রক্তে আঁকা ভোর: বিশ্বস্ত কল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের বয়ান

প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আনিসুল হকের ‘যারা ভোর এনেছিল’ উপন্যাসধারার ষষ্ঠ উপন্যাস ‘রক্তে আঁকা ভোর। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিপুল আয়োতন ক্যানভাসে ধরা পড়েছে এখানে। বিজয়ের মাসে সেই বইয়ের আলোচনা।

ইতিহাসকে আশ্রয় করে উপন্যাস লেখা কঠিন বটে এবং এর বিপদও অনেক। ইতিহাস নিরেট বাস্তব আর উপন্যাস কল্পনার বর্ণে-গন্ধে রঞ্জিত। ফলে একটি নির্দিষ্ট কালপর্বের ইতিহাস যখন উপন্যাসের কাঠামোর মধ্যে প্রতিস্থাপিত হয়, সেই সময় স্বভাবতই ওই উপন্যাসের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে কল্পনাগামিতার। আর বিপদটি ঘটতে পারে তখনই, ইতিহাসের বাস্তবতাকে কতটা কল্পনার রঙে রাঙিয়ে তোলা হবে—আদতে এই প্রশ্নের ভেতরেই নিহিত রয়েছে ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাসের বিপদ এবং একই সঙ্গে বিপদভঞ্জনের প্রক্রিয়াটিও। ইতিহাস আশ্রয় করে লেখা আনিসুল হকের সদ্য প্রকাশিত উপন্যাস ‘রক্তে আঁকা ভোর’ সেই বিপদকে দারুণভাবে মোকাবিলা করেছে। কীভাবে? সে প্রশ্নের উত্তর যথাসময়ে পাওয়া যাবে। আগে এই উপন্যাসধারা সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য দিয়ে শুরু করা যাক। এটি আনিসুল হকের লেখা ‘যারা ভোর এনেছিল’ উপন্যাসধারার ষষ্ঠ খণ্ড, বের হয়েছে এ বছরই। এর আগে এই উপন্যাসধারায় আরও পাঁচটি উপন্যাস লেখা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগ-অব্দি ঘটনাপ্রবাহ—বাঙালি জাতির জাতীয়তাবোধের উন্মেষ থেকে শুরু করে স্বাধিকার ও স্বাধীনতাসংগ্রামের বৃহৎ ক্যানভাস মূর্ত হয়ে উঠেছে উপন্যাসধারার ‘যারা ভোর এনেছিল’, ‘উষার দুয়ারে’, ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’, ‘এই পথে আলো জ্বেলে’, ‘এখানে থেমো না—এই পাঁচ উপন্যাসখণ্ডে।

একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা।
ছবি: অমিয় তরফদার

এই সিরিজের সর্বশেষ উপন্যাস ‘রক্তে আঁকা ভোর’। এ উপাখ্যানের পটভূমিতে রয়েছে ১৯৭১ সালের উত্তাল রণাঙ্গন এবং মুক্তিযুদ্ধের ছত্র ছত্র বিচিত্রমুখী ঘটনা। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হলেন। চারদিকে আগুন জ্বলছে। নির্বিচার গুলি হচ্ছে, মারা পড়ছে সাধারণ মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিব যখন গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তখন তাঁর মনে পড়ছে ডি এল রায়ের গান, ‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতেই মরি।’ ‘রক্তে আঁকা ভোর’-এ ঔপন্যাসিক লিখেছেন, ‘আজ সন্ধ্যার পর যখন তিনি নিশ্চিত হলেন, মিলিটারি আক্রমণ করতে আসছে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পালিয়ে যাচ্ছেন, তখন থেকেই তিনি পাগলের প্রায় হাসছিলেন। “আই হ্যাভ গিভেন ইউ ফ্রিডম, নাউ গো, অ্যান্ড প্রিজারভ ইট।”’

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই গ্রেপ্তার হলেন—উপন্যাসটি শুরু হয় এই প্রেক্ষাপটে। এরপর কী হবে, সবাই-ই তা জানে। প্রথমবারের মতো বাংলা নামের দেশটি স্বাধীন হবে, লেখক সেই ইঙ্গিত উপন্যাসের শুরুতেই দিয়ে রেখেছেন, ‘বোমা বিস্ফোরণের শব্দে রাতের ঘুম ভেঙে কাক উড়তে শুরু করেছে আকাশে। সেই আকাশে তিনি দেখতে পেলেন যেন আব্বার জ্যোতির্ময় মুখ। শেখ লুৎফর রহমান যেন তাঁকে বললেন, “অনেস্টি অব দ্য পারপাজ আর সিনসিয়ারিটি অব দ্য পারপাজ তোমার আছে। তুমি বিজয়ী হবে। বাংলার মানুষ বিজয়ী হবে।”’

