কী রাঁধে লোকেরা ব্রিকলেনে

কী রাঁধে লোকেরা ব্রিকলেনে, সে কথা আমি অনেক ভেবেছি। সবই টেমসে আছেÑ টুনা, হেরিং, হ্যালিবুট, স্যামন কি এ্যানচোবি। তবু লোকেরা অ্যারোপ্লেন ভরে-ভরে কী বিশাল জলযানে করে ইলিশ, কই, পাবদা, রুই, ভেটকি, কাঁচকি, চিতল, কাতলা, শোল, বোয়াল-সব নিয়ে যায় হিথরো কি নর্দাম্বারল্যান্ড দিয়ে। মৃত সব মাছেরা মানুষের সঙ্গ ছাড়াই কেমন দেশবদল করে চলে। ব্রিকলেনের আলী ব্রাদার্সের সামনে দাঁড়িয়ে আমি এসব ভাবি। একটি জানলা দিয়ে লাফিয়ে-লাফিয়ে যায় ধোঁয়া কিশোরগঞ্জের কি ভৈরবের চ্যাঁপা’র অদ্ভুত ঘ্রাণ নিয়ে। হোয়াইটচ্যাপেল থেকে আসে সোনামুগ আর গোবিন্দভোগের মিশেল-ধোঁয়া। মিশে যায় বিলেতি হাওয়ায়। সবই তো বিদেশি ব্যাপারÑদূর থেকে দূরতরের। অথচ চ্যাপেলটার সামনে দাঁড়ানো আমাকে সেই ধোঁয়া নিয়ে যায় কোথায়! কোথাও জাল দিয়ে কেউ পুঁটি মাছ ধরে। ধরে খালে-বিলে-নদীতে। সামান্য অদৃশ্য ঘ্রাণের এমনই ক্ষমতা! আমি দেখি ব্রিকলেনের পিলারে-পিলারে লেগে থাকা সফেদ চূর্ণ। মুহূর্তে আমার মনে পড়ে যেতে থাকে পিতা-পিতামহ-প্রপিতামহদের কথা। সেই দীর্ঘ পিলারগুলো সব একেকটি মধ্যমা কি তর্জনী হয়ে জেগে ওঠে আর সেসবের প্রতিটি শীর্ষ বিন্দুতে লেগে থাকে শাদা চুন। আসলে কল্পনাকাতর আমি হয়তো এসব অকারণেই ভাবি। আমার ভাবনাকে সবেগে নাড়া দিতে থাকে অল্ডগেট ইস্টের প্রশস্ত দেয়াল-পোস্টার—‘এইডস্ আপনারও হতে পারে!’