আমিও খেলেছি রাশিয়ায়!

রাশিয়ার মাঠে খেলছে রাফি (ডানে)
রাশিয়ার মাঠে খেলছে রাফি (ডানে)
নারায়ণগঞ্জের হাজী ইব্রাহীম আলমচান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্লাস সেভেনে পড়ে গোলাম রাফি খান। বিশ্বকাপ ফুটবলের এই মৌসুমে ‘ফুটবল ফর ফ্রেন্ডশিপ’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে কয়েক দিন আগে সে গিয়েছিল রাশিয়ায়, ফুটবল খেলতে। মেসি-নেইমারদের ‘বড়’ বিশ্বকাপে রাফির খেলা হয়নি। তবে রাফি যেই টুর্নামেন্টে খেলেছে, সেটাও কম যায় না! ২১১টি দেশের খুদে ফুটবলারেরা অংশ নিয়েছিল এই উৎসবে। এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটা মাঠে বসে দেখার সুযোগও পেয়েছিল রাফি। পুরো ঘটনাটা তোমরা নাহয় তার মুখ থেকেই শোনো।



চোখ বুজলে এখনো চোখে ভাসে। হাজার হাজার মানুষ, কত রং, কত রকম ভাষা, কত রকম পোশাক! সবাই এসেছিল একটা ফুটবল ম্যাচ দেখতে। মাঠে খেলবে ২২ জন, তাঁদেরকে দেখতে কত আয়োজন! না দেখলে বিশ্বাস হয় না। আমার এখনো বিশ্বাস হতে চায় না, বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ম্যাচটা আমি গ্যালারিতে বসে দেখেছি।
এই সুযোগ পেয়েছিলাম ‘ফুটবল ফর ফ্রেন্ডশিপ’ নামের একটা প্রকল্পের মাধ্যমে। সংক্ষেপে বলা হয় এফ ফর এফ। ফিফা (সারা বিশ্বের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলোর একটা সম্মিলিত সংঘ) আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম এই নিয়ে ষষ্ঠবার উৎসবটির আয়োজন করল। এর উদ্দেশ্য হলো, সারা বিশ্বে আমার বয়সী যেই ফুটবলাররা আছে; তাদের কয়েকজনকে একসঙ্গে দেখা করার, খেলার, কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া। বাংলাদেশে ১২ বছরের কম বয়সী ফুটবলারদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে আমাকে নির্বাচিত করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। আমার সঙ্গে এ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে আরও একজন। নাম রাফাত শামস। সে সুযোগ পেয়েছে কিশোর সাংবাদিক হিসেবে।

জয়, পরাজয় আর ড্র—সবগুলো স্বাদই পাওয়া হয়ে গেছে। একটা ম্যাচে ৯-১ গোলে জিতলাম, একটা ২-২ গোলে ড্র, আরেকটা ৩-১ গোলে হার। মোট তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ ৬টা গোল করেছি আমি


এর আগে আমি কখনো প্লেনে চড়িনি। শাঁ করে প্লেনটা যখন আকাশে উঠে যায়, খুব মজা লাগে। ভ্রমণটা অবশ্য অনেক লম্বা ছিল। প্রথমে ঢাকা থেকে তুরস্ক, সেখান থেকে রাশিয়া। হেডফোনে গান শুনতে শুনতে দিব্যি সময়টা কেটে গেছে। ৮ জুন রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় মস্কোর একটা হোটেলে।
২১১টা দেশ থেকে আসা আমার বয়সী খেলোয়াড়দের ভাগ করা হয়েছিল অনেকগুলো দলে। একেক দলে ৭ জন করে খেলোয়াড়। আমার দলের নাম ‘গ্যালাপাগোস সি লায়ন’। চীন, সাইপ্রাস, লাইবেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের খেলোয়াড় ছিল আমার সতীর্থ। আমি ভালো ইংরেজি বলতে পারি না। ওরাও কেউ কেউ পারে না। আমাকে কথা বলতে সাহায্য করেছিল রাফাত।
ভাষা না বুঝলেও, আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল দ্রুত। সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে চীনের ইয়াং হুংয়ের সঙ্গে। ও আমার রুমে আসত, আমি ওর রুমে যেতাম। ইয়াং আমাকে চকলেট দিয়েছে। চকলেট পেলে যে বন্ধুত্ব হতে সময় লাগে না, সেটা তো তোমরা জানো!

অন্য দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে রাফি (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইট
অন্য দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে রাফি (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইট

৯ জুন এফ ফর এফ-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর শুরু হয়ে গেল খেলা। মোট তিনটি ম্যাচ খেলেছি আমরা। জয়, পরাজয় আর ড্র—সবগুলো স্বাদই পাওয়া হয়ে গেছে। একটা ম্যাচে ৯-১ গোলে জিতলাম, একটা ২-২ গোলে ড্র, আরেকটা ৩-১ গোলে হার। মোট ৩ ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ ৬টা গোল করেছি আমি।
খেলার চেয়ে ‘খেলা দেখা’টাই অবশ্য বেশি উপভোগ করেছি। আয়োজকেরা আমাদের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আর প্রথম ম্যাচটা দেখতে স্টেডিয়ামে নিয়ে গিয়েছিল। সৌদি আরব আর রাশিয়ার খেলা। টিভিতে দেখে বোঝা যায় না, কত বড় মাঠ! খেলোয়াড়দের দৌড়ের কী গতি! চোখের পলক পড়ছিল না আমার।
স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফেরার সময় আমরা দুটো করে দল এক বাসে উঠেছিলাম। আমাদের সবার হাতে হাতে দেওয়া হয়েছিল লাঠির মতো দেখতে এক রকম বেলুন। সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা বাড়ি দিলে আওয়াজ হয়। বাসের ভেতর লাঠিগুলো হাতে নিয়ে আমরা মিছেমিছি মারামারি করছিলাম। খুব মজা হয়েছে।
দেশে আসার পর সবাই এখন আমার কাছে রাশিয়ার গল্প শুনতে চায়। সব ঘটনা তো আমি গুছিয়ে বলতেও পারি না। এখন আমি মদনগঞ্জ ফুটবল একাডেমিতে খেলি। আমার প্রিয় খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বড় হয়ে আমি তাঁর মতো বড় খেলোয়াড় হতে চাই।
(অনুলিখিত)