আনিসুল হকের আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ওপরের উদ্ধৃতাংশে ‘তিনি’ নামে যাঁর কথা বলা হলো, সেই ব্যক্তি যে বঙ্গবন্ধু, তা আর না বললেও চলে। কিন্তু এখানে শেখ মুজিবের মনের ভাবনা বিবৃত করতে গিয়ে লেখক তাঁর মুখ দিয়ে এসব কথা বলার পর, অর্থাৎ উপন্যাসের প্রস্থানবিন্দুটি শুরুতে বলে দেওয়ার পরও ‘রক্তে আঁকা ভোর’ পাঠককে টেনে রাখে। টেনে রাখে তার গতিময় ভাষার মাধুর্য আর ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকে দৈনন্দিনতার ভেতর দিয়ে মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের কারণে।

চরিত্রগুলোকে লেখক কেমনভাবে মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, এখন তার একটি নমুনা দেওয়া যাক। ২৫ মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, জামাতা ওয়াজেদ মিয়া, ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, তাঁদের খালাতো বোন জেলি এবং পুরোনো ভৃত্য পাগলা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ছেড়ে একই এলাকার সাতমসজিদ রোডের ১৫ নম্বর বাড়িতে আশ্রয় নেন। বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে কাটে কালরাত্রি। তবে দিনের সূর্যের মতো মানুষের জীবনও তো প্রতিদিন উদিত হয়। তাই তাঁদের পরের দিনের বর্ণনা লেখক দিয়েছেন এভাবে:

‘পাগলা বলল, “চাউল আছে। ডাল আছে। খিচুড়ি পাক করা যাক। এই বাড়িতে কি চুলা আছে?”

“ওয়াজেদ মিয়া বললেন, কেরোসিনের স্টোভ তো আছে একটা।”
পাগলা খিচুড়ি বসাতে গেল। জেলি এগিয়ে গেলেন তাকে সাহায্য করতে। হাসিনাও উঠে একবার গেলেন রান্নাঘরের দিকে। পুরো বাড়িতে কোনো আসবাব নেই। বাসনকোসন নেই।

পেঁয়াজ কাটার মতো কোনো চাকু-ছুরি-বঁটিও নেই।

পাগলা দরজার ফাঁকে পেঁয়াজ ধরে পেঁয়াজ থেঁতলা করতে লাগল। হাসিনার চোখ এমনিতেই জ্বলছিল। এবার অঝোর ধারায় বর্ষণ শুরু হলো।
[...]

পাগলা খিচুড়ি বসিয়েছে। চাল-ডাল সেদ্ধ হওয়ার গন্ধ আসছে। হাসিনার গলা পর্যন্ত জ্বলছে অ্যাসিডিটির কারণে।

সময় যেতে চায় না। শঙ্কাকুল একেকটা হৃদয় দেয়ালের ওপারের মুকুলভরা আমগাছের পাতার মতো কাঁপে। তবু সময় বয়ে যায়। বিকেলে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।

সবার বুক ধড়াক করে ওঠে। কে এল, মিলিটারি নাকি?

রেহানা উঠলেন দরজা খুলতে। হাসিনা তাঁকে টেনে ধরলেন, “তুই যাস না। মিলিটারি যদি আসে।”’

‘রক্তে আঁকা ভোর’-এর প্রকৃত নায়ক হলো সময়। ফলে এতে তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা ভাসানী, আবদুল আজিজ বাগমার, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ইন্দিরা গান্ধী, জেনারেল নিয়াজি, ইয়াহিয়া খান, হেনরি কিসিঞ্জার—সবাই চরিত্র হিসেবে হাজির। নিজেদের সমুদয় ভালো-মন্দ নিয়েই একেক অধ্যায়ে একেকজন উপস্থিত হন সময়কে তুলে ধরার প্রয়োজনে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ-দিনের সমস্ত ঘটনা, যুদ্ধকালের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা ও অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষের দিনযাপন এখানে যেমন ধরা পড়ে, তেমনি পাকিস্তান ও ভারতীয় বাহিনী তথা শত্রু-মিত্রের মনস্তত্ত্বসমেত সময়ের সব চিত্রই উঠে এখানে এসেছে বিশ্বস্ত চিত্রণে।

