জিততে যেকোনো কিছু করতে পারেন ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দু মাস বাকি। এই সময়ে আমেরিকার রাজনীতির ময়দানে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। যা কিছু হচ্ছে, তার পুরোটাই হচ্ছে আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলা যায় জেরবার হয়ে উঠেছেন নির্বাচনে জয় পেতে। বর্ণবাদী উসকানি, মিথ্যাচার, অভিবাসীদের ওপর চড়াও হওয়া, ভোটের রীতি বদলানোসহ এমন কিছু নেই, যা করছেন না তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ডাকযোগে ভোট দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে জালিয়াতির সুযোগ থাকে। যদিও রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে এই একই পদ্ধতিকে ‘ন্যায্য’ বলেই আখ্যা দিচ্ছেন তিনি। ৫ আগস্ট এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খুবই সাধারণ বুদ্ধি কাজে লাগিয়েই আমি আমাদের দেশের এ উপকারটি করছি। ভালো করে দেখলেই বুঝবেন যে, এটি খুবই সাধারণ বুদ্ধির ব্যাপার যে, এই পদ্ধতি (ডাকযোগে) কাজ করবে না।’

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আসন্ন নির্বাচনে ডাকযোগে ভোট গ্রহণ করা হলে, তার ফলাফল কয়েক বছরেও পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয় পুরো প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশঙ্কা প্রবল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বশেষ কয়েকটি জনমত জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান যে-ই হোক না কেন, ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসছে না। এটি নিঃসন্দেহে ট্রাম্পকে অনেকটা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এটা এতটাই যে, তিনি এখন এমনকি ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথাও আকারে-ইঙ্গিতে বলছেন। প্রশ্ন তুলছেন সম্ভাব্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে।

শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারের যে প্রচলিত রাস্তা সেখানেও সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তাঁর নির্বাচনী প্রচার দল এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছে যে, নির্বাচনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক থেকে পিছু হটার চেষ্টা করছেন বাইডেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এমন দাবির পক্ষে তারা কোনো প্রমাণই হাজির করেনি। একই সঙ্গে অনুষ্ঠেয় তিনটি বিতর্কের জন্য নিজেদের পছন্দমতো উপস্থাপকের নামও তারা প্রস্তাব করেছে, যেখানে ফক্স নিউজের উপস্থাপক থেকে শুরু করে ট্রাম্প সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা রয়েছেন।

কিন্তু এতেও তুষ্ট নন ট্রাম্প। এবার যাবতীয় রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ট্রাম্প বলছেন, আসন্ন রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে তিনি হোয়াইট হাউসের লন থেকে তাঁর বক্তব্য রাখবেন। এটি রীতিবিরুদ্ধ। কারণ, নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ সম্মেলনে এটি প্রভাবক ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে নির্বাচনের প্রচারের সঙ্গে যুক্ত কোনো কাজেই প্রেসিডেন্সিকে ব্যবহার না করাটা নিয়ম। কিন্তু ট্রাম্প এই নিয়ম ভাঙতে চান।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মুহূর্তে অনেকগুলো ঘুঁটি নাড়াচাড়া করছেন। তিনি জানেন যে, আমেরিকার তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক মত মুখে প্রকাশ করতে তৎপর হলেও ব্যালটে ততটা নয়। গেলবারের থেকে তাই এবারও তেমন ব্যতিক্রম কিছু নেই। হলে তরুণদের মধ্যে ভীষণভাবে জনপ্রিয় বার্নি স্যান্ডার্সকেই হয়তো তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পেতেন। বিপরীতে বয়স্ক নাগরিকেরা ভোটকেন্দ্রে যেতে বা ভোট দিতে বেশি আগ্রহী। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে এই বয়স্ক লোকেদের পাল্লাই ভারী। ফলে তিনি এক রকম নিশ্চিত যে, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি যা-ই হোক না কেন তাঁর সমর্থকেরা ঠিকই তাঁকে ভোট দেওয়ার রাস্তাটি খুঁজে নেবেন। তাই তিনি ডাকযোগে ভোট গ্রহণের পদ্ধতিকে বিতর্কিত করে মূলত ভোট গ্রহণের বিষয়টিকেই কঠিন করে তুলতে চান, যাতে ভোটদাতার সংখ্যা কমে আসে, যেখানে তাঁর সমর্থকদের উপস্থিতিই থাকবে বেশি। এর পেছনে অবশ্য আরেকটি কারণ আছে। গেল নির্বাচনে ইলেক্টোরাল বোটে জিতলেও সরাসরি ভোটে কিন্তু ট্রাম্প পিছিয়ে ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন থেকে।

নির্বাচন নিয়ে এগুলো হচ্ছে ট্রাম্পের সরাসরি কাজ। পরোক্ষ কাজের মধ্যে রয়েছে অভিবাসনবিরোধী নানা পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে তিনি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চাইছেন। অন্য কোনো ক্ষেত্রে মহামারিকে বিবেচনায় না নিলেও ট্রাম্প অভিবাসনের ক্ষেত্রে একেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি আমেরিকাকে মহামারি ও অর্থনৈতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতেই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বিভিন্ন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি আমেরিকায় অভিবাসীদের প্রবেশকে যথাসম্ভব কঠিন করে তুলছেন। তাঁর দৃষ্টিতে এটিই তাঁকে এই মুহূর্তে বাঁচাতে পারে। তিনি বিভাজনের কার্ডটি আরেকবার খেলছেন। গেল নির্বাচনে তাঁকে এই কার্ডটিই জিতিয়েছিল। ফলে নিজের সমর্থকদের এক কাতারে দাঁড় করাতে তিনি আবারও এই একই খেলা খেলছেন। একইভাবে খেলছেন চীন বিরোধিতার লেবাসে জাতীয়তাবাদের খেলা। যদিও তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি নির্বাচনে জয়ের জন্য চীনের সহায়তা চেয়েছেন।

এর বাইরে প্রেসিডেন্টের সাফল্য-ব্যর্থতা, প্রশাসনিক নানা অনিয়ম করোনা মোকাবিলা ইত্যাদি যেকোনো ইস্যুতেই যে কেউ যেকোনো কথা বললেই চটে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘ভুয়া সংবাদ’ অভিধার মতো করেই যেকোনো কিছুকেই তিনি এখন ভুয়া বলে দিচ্ছেন অনায়াসে। বাদ পড়ছে না গোয়েন্দা সংস্থা, রাষ্ট্রীয় দপ্তর, এমনকি আদালতও। আর নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান নিয়ে যুক্তিহীন সংশয় প্রকাশটা এখন তাঁর অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন যে, তিনি আমেরিকার রাষ্ট্র হিসেবে তাবৎ ভিতকে জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও প্রেসিডেন্ট হতে চান। যেকোনো উপায়ে তিনি পুনর্নির্বাচিত হতে চান। এ ক্ষেত্রে কোনো নীতি-নৈতিকতার ধার তিনি ধারছেন না। এ সব বিষয়ে তিনি ভাবতেও চান না।