বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে বাধা অদৃশ্য শক্তি

প্রায় দু বছর আগে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিত হয়ে যায় বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন। এর পর আইনি সে বাধা দূর হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্যতম বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির ২৭ হাজার সাধারণ ভোটার বহু দিন ধরে সংগঠনটির নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির সৃষ্টি করা বাধায় তা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৮ সালের অক্টোবরে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিত হয় বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাজী নয়ন প্যানেলের আলী আকবর চৌধুরী ও লিটু চৌধুরীর প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন বাতিল করলে তাঁরা আদালতে শরণাপন্ন হলে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে এ স্থগিতাদেশ দেন। পরে আদালত দুই প্রার্থীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র তলব করেন। দুই  প্রার্থী আদালতের নির্দেশে প্রয়োজনীয় নথি দাখিল করলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ৬ মার্চ দুই প্রার্থী আকবর ও লিটু কানেকটিকাট থেকে নোটারি করা নথি আদালতে দাখিল করলে তাও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। ফলে ওই দুই প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বৈধতা হারান। আর এর মধ্য দিয়েই সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আইনি বাধা দূর হয়। কিন্তু তারপরও এ নির্বাচন এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে আলোচনা উঠলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জেদাজেদির কারণে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৭ হাজার ৫১৩ জন ভোটার বানানো হয় এই নির্বাচনে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অর্থায়নে ভোটার হয়েছেন অনেকেই। দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় এই ভোটারদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে, যা সংগঠনের ভবিষ্যতের জন্যই নেতিবাচক।

বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে বলেন, ‘এখন আর নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনি কোনো বাধা নেই। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে নির্বাচন পরিচালনা করাটা দুরূহ।’ এই পরিস্থিতিতেও নগরীর সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্ক সিটি লকডাউন থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে খোলার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন স্কুলে যোগাযোগ করেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে এমন অনুমতি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন কথা বললেন বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্য আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নগরীতে এখন আর লকডাউন নেই। সব কার্যক্রমই চলছে। সিটির নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে যেকোনো সময় নির্বাচন দিতে পারেন। কিন্তু কোন অদৃশ্য হাতের ইশারায় নির্বাচন হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

নয়ন-আলী প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে সদাপ্রস্তুত।’

মোহাম্মদ আলী বলেন, কোভিডের কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্ব হলে সংশ্লিষ্টরা যেকোনো ধরনের সমঝোতার উদ্যোগ নিতে পারেন। সংগঠনের কথা ভেবেই এমন উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় সোসাইটির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সোসাইটির সদস্য আহমেদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন হওয়া জরুরি। নির্বাচন না হওয়ায় বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তেমন একটা নেই। এক ধরনের স্থবিরতা চলছে।’

তবে এই সাংগঠনিক স্থবিরতার কথা পাশ কাটিয়ে বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রহিম হাওলাদার বলেন, ‘করোনাকালে আমরা শতাধিক লাশ দাফনে সহযোগিতা করেছি। মানুষের হাতে পৌঁছে দিয়েছি নিত্য প্রয়োজনীয় গ্রোসারি সামগ্রী। যে কারও সমস্যায় আমাদের অবহিত করলে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতার চেষ্টা করব।’

এদিকে সোসাইটির নির্বাচনে রব-রুহুল পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আবদুর রব মিয়া নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘এখনো কোভিড-১৯ চলছে। এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে এতে সব ভোটার অংশ নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, ভোটার ও সচেতন মহলকে নিয়ে মতবিনিময় করা দরকার। কারণ এখানে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। আবার গত দু বছরে অনেকের ঠিকানাও বদল হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে, তার ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি। পরিস্থিতি ভালো থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’