একই দিনে এত দুঃসংবাদ!

কিছু মৃত্যুর সংবাদে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ প্রচণ্ডভাবে অনুভূত হয়। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকারর সাংবাদিক ও লেখক রহমান মাহবুবের ছেলের মৃত্যু ঠিক তেমনি। ছেলেটির কত সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ ছিল! মুহূর্তে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। একই দিনে আরও একজন পানিতে ডুবে, একজন গাড়ির সিটে বসা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে এবং চতুর্থজন গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। একই সময়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় চতুর্থ জনের মৃত্যুর খবরটি কতটা সত্য নিশ্চিত হতে পারিনি। গাড়ি দুর্ঘটনার একটি ছবি দেখেছি মাত্র। তবে এই চারজন যুবকের বয়স ২২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। এদের বাবা–মা ও আত্মীয়স্বজনের আহাজারিতে আকাশ–বাতাস ভারী হয়ে গেছে। আমাদের পুরো কমিউনিটি শোকে মুহ্যমান।
সম্ভাবনাময় তরুণদের অকালে হারিয়ে যাওয়া কখনো মেনে নেওয়া যায় না। ওদের বামা–মা ও ভাইবোনদের কথা ভেবে আমাদের হৃদয়েও প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তাদের আহাজারি দেখে সবাই শোকে পাথর। এই হতভাগ্য বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের কারও নেই। আমরা নিজেরাই যে এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হব না, তা কেউ বলতে পারে না।
অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে কঠিন যোগ্যতা। এই সত্য আমাদের মেনে নিতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য ছোটবেলা থেকে সহজাতভাবেই কিছু কৌশল আমাদের আয়ত্তে এসে যায়। বাকিটুকু সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন ও শিখে নিতে হয়। অবহেলা করলে তার ভয়ানক মাশুল মুহূর্তেই গুণে নিতে হয়। তার অন্যথা হয় না। শিশুকাল থেকেই অভিভাবকদের জিম্মায় আমরা বেড়ে উঠি। অনেকের সেই ভাগ্য থাকে না। কেউ আবার স্ট্রিট স্মার্ট। তারা দেখে ও অনুভূতি দিয়ে সহজেই শিখে ফেলে।
আমেরিকার মতো দেশে আমরা এত ব্যস্ত থাকি যে, অনেক সময় কিছু সাধারণ জিনিসকে গুরুত্ব দিতে ভুলে যাই। তা ছাড়া সন্তানেরাও এত স্বাধীন যে, তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখলে মনে করে তাদের স্বাধীন চলাফেরায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তাদের অনভিজ্ঞতা ও দুঃসাহসিক অভিযাত্রা কখনো অসংশোধনীয় ঘটনার জন্ম দেয়।
অপ্রিয় হলেও সাধারণ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে সব সময় সন্তানদের কিছু পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন। বিরক্ত হয়ে ওরা কখনো এড়িয়ে যেতে চাইবে, কিন্তু এর ফলে আমরা কিছুটাও হলেও মানসিকভাবে শান্তিতে থাকতে পারব। নিয়তিকে হয়তো এড়ানো যাবে না।
দীর্ঘদিন থেকে এ দেশে বসবাসরত ছেলেমেয়েরা দক্ষ সাঁতারু ও শারীরিকভাবে ফিট। আমরা নতুন অভিবাসীরা এ ব্যাপারে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছি। আমার এলাকার একটা পার্কে আমি যাই। দেশীয় লোকদের সেখানে দেখা–ই যায় না। সুইমিং পুলে কদাচিৎ দু-একজন আসতেন। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে যাওয়ায় এখন সুইমিং পুলে যাওয়া হয় না। মনে হয় আমাদের কমিউনিটিতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি এখনো। হঠাৎ করে একদিন সুইমিং পুলে দীর্ঘ সময় থাকলে স্বাভাবিক বডি টেম্পারেচারের ব্যাঘাত হতে পারে। ছোটবেলা যখন পুকুরে দীর্ঘসময় নিয়ে সাঁতার কাটতাম, তখনকার শারীরিক পরিবর্তনটা আমাদের অনেকের নিশ্চয় মনে আছে।
বড় সমস্যা হল, বড় হয়ে গেলে এখানকার ছেলেমেয়েরা অভিভাবকদের সঙ্গে থাকতে চায় না। ফলে ওদের গতিবিধি অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রস্তুতি না নিয়েই আমেরিকানদের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে গেলে হোঁচট খেতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাই ঘটছে। প্রচুর আয় বাড়াতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়তে দেখা গেছে। সন্তানদের সময় না দেওয়ায় দূরত্ব বেড়ে গেছে। চোখের সামনেই অনেক অঘটন ঘটতে দেখেছি। এই বৈরী পরিবেশে আমাদের আরও সতর্ক হয়ে এগোতে হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু লেখা, তাতে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।