সারা দেশে একতরফা বিএমএ নির্বাচন সিলেটে স্বাচিপের দুই পক্ষে সংঘর্ষ

প্রথমবারের মতো একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হলো চিকিত্সকদের বৃহত্ পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নির্বাচন। সরকার-সমর্থিত চিকিত্সকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদ (স্বাচিপ) ও ডক্টরস হেলথ ফর এনভায়রনমেন্টের সমন্বিত প্যানেল ছাড়া আর কোনো সংগঠনই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে ভোট নিয়ে ভোটারদেরও উত্সাহ ছিল না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচনে সিলেটে স্বাচিপের দুই পক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রার্থী, পুলিশসহ আহত হয়েছেন পাঁচজন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সাতটায় ভোট গণনা শুরু হয়। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারা দেশেই ভোট গণনা চলছিল। বিএমএ নির্বাচন কমিশনের প্রধান এ এস এম মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় ভোট গণনা শেষ হতে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা বেজে যাবে। পুরো ফল ঘোষণা করতে শুক্রবার হয়ে যাবে।সারা দেশে বিএমএর ৬৭টি শাখায় গতকাল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটারের সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ১৩৩ জন। এর মধ্যে ঢাকা শাখায় ভোটারের সংখ্যা ১০ হাজার ১১৯ জন। এবারই প্রথম ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট শাখায় ভোট গ্রহণ করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ভোটাররা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেন অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) ফরমে। রাজধানীর তোপখানা রোডে গতকাল বিএমএ কার্যালয়ে গিয়ে স্বাচিপের সমর্থকদেরই বেশ তত্পর দেখা যায়। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উত্সাহ ছিল কম। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির গতকাল সকালের দিকেই ভোট প্রদান করতে আসেন। একাধিক ভোটার জানালেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় ভোটারের সংখ্যাও ছিল কম। তবে স্বাচিপ সমর্থিত যুগ্ম মহাসচিব পদপ্রার্থী শারফুদ্দিন আহমেদ সেটি মানতে নারাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ড্যাব, এনডিএফসহ চারটি প্যানেলই নির্বাচনে আছে বলে তিনি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, ‘কেবল স্বাচিপের নেতারাই তো আছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত তুলে সমর্থন জানালেই তো কাজ হয়ে যায়। এখানে কম্পিউটার দিয়ে ভোট দেওয়ার ঝামেলায় যাওয়ার কী দরকার!’সিলেটে স্বাচিপের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ: সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সেখানে মাহবুব-ময়নুল ও রোকন-মুর্শেদ নামে স্বাচিপের দুই প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক ইহতেশামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে রোকন-মুর্শেদ পরিষদের সমর্থনে কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন। ভোটকেন্দ্রের পাশে থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করার প্রতিবাদ করলে ওই কর্মীরা মাহবুব-ময়নুল পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী সুদর্শন সেনের ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি মারতে থাকেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রকিব ও রিজার্ভ পুলিশ সদস্য ইসরাইলও মারধরের শিকার হন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় মাহবুব-ময়নুল পরিষদ। তারা পুনর্নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছে।