ট্রাম্পকে হারাতে বাইডেন-কমলা জুটি এককাট্টা

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম ঘোষিত হওয়ার পর কমলা হ্যারিস এই প্রথমবারের মতো জো বাইডেনের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত হলেন। মঞ্চে জো বাইডেনের সঙ্গে স্ত্রী জিল বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের সঙ্গে তাঁর স্বামী ডাগলাস এমহফ। ছবি: এএফপি
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম ঘোষিত হওয়ার পর কমলা হ্যারিস এই প্রথমবারের মতো জো বাইডেনের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত হলেন। মঞ্চে জো বাইডেনের সঙ্গে স্ত্রী জিল বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের সঙ্গে তাঁর স্বামী ডাগলাস এমহফ। ছবি: এএফপি

আমেরিকার নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বলেছেন, আমেরিকার আসছে নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতেই হবে। দেশকে ভাইরাসের মহামারি থেকে মুক্ত করাসহ অর্থনৈতিক সংকট দূর করা হবে। আমেরিকার বর্ণবৈষম্য দেশকে কাঁপিয়ে তুলেছে, এর অবসানে কাজ করা হবে।

১২ আগস্ট ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্য থেকে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের এই বক্তব্য রেডিও-টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। রয়েল ব্লু স্যুট পরে ডেমোক্রেটিক দলের এ দুই প্রার্থী উইলমিংটন হাইস্কুলের জিমনেসিয়ামে উপস্থিত হন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম ঘোষিত হওয়ার পর কমলা হ্যারিস এই প্রথমবারের মতো জো বাইডেনের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত হলেন। দুজনই তাঁদের বক্তব্যে স্মরণ করেন জো বাইডেনের প্রয়াত ছেলে বিউ বাইডেনকে। জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস পরস্পরের পরিচয়ের সূত্র ছিলেন ২০১৫ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ব্রেইন ক্যানসারে মারা যাওয়া বিউ বাইডেন। বিউ বাইডেনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে দুই নেতাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে আমেরিকার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে, এ কথাটিও উভয়ের বক্তৃতায় উঠে আসে। প্রথম কোনো নারী আমেরিকার দ্বিতীয় শীর্ষ পদে যাবেন। কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কোনো অশ্বেতাঙ্গ নারীর অভিষেক ঘটবে।

জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদ্বেষমূলক রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়।

জো বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় কমলা হ্যারিসের প্রশংসা করে বলেন, একজন জ্যামাইকান ও ভারতীয় অভিবাসীর সন্তান হিসেবে অনেক বৈরী পরিস্থিতি তাঁকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। কমলা হ্যারিস আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। কর্মজীবনে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে অস্ত্র এবং জ্বালানি লবির সঙ্গে তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে কাজ করার সুবাদে কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বহু অপনীতির জন্য প্রশাসনকে জবাবদিহিতে রাখার চেষ্টা করেছেন।

৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেন নির্বাচিত হলে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি শপথ গ্রহণ করবেন। সে ক্ষেত্রে সিনেটর কমলা হ্যারিস যে একজন অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুরুর দিন থেকেই কাজ করতে পারবেন, বিষয়টি তাঁদের বক্তৃতায় উঠে আসে। জো বাইডেন বলেন, ‘কমলা জানেন কীভাবে প্রশাসন চালাতে হয়, কখন শক্ত অবস্থানে যেতে হয়।’ প্রথম দিন থেকেই তিনি কাজের উপযুক্ত বলে বাইডেন উল্লেখ করেন।

আমেরিকা সঠিক নেতৃত্বের জন্য কাঁদছে, উল্লেখ করে কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা, মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং বর্ণবাদ উসকে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ছিল। ট্রাম্পই দেশকে অর্থনৈতিক মহামন্দায় নিয়ে গেছেন।

কমলা বলেন, ট্রাম্প দেশকে বৈষম্যের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার উত্তরাধিকার পেয়েছিলেন। অন্য সবকিছুর মতোই এ অগ্রযাত্রাকে তিনি মাটিতে নামিয়ে দিয়েছেন বলে কমলা হ্যারিস অভিযোগ করেন।

স্বাভাবিক সময়ে এমন সভায় হাজারো মানুষের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। স্কুলের জিমনেসিয়ামের ভেতরে বেশ কিছু দূরত্বে থাকা পৃথক পোডিয়াম থেকে বাইডেন ও কমলা তাঁদের বক্তব্য রাখেন। এ সময় কয়েক শ সমর্থক স্কুল এলাকার বাইরে অবস্থান নেন। সীমিতসংখ্যক সাংবাদিকের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। বক্তৃতার পর জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের আইনজীবী স্বামী ডাগলাস এমহফ বেরিয়ে আসেন এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানান।

জো বাইডেন বলেছেন, দেশজুড়ে কালো ও বাদামি অল্পবয়সী মেয়েরা নিজেদের আজ ভিন্নভাবে আবিষ্কার করতে পেরেছে। যারা বিভিন্ন সময় উপেক্ষিত মনে করেছে, তাঁরা প্রথমবারের মতো নিজেদের প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পারছে।

জো বাইডেনের প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসের নাম আসার পর মাঠপর্যায়ে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পরের ২৪ ঘণ্টায় নির্বাচনী তহবিলে জমা হওয়া অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

আগামী সপ্তাহে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় কনভেনশনে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করবেন। করোনা মহামারির কারণে এবারে কোনো দলই ব্যাপকভাবে জাতীয় কনভেনশন করতে পারছে না। অধিকাংশ সভা ও বক্তৃতা ভার্চ্যুয়াল হবে বলে জানানো হয়েছে। এ কনভেনশনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কমলা হ্যারিস বক্তব্য দেবেন আসছে বুধবার। পরদিন বৃহস্পতিবার জো বাইডেনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কনভেনশন শেষ হবে।