নতুন শিক্ষা বছরে পড়াশোনার নতুন পদ্ধতি

রিমোট লার্নিং পদ্ধতিতে অধ্যয়নরত তিন শিশু নোভা, সামিনা ইয়াসির ও মেডেলিন মায়া
রিমোট লার্নিং পদ্ধতিতে অধ্যয়নরত তিন শিশু নোভা, সামিনা ইয়াসির ও মেডেলিন মায়া

জ্ঞানই শক্তি। করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন, জীবন বড় নাকি শিক্ষা? অবশ্যই প্রাণঘাতী এই রোগের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে হবে। আমাদের শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের যত্ন নেওয়া খুব দরকার। করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত কোন ঝুঁকি নেওয়া উচিত না। নিউইয়র্ক নগরের বোর্ড অব এডুকেশন বলেছে, ৭ সেপ্টেম্বর স্কুল খুলতে পারে। তবে স্বাভাবিক নিয়মে নয়, স্কুল খুলবে সীমিত পরিসরে। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী সপ্তাহে গড়ে দুই থেকে তিন দিন ক্লাস করার সুযোগ পাবে। বাকি দিনগুলোতে তাদের বাসায় বসে রিমোট লার্নিংয়ের মাধ্যমে ক্লাস করতে হবে। হাইব্রিড বা রিমোট লার্নিংয়ে শিক্ষার্থীরা আসলে স্বাভাবিক লেখাপড়া করতে পারে না। এটা নিয়ে অভিভাবকেরা চিন্তিত। ৭৫ শতাংশ অভিভাবক চাইছেন, স্বাভাবিক সময়ের মতো স্কুল হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ করোনার স্বাস্থ্য নীতিমালা মেনে স্কুল খুলতে চায়।

স্কুল ইনপারসন ও রিমোট লার্নিং—দুই পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। যেসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এ ধরনের সমস্যায় রয়েছেন, তাদের জন্য বিশেষজ্ঞদের রয়েছে নানা পরামর্শ। এবার শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে, সপ্তাহে দুই/তিন দিন ইনপারসন, বাকি দিনগুলো রিমোট লার্নিং। যেকোনো পরিবার যেকোনো কারণে শতভাগ দূরবর্তী শিক্ষাও বেছে নিতে পারেন। তবে তা জানাতে হবে ৭ আগস্টের মধ্যে।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। তাই আসন্ন শিক্ষাবর্ষ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে, তারা যখন অন্যান্য দিনের মতো স্কুলে যাবে না, সেই দিনগুলোতে স্বাভাবিক লেখাপড়া হবে না। এ জন্য বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা। তারা স্কুলের পাশাপাশি বাসায়ও যেন ঠিকমতো পড়ে, সেটা নিশ্চিত করা।

নিউইয়র্ক স্কুল শিক্ষা বিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাত ধোয়ার সিঙ্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মোমিটার, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং—সব নিশ্চিত করে তবেই স্কুল খুলবে। শিক্ষক, কর্মী ও শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্টসহ প্রথম দিন আসতে হবে। খোলার আগে বিদ্যালয় ভবনগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা নিশ্চিত করে ইন্সপেক্টর সার্টিফিকেট নিতে হবে। কর্মী ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়গুলোর পরিচ্ছন্নতা ও ভবনের জীবাণুমুক্তকরণ বাস্তবায়ন করতে হবে।

নিরাপত্তার জন্য ডিওই—

১. স্কুল খোলা ও বন্ধ করতে থ্রেশহোল্ডস রাখার নির্দেশ দেবে।

২. স্কুল পুনরায় খোলার আগে বিদ্যালয় ভবনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।

৩. খাদ্য সেবা ‘গো অ্যান্ড গ্র্যাব’চালু থাকবে।

৪. বিল্ডিং সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. পরীক্ষা ও ট্রেসিং

৬. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

এর প্রতিটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকেরই কোভিড-১৯ টেস্টের রিপোর্ট বাধ্যতামূলক।

অনেক পরিবার কেবল দূর শিক্ষা পছন্দ করতে পারে। আগামী বছরের জন্য সন্তানের স্কুলশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সময়ে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহের কিছু সময় বিদ্যালয়ে গিয়ে শিখতে পারবে এবং অন্যান্য দিন বাড়ি বসে দূর শিক্ষণ পদ্ধতিতে শিখবে।

