অনিশ্চয়তায় আমেরিকার কর্মহীনরা

আমেরিকায় এখন তিন কোটিরও বেশি মানুষ কর্মহীন। ছবি: রয়টার্স
আমেরিকায় এখন তিন কোটিরও বেশি মানুষ কর্মহীন। ছবি: রয়টার্স

বর্ধিত বেকার ভাতার মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে আমেরিকার কর্মহীনদের। কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত আমেরিকার নাগরিকদের আরেক দফা ফেডারেল প্রণোদনা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কর্মহীনদের বর্ধিত ভাতা সপ্তাহে ৬০০ ডলার থেকে কমিয়ে ৪০০ ডলার দেওয়ার নির্বাহী আদেশের পরও এটাকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছে অনেকেই।

বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণা একটি প্রহসন মাত্র। আইনপ্রণেতারা আবারও আরেকটি আলোচনার পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন। কর্মহীনতা আর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়া নাগরিকদের দুর্দশা চরমে ওঠার আগেই একটি সমাধানের প্রত্যাশা করছে আমেরিকার লোকজন।

কর্মহীনদের জন্য বর্ধিত বেকার ভাতার মেয়াদ বাড়িয়ে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৬০০ ডলার নয়, বরং সপ্তাহে কর্মহীনদের ৪০০ ডলার করে বেকার ভাতা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। নির্বাহী আদেশে ফেডারেল সরকারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ৭০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল থেকে এ অর্থ দেওয়া হবে বলে বলা হয়েছে। নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, এ ৭০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসা পর্যন্ত কর্মহীনরা বর্ধিত বেকার ভাতা পাবেন। আমেরিকায় এখন তিন কোটির বেশি কর্মহীন মানুষ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ ৭০ বিলিয়ন থেকে তহবিল ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোসহ বেশ কিছু রাজ্য গভর্নর বলেছেন, তাঁদের তহবিলে কোনো অর্থ নেই। তাঁরা প্রেসিডেন্ট ঘোষিত ৪০০ ডলারের জন্য সপ্তাহে ১০০ ডলার রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে দিতে পারবেন না। করোনা মাহামারিতে বড় বড় নগরী এমনিতেই অর্থ সংকটে পড়েছে। কর আদায় হচ্ছে না । ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন বন্ধ থাকায় বড় বড় নগরী ফেডারেল সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমেরিকার ইতিহাসে এমন বিপর্যয় আর কখনো ঘটেনি। এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নাগরিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয় গত এপ্রিল মাসে। আইনপ্রণেতাদের কাছ থেকে, এমনকি হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও আরেকটি সরাসরি নাগরিক প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় আমেরিকার লোকজনকে। এর মধ্যে ডেমোক্রেট দল প্রতিনিধি পরিষদে একটি আইন প্রস্তাব পাস করে। যে প্রস্তাবে কর্মজীবীদের কাজে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে বর্ধিত ৬০০ ডলার করে দেওয়া চালু রাখার কথা বলা হয়। পাশাপাশি বর্ধিত ফুড স্ট্যাম্পসহ ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকদের সরাসরি সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকান দল পাল্টা আরেকটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। যেখানে বর্ধিত বেকার ভাতার মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হলেও সপ্তাহে ২০০ থেকে ৪০০ ডলারের মধ্যে রেখে সমঝোতার কথা বলা হয়। রিপাবলিকান দল আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টাকে আরও নাজুক না করার জন্যই নাগরিকদের সরাসরি প্রণোদনা কমিয়ে আনার চেষ্টা করায় আলোচনা ভেস্তে যায়।

অনেকটা রাজনৈতিক চাল হিসেবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৮ আগস্ট তাঁর নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এ নিয়ে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারা। কর্মহীনদের সুবিধা প্রদানের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটরা এখন আদালতে গেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলবেন, দলটি জনগণের সুবিধা দেওয়ার বিপক্ষে নেমে গেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বর্ধিত ভাতার ২৫ শতাংশ না দিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলবেন , আমি ৩০০ ডলারের ব্যবস্থা করেছি। রাজ্যগুলো কেন করছে না ? তহবিল সংকটে থাকা অধিকাংশ রাজ্যই ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ কীভাবে কার্যকর হবে, এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, তা কার্যকর হবে না। এ ছাড়া ভাড়াটের উচ্ছেদ না করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন। বাড়ি ভাড়া বাকি পড়তে থাকলে, এ ভাড়া লোকজন পরে কীভাবে পরিশোধ করবে, তা নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। নাগরিকদের আবারও সরাসরি নগদ অর্থ দেওয়ার যে কথা বলেছিলেন আইনপ্রণেতারা, তা নিয়েও এখন আর আলোচনা হচ্ছে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করার পরদিন ৯ আগস্ট আবারও বলেছেন , রাজ্য সরকার তাদের ২৫ শতাংশ কর্মহীনদের জন্য দিতে না পারলে তিনি ফেডারেল সরকার থেকে তা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এ জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে আবেদন করতে হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এমন আবেদনের ঝুঁকি হচ্ছে, ফেডারেল সরকার অন্য খাতে রাজ্যকে দেওয়া অনুদান কমিয়ে আনবে।

নাগরিকদের চরম সংকটের সময়ে আইনপ্রণেতারা দীর্ঘ সময় নাগরিকদের প্রয়োজনীয়তার দাবি উপেক্ষা করতে পারবেন না। আগামী মাসেই আবার নাগরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। নভেম্বরের নির্বাচন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের জন্যও। আগামী দুই মাস আমেরিকার রাজনীতি আবর্তিত হবে নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর নাগরিকদের সহযোগিতা প্রদানের বিতর্ক নিয়েই।