিতি জানাবার জন্য। সেই সময়ে পার্টির সদস্যপদের জন্য আবেদন করলেন। তার সে সদস্যপদ বহু বছর গোপন ছিল। ১৯৭৫-৭৭ জরুরি অবস্থার সময় পুলিশের নজর এড়িয়ে দলের জন্য কাজ করতে পেরেছিলেন। পারিবারিক জীবনে ছিল স্বামী সায়গল, দুই কন্যা সুভাষিণী ও অনিশার আন্তরিক সমর্থন।
১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর শিখবিরোধী দাঙ্গা হয়। শিখবিরোধী দাঙ্গা প্রতিরোধ করার জন্য তিনি পথে নামেন। যেখানে লক্ষ্মীর ক্লিনিক ছিল সেখানে একজন শিখও মারা যাননি। শিখদের একটা বাড়ি বা দোকান জ্বলেনি। ১৯৮৯ সালে ইউনিয়ন কারবাইড গ্যাস ট্র্যাজেডির অব্যবহিত পরেই লক্ষ্মী একটি মেডিকেল টিম নিয়ে ভোপালে যান। সেখানে দুর্গতদের মধ্যে কাজ করেছেন। গর্ভবতী নারীদের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, সেই সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন সে সময়।
১৯৮০ সাল থেকে সর্বভারতীয় স্তরে পৃথক মহিলা সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা যারা ভেবেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মী সায়গল। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মহিলাদের নানাবিধ সমস্যায় এই সংগঠন হস্তক্ষেপ করতে পারবে এবং মহিলাদের সংগঠিত করতে পারবে। ১৯৮১ সালে মাদ্রাজে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি হন এর অন্যতম সহসভানেত্রী।
সর্বভারতীয় নেত্রী বৃন্দা কারাত তাঁর প্রয়াণের পর বলেছিলেন লক্ষ্মী সায়গলের ‘দুটি স্যালুট ছিল।’ স্বাধীনতা সংগ্রামী বা আজাদহিন্দ ফৌজের কারও সঙ্গে দেখা হলে তখন সেনা জওয়ানদের মতো স্যালুট করতেন। বলতেন, এটা হলো নেতাজির স্যালুট। আর যখন পার্টির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন, তখন মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলতেন এটা আমার কমরেডদের জন্য লাল সালাম। আজও দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজে লক্ষ্মী সায়গল মানুষের প্রেরণা।