এভাবে ছোট ছোট দৃশ্যের বুননে এগিয়েছে বইটি, যেখানে ইতিহাসের সব চেনা চরিত্রেরা রক্তমাংসের মানুষের অনুভূতিতে সঞ্চারিত হয়ে উঠেছেন। তারপর তাঁদের ওই সঞ্চারণ পাঠকের অন্তরেও অনুরণন তোলে। যেমন উপন্যাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ যখন আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত হয়েছে, এ সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির একটি অনুপম চিত্র ফুটে উঠেছে:

‘এ বাড়ির পাহারাদার মিলিটারিরা ১৮ নম্বর সড়কটির দুই মাথায় ব্যারিকেড বসাল। এই রাস্তা দিয়ে কাউকে যেতে দেবে না।

লোকজন আনন্দে যেন বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে। রাস্তায় অস্ত্র হাতে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে একটা মিছিল যাচ্ছে।

রেহানা চিৎকার করে উঠল: “মুক্তিবাহিনী মুক্তিবাহিনী।”’

এই লেখায় উপন্যাসের যেসব স্থান থেকে উদাহরণ দেওয়া হলো, তাতে কারও কারও মনে হতে পারে, উপন্যাসটি হয়তো আবর্তিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার ঘিরেই। যেহেতু এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত বাংলা এবং ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি কারামুক্ত বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা, তাই শেখ মুজিব এখানে নায়ক তো বটেই, কিন্তু এ উপন্যাসের পটভূমিতে একক নায়ক মোটেও তিনি নন, আমাদের বিবেচনায় ‘রক্তে আঁকা ভোর’-এর প্রকৃত নায়ক হলো সময়। ফলে এতে তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা ভাসানী, আবদুল আজিজ বাগমার, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ইন্দিরা গান্ধী, জেনারেল নিয়াজি, ইয়াহিয়া খান, হেনরি কিসিঞ্জার—সবাই চরিত্র হিসেবে হাজির। নিজেদের সমুদয় ভালো-মন্দ নিয়েই একেক অধ্যায়ে একেকজন উপস্থিত হন সময়কে তুলে ধরার প্রয়োজনে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ-দিনের সমস্ত ঘটনা, যুদ্ধকালের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা ও অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষের দিনযাপন এখানে যেমন ধরা পড়ে, তেমনি পাকিস্তান ও ভারতীয় বাহিনী তথা শত্রু-মিত্রের মনস্তত্ত্বসমেত সময়ের সব চিত্রই উঠে এখানে এসেছে বিশ্বস্ত চিত্রণে।

‘রক্তে আঁকা ভোর’–এর লেখক আনিসুল হক

এই বিশ্বস্ততা চিত্রণের বিভিন্ন পর্যায়ে আনিসুল হক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা নানাজনের অজস্র বই এবং ইতিহাসের বিভিন্ন সূত্রের শরণ নিয়েছেন, কিন্তু ইতিহাসের নিরেট বাস্তব চিত্রগুলো এখানে তিনি পরিবেশন করেছেন কথাশিল্পের সৃজনশীল সরসতায়, দৃশ্যের আবহে। বলা ভালো, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের বহুবর্ণিল রং, নানা পক্ষের বিষয়-আশয়, ঐতিহাসিক সত্যাসত্য এই বইয়ে বারবার প্রাণ পেয়েছে দৃশ্যের আবরণে। প্রাসঙ্গিকভাবে এ ক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় ভারতীয়দের হাতে নজরবন্দী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দিল্লিতে হাসপাতাল-যাপনের চিত্রটি দৃশ্য নির্মাণের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে:

‘২০ নভেম্বর ১৯৭১ তিনি দিল্লির হাসপাতালে বিরিয়ানি, ফিরনি, সেমাইয়ের ব্যাপক আয়োজন করতে বলেছেন। জাদুর মতো তা-ও হয়ে গেছে। ডাক্তার, নার্স, আমন্ত্রিতরা চলে এসেছে। কিন্তু বিরিয়ানির ডেকচির ঢাকনা খুলে তিনি বললেন, এই বিরিয়ানি তো ঘিয়ের না। ডালডার।

ওরা বলল, “না হুজুর, ঘিয়ে পাকানো।”

“ঘিয়ে পাকানো হইলে গন্ধ কই?”

