ট্রাম্প-বাইডেনের বিতর্ক কেমন হবে

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রথম বিতর্কে নামবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রথম বিতর্কে নামবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আমেরিকার জাতীয় নির্বাচনের ঘণ্টাধ্বনি বাজতে শুরু করেছে। চলতি মাসেই ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলন নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের উৎসাহই বেশি। জাতীয় কনভেনশনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দেওয়া হবে। তাঁর সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কে লড়ছেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তা হয়ে যাবে। ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন ঠেকিয়ে দিয়ে হোয়াইট হাউস দখল করার একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে। ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাসের মতো সময় বাকি। এর মধ্যেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ২৯ সেপ্টেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বিতর্ক করবেন জো বাইডেন।

সাম্প্রতিক প্রথা অনুযায়ী নির্বাচনের আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে তিনটি সরাসরি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জাতীয়ভাবে প্রাইম টাইমে প্রচারিত এসব টিভি বিতর্ক নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে বলে মনে করা হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জো বাইডেনের বিতর্ক কেমন হতে পারে, এ নিয়ে নানা কথা শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প–সমর্থকরা মনে করেন, জো বাইডেন নাস্তানাবুদ হবেন। ডেমোক্রেটিক পার্টিরও এক পক্ষের মত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো লোকের সঙ্গে জো বাইডেন বিতর্কে ভালো করতে পারবেন না।

টিভি রিয়েলিটি শো বিজয় করে আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদ্রূপ করবেন, সত্যের কাছাকাছি নেই এমন সব তথ্য উপস্থাপন করবেন। অন্যদিকে, রাজনীতির ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত জো বাইডেন মাথা ঠান্ডা রেখে তাঁর বক্তব্য কার্যকর উপায়ে উপস্থাপন করতে পারবেন কি না, এ নিয়ে দলের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এমনকি কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন, জনমত জরিপে সন্তুোষজনকভাবে এগিয়ে থাকা জো বাইডেন যেন বিতর্ক এড়িয়েই চলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্ক করে তাঁর পাওয়ার কিছু নেই, হারানো ছাড়া।

ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, আমেরিকার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিতর্ক দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রথা। তিনি মনে করেন, এ বিতর্কের মধ্য দিয়ে আরেকবার একজন সংবেদনশীল যোগ্য রাজনীতিক হিসেবে জো বাইডেনকে দখতে পাবে জনগণ। এ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনৈতিক কৌশলবিদ জো লকহার্ট। তিনি সিএনএনে প্রকাশিত কলামে বলেছেন, ‘আর যা–ই করো, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো বিতর্কে যেয়ো না।’ জো বাইডেনের প্রচারণা শিবিরকে এমন উপদেশই তিনি দিয়েছেন। তাঁর মতে, লড়াইয়ে এমন একজনের সঙ্গে নামতে হবে, যিনি লড়াইয়ের স্বাভাবিক নিয়মই মানেন না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালে এক বছরে ২০ হাজার ভুয়া অথবা ভুল তথ্যের কথা বলেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে বিতর্ক এড়িয়ে গেলে জো বাইডেনের আরও বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী লোকজন। এতে সংবাদমাধ্যমসহ ট্রাম্প–সমর্থকদের কড়া সমালোচনায় পড়তে হবে তাঁকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের ঝুঁকিটা নিতেই হবে জো বাইডেনকে। জো লকহার্ট মনে করেন, সত্য কথা বলে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে জয়ী হওয়া যেকারও পক্ষে অসম্ভব।

জো বাইডেনের প্রচার শিবির থেকে জানানো হয়েছে, এর মধ্যেই জো বাইডেন লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনটি বিতর্কে তিনি যোগ দেবেন। এ জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। ট্রাম্পের প্রচারণা মুখপাত্র টিম মুর্তাগহ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কের জন্য মুখিয়ে আছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক সিনেটর ডায়ান ফেইনস্টেইন বলেছেন, জো বাইডেনের সংকোচ বোধ করার কোনো কারণ নেই। তিনি সত্য বলেই বিতর্ক আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামাল দেওয়ার জন্য বিতর্ক মডারেটর সেভাবেই প্রস্তুত থাকবেন। যেকোনো কিছু বলে পার পাওয়ার সুযোগ পাবেন না ট্রাম্প।

ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে তিনটার বেশি বিতর্কের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে তিনটার বেশি বিতর্কে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জো বাইডেনকে। এ কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে। জাতীয়ভাবে জনমত জরিপে গড়ে আট পয়েন্টে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। যদিও ট্রাম্প সমর্থকরা মনে করেন, জনমতে এগিয়ে থাকবেন বাইডেন ঠিকই। নির্বাচনে জয়ী হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজনীতির বাইরে থেকা আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এমন কথা আগে প্রমাণ করেছেন।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রথম বিতর্কে নামবেন দুই প্রার্থী। এর আগেই বেশ কিছু রাজ্যে ডাকযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে যাবে। আমেরিকার রাজনীতি এমনিতেই জটিল। এবারে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ডাকযোগে ভোটে ব্যাপক কারচুপির আগাম অভিযোগ করতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিতর্ক ও উত্তেজনা বাড়ছে। আমেরিকার জনগণও মুখিয়ে আছে ট্রাম্প-বাইডেনের বিতর্কের দিকে।