কবিতা

মাসুদুজ্জামান

মায়াস্পর্শ

ফিরে গেলে কোন শহরের রৌদ্রগন্ধ কুসুমবনে

বকুলঘ্রাণে জড়িয়ে ছিলাম তোমার শরীর–ত্বকে

চুলখোলা পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে দৌড়ে গেছি

ঈর্ষাকাতর জিবগুলি তখনো লকলক করছিল

ও আমার নির্জন রক্তজবা ও আমার ধরিত্রীবধূ

স্বপ্ন আর চুমুতে এখনো কি মিশে আছ তুমি?

তোমার কবিতার পাণ্ডুলিপি ডানায় জড়িয়ে

একটা শালিক একদিন আমাকে পৌঁছে দিয়ে

বলেছিল, এ হলো রক্তপুঁথি হৃদয়কাহন গল্পসল্প

দুটি শিশুর ভ্রূণ এখানে অক্ষরে অক্ষরে সুপ্ত

এই কবিতা মিথুনমিশ্রিত স্বেদ আর নুনে তৈরি

এর প্রতিটি পঙ্‌ক্তিতে লেখা আছে লেলিহান

গোধূলির সোনালি পালক আর ধানের কুহক

প্রথম যেদিন এসেছিলে আরক্ত রক্তজবার রং

শাশ্বত নারীর অতৃপ্ত বাসনারা প্রজাপতি হয়ে

উড়ছিল, বুঝি কোনো মায়াভ্রমর যতিচিহ্নহীন

ঘুরে ঘুরে খুঁজছিল আরেক মায়াশরীরের স্পর্শ

মারুফ রায়হান

টিপ

সূর্যের ধরনে এক অপার্থিব ডট নীহারিকাপুঞ্জ ছাড়িয়ে আকাশগঙ্গায় সাঁতরে নক্ষত্রের আলোয় স্নান সেরে গড়াতে গড়াতে উড়ে উড়ে এক প্রবল উচ্ছ্বাসে ডুব দিল শেষমেশ এ গ্রহের সুনীল সাগরে;

প্রেমস্পৃষ্ট লুটোপুটি ঝিনুক-ঝংকারে চমৎকার কোরালে তারা মাছে রিমঝিম ঝনৎকারে হাঙরের হাঁয়ে জলকন্যার মুঠো গলে সমুদ্রসফেনে মুক্তোর ফেনিল ফুঁয়ে নীল তিমির পিঠে শুয়ে ফের শূন্যে দিল মোহন উড়াল, আর পুষ্পবৃষ্টি নামল ঊষর ধরিত্রীজুড়ে সব অসুন্দর মুড়ে, আহ্‌;

হে বাঙালি নারী, চিরপ্রিয়তমা, অশেষ লাবণ্যে অপরূপা তোমার সুষমার অংশ হবে বলে ঈর্ষামেশা প্রেমবশত সেই অপার্থিব ডট রক্তিম সূর্যের সূক্ষ্মতম সুখ অবতরণ করল তোমারই মুখাবয়বের প্রকৃষ্ট প্রচ্ছদে, ঋতুময় থিতু হলো;

আর ঢিপঢিপ বুকে ঋষিঋদ্ধ হৃৎস্পন্দনে আমরা তাকে ডেকে উঠলাম:

টিপ!

নিষাদ নয়ন

অগম অথবা মনে নেই

আমাদের করোটির ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, প্রিয় রং, হাড়ের

কঙ্কাল, প্রিয়তার হারানো ভেলভেটিন আস্তিন, চেনা মুখ

আমাদের ফেলে আসা তালগাছে কাকেরা বাসা করে বলেই

বাবুই পাখি উড়ে যাচ্ছে দূরত্বের বিশাল ক্যানভাসে, আকাশে

আমাদের মনে কামন ও কুঞ্চন ফুটে থাকে, করবীর ফুলন্ত

শরীরে তাই কুসুম ফোটে ও ফুলকলিদের হলুদ বসন্ত হাসে

আমাদের এখন মনে পড়ে না, মনে থাকে না, কামজ-কামট

একে একে কত কিছু খেয়ে ফেলে, খোয়াই ভেঙে শুধু ওড়ে ঘুম

আমাদের শরীর হালকা বেলুনের মতো ফুলে থাকে কপটতায়

হয়তো কোমল রোদের বিকেল লাল সড়ক ভালোবাসে, হাসে