সাংবাদিকদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। তিনি সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর হামলা, ভয়-চাপ অতীতে ছিল, এখনো কিছুটা আছে। এগুলো মোকাবিলা করতে হবে। তবে সবার আগে মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ২০০৮ সালের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য তিনজন সাংবাদিককে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। তথ্যমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এবং সাংবাদিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নির্ভর করে সম্পাদক ও প্রকাশকের ওপর। তাঁদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেটের সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খাতের ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে হলে একজন প্রতিবেদককে সময় ও সহযোগিতা দিতে হবে।মতিউর রহমান বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী আক্রান্ত হলে তারা নানামুখী আক্রমণ করে। স্থানীয় সাংসদের অনিয়মের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর প্রথম আলোর গলাচিপা ও চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে হামলা ও মামলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক চার বছর অনুসন্ধান করেছেন। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ, সত্ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য সম্পাদক ও প্রকাশকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন তিনি।প্রথম আলোর সম্পাদক আরও বলেন, ‘দেশের একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচাতে রাষ্ট্রযন্ত্র কীভাবে সহযোগিতা করেছে, এ বিষয়ে আমরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করি। এতে ওই ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে মেতে উঠেছে।’ এ ধরনের আক্রমণ ও চাপ মেনে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানান তিনি।বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, “আগে সংবাদপত্রে কোনো সমস্যা নিয়ে একটি চিঠি প্রকাশের পর সরকার ও প্রশাসনের লোকেরা অনুসন্ধান করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতেন। এখন যাঁরা আছেন তাঁরা সম্ভবত পত্রিকা পড়েন না। ‘আমি যেমন আছি তেমন রব’ এই মানসিকতা নিয়ে থাকেন।”ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও কর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকার কীভাবে এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তার ওপর তৈরি প্রতিবেদনের জন্য ডেইলি স্টার-এর সৈয়দ আশফাকুল হক ও জুলফিকার আলী মাণিককে যৌথভাবে জাতীয় দৈনিক বিভাগের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়।‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৃষ্টিপাত-এর খুলনা ব্যুরোর প্রধান মুহাম্মদ নুরুজ্জামানকে আঞ্চলিক সাংবাদিকতা বিভাগের পুরস্কার দেওয়া হয়। পাবনার একটি এনজিও ভূমিহীনদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করার পর দাতাদের অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ইটিভির দীপু সারোয়ার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম বিভাগে পুরস্কার পান। এ বছর জাতীয় দৈনিক বিভাগে ৪৩টি, আঞ্চলিক বিভাগে ১৫টি এবং ইলেকট্রনিক বিভাগে সাতটি প্রতিবেদন জমা পড়ে। প্রতিবেদন মূল্যায়নের জন্য চার সদস্যের বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক নওয়াজিশ আলী খান, সৈয়দ বদরুল আহ্সান, শ্যামল দত্ত ও অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের।টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংবাদিকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।