ট্রাম্প কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছেন রিপাবলিকানদের

গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে আমেরিকান রেডক্রসের এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে আমেরিকান রেডক্রসের এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর রিপাবলিকান পার্টিকেই কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন। জনমত জরিপে নাজুক অবস্থায় চলে যাওয়া ট্রাম্প তাঁর স্বভাবজাত বেপরোয়া কথা বলে যাচ্ছেন। নিজেও ডুববেন; সঙ্গে দলকেও ডোবাবেন।

এখন হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কংগ্রেসও সম্পূর্ণ বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় এখন রিপাবলিকান পার্টি। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন ট্রাম্প। তাঁর এ কথায় সায় দিচ্ছেন না দলের প্রভাবশালী লোকজনও। নিজের দলের আনুগত্যকেই তিনি পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন এখন।

রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী লোকজন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আগেও আড়ালে–আবডালে কথা বলে আসছিলেন। গত চার বছরে প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেয়নি কেউ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, নভেম্বরের নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। আমেরিকার সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে এমন কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককনেল নির্বাচন পেছানোর ধারণা এক বাক্যে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকার ইতিহাসে এমন কখনো হয়নি। মহামন্দা, সিভিল ওয়ার—কোনো সময়েই কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত দিনের বাইরে কখনো নির্বাচন হয়নি। এবারও নির্ধারিত দিনে, ৩ নভেম্বর নির্বাচন করার উপায় থাকবে বলে তিনি বলেন।

জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে গতকাল সকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করার পরই সিনেটর ম্যাককনেল এমন কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ২০২০ সালের নির্বাচন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেঠিক ও কারচুপির নির্বাচন হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক যতক্ষণ না জনগণ নিরাপদে ও নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দিতে পারেন।

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারে অধিকাংশ রাজ্যেই ডাকযোগে ভোট বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই আমেরিকার লোকজনকে ভোটকেন্দ্র নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় গড়ে ৪৫ শতাংশ লোকজনকে ভোট দিতে দেখা যায়। এবারে লোকজন এমনিতেই ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে ঘরে থাকাকেই এখনো প্রাধান্য দিচ্ছেন। লোকজন নেহাত জরুরি কাজকর্ম না থাকলে বাইরে যাচ্ছেন না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্বেতাঙ্গ প্রবীণ লোকজন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি বয়স্কদের। আমেরিকার দক্ষিণ ও পশ্চিমের রাজ্যগুলোয় সংক্রমণ বাড়ছে। এসব রাজ্যেই ট্রাম্পের ভিত্তি ছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। করোনা সামাল দিতে ব্যর্থতার কারণে সেসব রাজ্যে সাধারণ জনমতে পিছিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দলের সমর্থন পেয়ে আসছিলেন। দলের সমর্থকদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তুঙ্গেই ছিল। এ কারণেই দলের প্রভাবশালী নেতারা সব সময় ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের আনুগত্যই দেখিয়ে আসছেন। এখন সময় দ্রুত বদলে গেছে। করোনা সংক্রমণে নাজুক হওয়া আমেরিকায় দেড় লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকায় হাজারের ওপরে যুক্ত হচ্ছে নতুন নাম। দেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ নেই। করোনাভাইরাসের চেয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লাগামহীন কথাবার্তা আর নিতে পারছেন না রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা। মহামন্দার চেয়েও আমেরিকার অর্থনীতি এখন নাজুক বলে অনেকেই মনে করছেন।

রিপাবলিকান পার্টির রাজনৈতিক কৌশলবিদ ভিন উয়েভনার বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয় প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন পেছনের কথা বলতে বাধ্য করছে। প্রেসিডেন্ট সত্যিকারে যে উদ্বিগ্ন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মুখে যা–ই বলা হোক না কেন, পুনর্নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের উৎকণ্ঠা যে চরমে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই বলে মনে করেন ভিন উয়েভনার।

আমেরিকার সংবিধানে নির্ধারিত তারিখ থেকে নির্বাচন পেছানোর ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই। কংগ্রেস উদ্যোগ নিতে পারে। নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরে, মানে মঙ্গলবারে এ নির্বাচন হওয়ার কথা আইনে লেখা আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচন পেছানোর চতুর কথাটির অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এখন একই আলাপ চলছে, করোনাভাইরাস সামাল দিতে ট্রাম্প ব্যর্থ হয়েছেন। জনমত জরিপে তিনি পিছিয়ে আছেন। সংবাদমাধ্যমের এসব আলোচনাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচন পেছানোর কথা বলে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চান বলে অনেকেই মনে করেন। গতকাল সকালে টুইট করেই নয় শুধু, পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচন পেছানোর ধারণাকে আবার জোর দিয়ে বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি সিটি নির্বাচনে নিউজার্সির ডাকযোগে ভোট কারচুপির কথা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, নিউজার্সির প্যাটারসনে সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডাকযোগে ভোট কারচুপির জন্য একাধিক বাংলাদেশির জড়িয়ে থাকা নিয়ে মামলা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, তিনি নিজেও ডাকযোগে ভোট গ্রহণ ও গণনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। নিজেও চান দেশের অর্থনীতি চালু হোক, স্কুল খুলে দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতে স্কুলে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা হোক। তবে নির্বাচন পেছানোর কথাটি খুব একটা ভালো ধারণা নয় বলে সিনেটর গ্রাহাম মনে করেন।

মার্কিন সিনেটের ২০ জন প্রভাবশালী রিপাবলিকান সদস্য আসছে নভেম্বরে পুনর্নির্বাচন জন্য দাঁড়াচ্ছেন। অনেকের ধারণা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপারে নেতিবাচক জনমত তাঁদের নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে। ডেমোক্রেটিক পার্টি সিনেটের চারটি আসনে রিপাবলিকানদের ধরাশায়ী করতে পরলেই হয়। এখন পর্যন্ত মাঠের অবস্থায় ডেমোক্র্যাটরা মনে করছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে কংগ্রেসের উভয় কক্ষ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এখনো অবশ্য নির্বাচনমুখী নয়। একদিকে করোনার তাণ্ডব, অন্যদিকে কর্মহীনতা লোকজনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এবারের নির্বাচন যে সহজ হবে না, তার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। ৩ নভেম্বরে ভোট শুরু হলেও ডাকযোগে দেওয়া ভোট গণনা নিয়ে সময় লাগবে। ফলাফল অন্যবারের মতো দ্রুত হবে না। প্রাথমিক ফলাফল খুব কাছাকাছি হলে বিষয়টি আদালতে যাবে। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ক্ষেত্র আগে থেকেই তৈরি করে রাখছেন।