ব্রুকলিনের বাসিন্দা রোখসানা বেগম সুলতানা মনে করেন, দীর্ঘ চার মাস বাসায় থেকে তার সন্তানদের পড়ালেখার অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই প্রথমে সন্তানদের জন্য দুই দিন স্কুলে ইনপার্সন ক্লাস নিয়েছিলেন। পরে নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে শতভাগ অনলাইন ক্লাসের ফরম পূরণ করেছেন। আপনার পছন্দ যদি শতভাগ দূর শিক্ষা হয়, তবে ৭ আগস্টের মধ্যে তা জানাতে হবে, যাতে বিদ্যালয়গুলো পরিকল্পনার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে পায়।

চলতি বছর যারা ইলেভেন গ্রেডে প্রমোশন পেয়েছে, তাদের জন্য বিশেষ বার্তা আছে। সেটি হচ্ছে, এবার মহামারির জন্য বেশির ভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এসএটি ও এসিটি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেনি। ওয়েভের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু এটা এবার যারা সিনিয়র গ্রেডে রয়েছে তাদের জন্য। ইলেভেন গ্রেডের শিক্ষার্থীদের ছাড় দেওয়া হবেই এমন নিশ্চয়তা নেই। কারণ, আগামী বছর নির্ধারিত সময়ে এসএটি পরীক্ষা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসএটি ও এসিটি পরীক্ষা এমন নয় যে, দুই মাস পড়লেই পাস করা যাবে। এই পরীক্ষার জন্য কমপক্ষে এক বছরের প্রস্তুতি দরকার। যারা ইলেভেন গ্রেডে রয়েছে, তাদের এখন থেকে এসএটি ও এসিটির প্রস্তুতি নিতে হবে ও আগামী মার্চে ও সামারে পরীক্ষা দিতে হবে।

পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন বাসায় থাকায় তাদের শারীরিক সঞ্চালন সেভাবে হচ্ছে না। এ কারণে তারা ভবিষ্যতে নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী সারাক্ষণ মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার কিংবা টেলিভিশনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে চোখ রাখায় এবং শুয়ে-বসে থাকায় তাদের চোখের সমস্যায় হতে পারে। তাই তাদের অল্প সময়ের জন্য হলেও বাইরে নিয়ে যেতে হবে। তবে বাইরে নেওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরাতে হবে। বাইরে তারা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের পাশাপাশি সাইকেল চালাতে পারে। এক ঘণ্টা সাইকেল চালালে শরীর ও মন দুটিই ভালো থাকবে। হাঁটাও যেতে পারে। বাসায় ব্যায়াম করা যেতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি অনলাইনে ব্যায়ামের ক্লাস করায়, সেগুলো দেখতে পারে।

নিউইয়র্কের ইউনিভার্সিটিগুলোতে হাইব্রিড পদ্ধতিতে ক্লাস শুরু হবে আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে। নিউইয়র্ক  ইউনিভার্সিটির (এনওয়াইইউ) জৈব আণবিক প্রকৌশল বিদ্যার ফারদিন ইসলাম জানায়, সে তার কিছু ক্লাস অনলাইনে নিচ্ছে। তবে কোন কোন প্রফেসরের সঙ্গে ল্যাব ক্লাস ইনপার্সন হবে।

১৯৭১ সালে আমরা নয় মাস স্কুলে যাইনি। তবে আমরা অশিক্ষিত বা পশ্চাৎপদ থাকিনি। ভ্যাকসিন আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আগের মতো স্কুল শুরু হবে। এ বছর কোভিড-১৯–এর সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষায় অনেক রাজ্যে সেই মার্চ মাস থেকেই স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধের মধ্যেই সামার ভ্যাকেশন শুরু হয়ে শেষও হতে চলেছে। কিন্তু কোভিড-১৯–এর প্রকোপ কমা তো দূরের কথা, দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। শুরুতে যেসব স্টেট করোনাভাইরাস বেশি ছিল, এখন সেগুলোতে কমলেও বাদবাকি স্টেটে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে ।