নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সাদা দানাদার পদার্থে সয়লাব
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা সাদা রঙের দানাদার পদার্থে সয়লাব হয়ে গেছে। এসব পদার্থ মাড়িয়ে পানিতে নামতে পর্যটকদের কেউ কেউ ভয় পাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ পদার্থের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সাদা রঙের দানাদার পদার্থ ছড়িয়ে আছে। এ পদার্থ কোথাও কম, কোথায় বেশি। দেখতে অনেকটা লবণের মতো। সৈকত থেকে উত্তর দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় এ পদার্থের স্তর দেখা গেছে। সৈকতে আসা পর্যটকদের কেউ কেউ এসব পদার্থ মাড়িয়ে পানিতে নামছেন। আবার ওই পদার্থ পায়ে লাগলে ক্ষতি হবে—এমন আশঙ্কায় কেউ কেউ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। সৈকতের নিউ এম এস ডিজিটাল স্টুডিওর আলোকচিত্রী মো. সোলায়মান গত রোববার বলেন, ‘১২-১৩ দিন ধরে সৈকতে সাদা এই দানা দেখা যাচ্ছে। ভাটার সময় দানাগুলো বালুর চরে আটকে থাকে। অনেকে এসব দেখে পানিতে নামেন না।’ গতকাল বৃহস্পতিবার অবশ্য সৈকতে এই পদার্থের পরিমাণ কিছু কমেছে। পানির টানে এগুলো সরে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানায়।অভিযোগ উঠেছে, সীতাকুণ্ড উপকূলের জাহাজভাঙা (শিপ ব্রেকিং) ইয়ার্ড থেকে এই বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রে ফেলা হয়েছে। জোয়ার-ভাটার টানে ভেসে এগুলো পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে আসে। জানা যায়, পতেঙ্গার অদূরে ফৌজদারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় শতাধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ দল রোববার পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পরিদর্শন করে এবং ওই সাদা পদার্থের নমুনা সংগ্রহ করে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে অধিদপ্তর জানিয়েছে, এগুলো পলি ইউরোথিন নামের রাসায়নিক পদার্থ। সাধারণত কর্কসিট ও শোলাজাতীয় বস্তু তৈরিতে এটি ব্যবহূত হয়। পদার্থটি নিয়ে অধিদপ্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।ওই বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ও অধিদপ্তরের প্রধান রসায়নবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে ওই পদার্থের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। এতে মানবদেহের কোনো ক্ষতি হবে কি না তাও আপাতদৃষ্টিতে বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটি পেটে গেলে ক্ষতি হতে পারে।’ তিনি বলেন, এই পদার্থের কারণে ক্ষতি না হলেও এভাবে কেউ কিছু সমুদ্রে ফেলতে পারে না। এটি পরিবেশদূষণের আওতায় পড়ে। বিদেশি পর্যটকেরা যদি এ দৃশ্য দেখেন, তাহলে তাঁরা আর সৈকতে নামবেনই না। জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর এই পদার্থের উত্স খুঁজে বের করতে সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে ভাটিয়ারী ও মাদামবিবিরহাটে জাহাজভাঙা ইয়ার্ড এলাকায় যায়। ইয়ার্ড থেকে এই পদার্থ ফেলার বিষয়ে তারা নিশ্চিতও হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক মো. আবদুস সোবাহান বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি এসব পদার্থ জাহাজ কাটার সময় জাহাজভাঙা ইয়ার্ড থেকে ফেলা হয়েছে। কারণ বেশ কটি ইয়ার্ডে এ ধরনের নমুনা পাওয়া গেছে। তবে কোন ইয়ার্ড থেকে এগুলো ফেলা হয়েছে তা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। এর পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভেঙে ও কেটে বিক্রির জন্য কনটেইনার ও পণ্যবাহী জাহাজের পাশাপাশি কিছু তরলী করা গ্যাস (এলপিজি) পরিবহনকারী বিশেষায়িত জাহাজও এসব ইয়ার্ডে আনা হচ্ছে। এলপিজি পরিবহনকারী জাহাজ কাটার সময় পলি ইউরোথিন বেশি পাওয়া যায়। এগুলোর বাজারমূল্য না থাকায় ইয়ার্ড মালিকেরা এসব পদার্থ অনেক সময় বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে ফেলেন। আবার কখনো রাতের আঁধারে সমুদ্রের পানিতে ফেলা হয়। কোনো কোনো ইয়ার্ডে এলপিজি বহনকারী জাহাজ কাটার কারণে সমুদ্রের পানিতে পলি ইউরোথিনের পরিমাণ বেড়েছে।কর্ণফুলী নদী ও সমুদ্রদূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করা চট্টগ্রাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, এই অর্গানিক সাবস্ট্যান্স একসময় পানির লবণ, তেল ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে মিশে যাবে। এ ছাড়া এসব পদার্থ যদি মাছ খায়, তাহলে মাছের ক্ষতি হবে।