“এটা মোষের দুধের ঘি।”

“না, হইব না। খাঁটি গব্যঘৃতের বিরিয়ানি লাগব।”

মওলানা ভাসানীর সঙ্গে তর্ক করা নিষেধ। ভারতীয়রা দৌড়াল খাঁটি গব্যঘৃত দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে আনতে। এক পাতিল বিরিয়ানি এল। তিনি ঢাকনা খুলে চামচে বিরিয়ানি তুলে বললেন, “দেখলা সাইফুল, এইবার সুবাসটা কী রকম ফার্স্টক্লাস!”

“জি হুজুর। খুব ফার্স্টক্লাস।”’

গোটা উপন্যাসে ঔপন্যাসিক তাঁর কল্পনার বিস্তার ঘটিয়েছেন ইতিহাসের বিশ্বস্ত পাটাতনে দাঁড়িয়ে। আবার কোথাও কোথাও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ে যে একাধিক বয়ান আছে, নান্দনিকভাবে তা-ও তিনি জুড়ে দিয়েছেন কাহিনির বাতাবরণে। মূলত এই কৌশলের মধ্য দিয়ে আনিসুল হক ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস লেখার বিপদকে মোকাবিলা করেছেন বলে মনে হয়। বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা যাক। ‘রক্তে আঁকা ভোর’-এ ইতিহাসের সীমারেখায় দাঁড়িয়ে ঔপন্যাসিক কখনোই বল্গাহারা কল্পনার আশ্রয় নেননি। এতে তিনি কোনো কল্পিত চরিত্র সৃষ্টি করেননি, আবার কল্পনাকে খুব সংকুচিতও করে তোলেননি। বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে গ্রহণযোগ্য মিলমিশ ঘটিয়ে, একটা মধ্যবর্তী অবস্থান গ্রহণ করে ঐতিহাসিক সব চরিত্রকে উপস্থাপন করেছেন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, সময়কে এঁকেছেন পরিমিত ও বিশ্বস্ত কল্পনার সংশ্লেষে। ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে এই ‘বিশ্বস্ত কল্পনা’র জরুরত খুব বেশি। ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাসের ক্ষেত্রে এটির অভাব ঘটলেই হানা দিতে পারে সেই বিপদ—ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস লেখার সময় অনেক ক্ষেত্রেই যা ঘটে থাকে। আনিসুল হক এই বিপদটি কাটিয়েছেন তাঁর বিশ্বস্ত কল্পনাশক্তিকে ইতিহাসের রাজপথ ও গলিপথে মিশিয়ে দিয়ে। উপরন্তু আগেই বলেছি, তিনি এখানে যেহেতু সময়কেই মুখ্য নায়করূপে গড়ে তুলেছেন, সে ক্ষেত্রে অনেক চরিত্রের সমবায়ে এ উপন্যাসটি রচিত হলেও লেখকের একটি চরিত্রনিরপেক্ষ সত্তাও এখানে ফুটে উঠেছে। এটি যেমন রচয়িতার ‘বিপদ মোকাবিলা’র কৌশল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, একইভাবে এটি উপন্যাসের সার্থকতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ারও যোগ্য।

রক্তে আঁকা ভোর: আনিসুল হক। প্রথমা প্রকাশন

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এই কালপর্বের এফোঁড়-ওফোঁড়, টানাপোড়েন, অর্থাৎ সমস্ত কিছুই মোটামুটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে পাওয়া যাবে আনিসুল হক প্রণীত ‘রক্তে আঁকা ভোর’ উপন্যাসে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের সবার জানা। বইয়ের পাতায় আছে। তবে এই ইতিহাস, ঐতিহাসিক মানুষগুলোকে আমরা যদি রক্তমাংসের অবয়বে দেখতে চাই, যদি মুক্তিযুদ্ধের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোকে দৃশ্যে দৃশ্যে অনুপুঙ্খভাবে আবার চোখের সামনে ভাসিয়ে তুলতে চাই, তবে ‘রক্তে আঁকা ভোর’ আমাদের পড়তেই হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে একাত্তরের সেই চির-আয়ুষ্মান ক্ষণগুলোকে অনুভব করার সুযোগ আমরা নিশ্চয় হেলায় হারাতে চাইব না!

রক্তে আঁকা ভোর
আনিসুল হক
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০২১, প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা, ৫৮৪ পৃষ্ঠা, দাম: ১০৫০ টাকা।
ঘরে prothoma.com থেকে পেতে পারেন ৭৫০ টাকায়।