টিফিন

>জুন মাসের তৃতীয় রোববার, মানে ১৮ জুন—আসছে বাবা দিবস! বাবাকে নিয়ে গল্প পাঠিয়েছ তোমরা। সেগুলোই প্রকাশিত হলো আজ

বিকেলে খেলার মাঠে একত্র হলাম অনেকে। দেখলাম কারও খেলার ইচ্ছা নেই। সুবর্ণ বলল, ‘আজ আর খেলব না।’ হঠাৎ দুর্নিবার বলে উঠল, ‘আজ জুন মাসের তৃতীয় রোববার।’ অয়ন বলল, ‘তাই তো। তার মানে...’

আমি বললাম, হ্যাঁ, আজ বাবা দিবস। এরপর সবাই একে একে বাবাকে নিয়ে কাটানো কিছু সুন্দর মুহূর্তের কথা বলতে লাগল। বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া, মজার খাবার খাওয়া, কেনাকাটা করা...এসব ছিল গল্পের সাধারণ বিষয়। এক এক করে সবার বলা শেষ হয়ে গেল। অনুপম হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘কিরে অভ্র, তুই কিছু বলছিস না যে?’

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, আমার কাটানো দিনগুলো একটু অন্য রকম। তোদের হয়তো ভালো লাগবে না। তবু বলছি শোন।

পৃথিবীর আলো দেখার পর বাবাই আমার সব। বাবা আর আমি থাকতাম ঘুপচি গলির সর্বশেষ ছোট একটা বেড়ার ঘরে। ২০১০ সালের কথা, আমি তখন সাত বছরের স্কুলপড়ুয়া এক ছোট ছেলে। বাবা সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে এসে দেখে আমার অনেক জ্বর। শুয়ে আছি বিছানায়। বাবা কাছে এসে বলল, সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিছুক্ষণ পর বাবা ওষুধ খাইয়ে দিল। ঘরে থাকা সামান্য কিছু আটা দিয়ে বাবা দুটি রুটি বানাল। আটা এতটাই সামান্য ছিল যে তা দিয়ে দুটোর বেশি রুটি বানানো সম্ভব নয়। আমি অবশ্য জ্বরের মুখে একটির বেশি খেতে পারলাম না। বাবাকে বললাম অন্য রুটিটা খেয়ে নিতে। কিছুক্ষণ পর বাবা ঘুমাতে এল। আমি প্রতিদিনের মতো বাবার হাতের মধ্যে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে একটু সুস্থ্যবোধ করাতে আমি স্কুলে গেলাম। টিফিন পিরিয়ডে সবাই যখন নানা রকম মজার ও দামি খাবার খাচ্ছিল, তখন আমি বসে ছিলাম ক্লাসের এক কোণে। আমি জানতাম বাবা আজ কিছুই দিতে পারেনি। ঘরে কিছু ছিল না দেওয়ার মতো। হঠাৎ কী মনে হলো, নিজের টিফিন বক্সটা বের করে খুলে দেখি রয়েছে কাল রাতের সেই রুটিটা। আমি সব বুঝে গেলাম। আমার মনে হচ্ছিল ক্লাসের অন্য সবার চেয়ে দামি টিফিনটাই আমার টিফিন বক্সে। কেন জানি না, আমার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।

এখনো আমি ভুলতে পারিনি সেই দিনের কথা। বাবার দেওয়া সেই রুটিটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি টিফিন।

নবম শ্রেণি, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়