লুকোচুরি

.
.

তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। ক্লাসের সেরা দুষ্ট বালক নির্বাচন হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হব। নিত্যনতুন কায়দা আবিষ্কার করে সবাইকে তটস্থ রাখতে আমার জুড়ি মেলা ভার।
এক শুক্রবারে ছোট কাকার সঙ্গে বাজারে গেছি। ছুটির দিন বলে বাজারে অনেক ভিড়। হঠাৎ একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়। কাকা যখন দরাদরি করে মাছ কিনছিলেন, আমি চুপ করে তার পেছন থেকে সরে পড়লাম। মাছ কেনা শেষ করে তো ছোট কাকার মাথায় হাত। প্রায় আধা ঘণ্টা বাজার তোলপাড় করার পর বেরিয়ে এলাম। আমায় খুঁজে পেয়ে কাকা এত খুশি হলেন যে সঙ্গে সঙ্গে একগাদা চকলেট কিনে দিলেন।
কিছুদিন পর বাবার সঙ্গে বাজারে গেছি। আবার ইচ্ছা করে হারিয়ে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ পাগলের মতো খোঁজাখুঁজি করার পর বাবা আমাকে পেলেন। আমিই লুকানো জায়গা থেকে বেরিয়ে এলাম।
এই নতুন বিপজ্জনক খেলা আমার নেশায় পরিণত হলো। কিছুদিন পর মায়ের সঙ্গে মার্কেটে গেছি। স্কুলের জামা-জুতা কিনতে হবে। সামনে ঈদ ছিল বলে মার্কেটে অনেক ভিড়। একটা শাড়ির দোকানে ঢুকে মা যখন শাড়ি দেখায় ব্যস্ত, আমি আস্তে করে বেরিয়ে দোকানের বাইরে সিঁড়ির তলায় গিয়ে লুকালাম। পাঁচ মিনিট পরেই মা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন। এদিক-ওদিক তাকিয়ে পাশের গলিতে ঢুকে পড়লেন। আমি লুকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলাম।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল। মাকে আর ওই গলি থেকে বেরোতে দেখিনি। বোধহয় অন্যদিকে আমাকে খুঁজছেন। আমি বেরিয়ে এলাম। কিন্তু পুরো মার্কেট খুঁজেও মায়ের দেখা পেলাম না। এবার আতঙ্কিত হওয়ার পালা আমার। আরেকবার পুরো মার্কেট চক্কর দিলাম। কোথাও মা নেই। খুব ভয় পেয়ে গেলাম। ভীষণ কান্না পেল। আমি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। একসময় কান্নার বেগ বেড়ে গেল, আর আমি মেঝেতে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। লোকজন জড়ো হয়ে গেল। তখনই পেছন থেকে মায়ের ডাক শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখি, তিনি মুচকি হাসছেন। দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। এরপর এমন দুষ্ট বুদ্ধি আর করিনি। উচিত শাস্তি হয়ে গিয়েছিল আমার।
দিবাকর দাস, উত্তরা, ঢাকা
সেরা লেখক/আলোকচিত্রী পাবেন ২০০ টাকার মুঠোফোন রিচার্জ