যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক কারণে আশ্রয়প্রার্থীদেরও আবেদনে ফি লাগবে

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আরও ব্যয়বহুল হচ্ছে। নাগরিকত্বের জন্য আবেদনসহ সব পর্যায়ের অভিবাসনপ্রক্রিয়ার জন্য এখন থেকে বাড়তি ফি দিতে হবে। গত ৩১ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিবাসন সুবিধার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে ফি বৃদ্ধির এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন ফি ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে যেখানে মানবিক কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনে কোনো ফি ছিল না, এখন সেখানেও ফি ধার্য করা হয়েছে। এটি একটি অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত। গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগ ফেডারেল রেজিস্টারে চূড়ান্ত রুল হিসেবে তা প্রকাশ করেছে।

ফেডারেল রেজিস্টারে অভিবাসনসংক্রান্ত সব ধরনের আবেদনের ফি বৃদ্ধির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অভিবাসন নীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, ‘নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবার ব্যয় নির্বাহের জন্য এ আবেদন ফি বাড়ানো হচ্ছে।’

অ্যাসাইলাম ও নির্বাসনসংক্রান্ত আবেদনে কোনো ফি ছিল না। এখন সেখানে ৫০ ডলারের ফি ধার্য করা হয়েছে। সারা বিশ্বে আর মাত্র তিনটি দেশ আছে যারা মানবিক কারণে আশ্রয় আবেদনেরও ফি নেয়। আমেরিকাও এখন থেকে সেই তালিকায় যোগ দিয়ে চতুর্থ হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আবেদনের ফি আগে ছিল ৬৪০ ডলার। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ১৬০ ডলার হয়েছে। তবে তা অনলাইনে আবেদনের জন্য। আবার কাগজের ফরম পূর্ণ করে মেল করলে ফি লাগবে ১ হাজার ১৭০ ডলার। অন্যান্য ফি বৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে, ওয়ার্ক অথোরাইজেন ফি, (ফরম, আই-৭৬৫) ৩৪ শতাংশ বেড়ে এখন ৫৫০ ডলার করা হয়েছে। বিয়ের মাধ্যমে গ্রিন কার্ডের শর্ত অপসারণের আবেদন ফি (ফরম, আই-৭৫১) ২৮ শতাংশ বেড়েছে। আগে ৫৯৫ ডলার ছিল, এখন হয়েছে ৭৬০ ডলার।

পরিচালনা খরচ বেড়ে যাওয়া এবং আয় কমে যাওয়াকে এই ব্যাপক ফি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, পরিচালনা খরচ কুলাতে গড়ে ২০ শতাংশ ফি বাড়ানো হয়েছে। এতে বিভাগটির এক বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘাটতি পূরণ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

ইমিগ্রেশন বিভাগের নীতি নির্ধারণবিষয়ক উপপরিদর্শক জোসেফ এডলো বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বহির্গামী খরচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা আমাদের কর্তব্য। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এডলো বলেন, ‘ইমিগ্রেশন সুবিধার আবেদন ফির বিষয়টি সম্প্রতি সমন্বয় করা হয়েছে। দেশের বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার সঠিক পরিচালনা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য এ সমন্বয় জরুরি।’

দেশের অভিবাসনপদ্ধতিতে প্রশাসনের নতুন প্রতিবন্ধকতার কারণে গ্রিন কার্ড আবেদনসহ নানা আবেদন কমে গেছে।

করোনাভাইরাসের অজুহাতে ১৮ মার্চ থেকে সব রকমের আবেদন কার্যত বন্ধ ছিল। ৪ জুন থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ের সেবা পুনরায় উন্মুক্ত হলেও, খুব সীমিত পরিসরে সাক্ষাৎকার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট চালু হয়েছে। ৩১ জুলাই ঘোষিত এই ফি বৃদ্ধি কার্যকর হবে ২ অক্টোবর থেকে। এই ফি বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে যেসব ক্ষেত্রে তা হচ্ছে: ওয়ার্ক ভিসা, নাগরিকত্বের আবেদন, স্থায়ী বৈধ অভিবাসনের আবেদন, পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে অভিবাসনের আবেদন এবং অপরাধের শিকার হওয়াদের আশ্রয় আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে।

বিশেষ ক্ষেত্রে যে ফি ওয়েভার প্রোগ্রাম আগে ছিল, তা-ও এখন সম্পূর্ণরূপে রহিত প্রায়।

‘বাউন্ডলেস ইমিগ্রেশন’ নামের একটি সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা ডাগ রান্ড তাঁর টুইটার ফিডে লিখেছেন, ‘নিম্ন আয়ের অভিবাসীদের নাগরিকত্ব আবেদন উঁচু ফির কারণে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। একই অবস্থা হয়েছে নানা মানবিক কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও।’

ন্যাশনাল পার্টনারশিপ ফর নিউ আমেরিকান নামের সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নিকল মেলাকু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘যেকোনো ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে বর্ধিত ফির কারণে এবং ফি ওয়েভার উঠে যাওয়ায় আবেদনকারী অভিবাসী এবং শরণার্থীকে এখন সম্পদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।’

অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ফি বৃদ্ধি হয়েছে: ভ্রমণ ডকুমেন্ট, ফরম আই-১৩১, বর্তমান ফি ৫৭৫ ডলার, ৭৬ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১১০ ডলার হচ্ছে। আই-৮৮১, সাসপেনশন অব ডিপোর্টেশন ফরমের ফি ছিল ২৮৫ ডালার। এটি বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার ৮১০ ডলার। ইমিগ্রেশন থেকে বলা হয়েছে, আবেদন অনলাইনে করলে, সে ক্ষেত্রে ফি ১০ ডলার কম পড়বে।