জার্নালের ভগ্নাংশ

কাঁধে ছোট্ট ব্যাগ ঝুলিয়ে বাসে চেপে রোদে পুড়ে কনুইয়ের গুঁতো খেতে খেতে
গিয়ে পৌঁছলাম বিশ্রামরতদের পুনর্মিলনীতে। ‘সবচেয়ে প্রাজ্ঞ’ যে ভদ্রলোক,
তিনি মঞ্চে বসে নিজে থেকে কথা বলতে শুরু করলেন। এক কানে একটু খাটো
বলে আমি তেমন শুনতে পাচ্ছিলাম না। ভাবছিলাম কোথায় এলাম। নিজে
থেকে এলাম, না, কেউ ডেকে এনেছেন আমাকে? না, নিজে থেকে কেউ আসে
বুঝি! ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে চোখ ধরে এল। অন্যরা বেশ
মনোযোগ দিয়ে শুনলেন মিনিট বিশেক। তারপর নিজেরা নিজেরা কথা বলতে
লাগলেন দুজনে-তিনজনে। আমারও ইচ্ছা হলো তেমনটা করি যখন
আরও মিনিট দশেক সময় পার হলো। কিন্তু ততক্ষণে আমার বাঁ পাশের দুজন
ভদ্রলোক আমার ডান পাশের দুজন ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে গল্পে মেতেছেন।
আমি দুদিকেই মুখ ফেরাতে লাগলাম। কিন্তু আমি যে মাঝখানে আছি, তেমন
তাদের ঠাহর হচ্ছিল বলে মনে হচ্ছিল না। গল্প করার ইচ্ছা আমার কোনো দিনই
হতো না, কিন্তু আজ হচ্ছিল বলে খুব অবাক লাগল আমার। মানুষজনের মুখে খুব
হাসি। অনেক কৌতুকে ভরা। একবার এর দিকে আরেকবার ওর দিকে তাকিয়ে
হাসতে লাগলাম। ‘খেলায় নাও, খেলায় নাও আমাকে’-ছোটবেলার ঝোঁকে বলে
ফেললাম একবার একজনকে, তারপর অন্যজনকে। ছি, কী বলছি! ভাবলাম একবার।
না, এভাবেই ছেড়ে দেব নিজেকে? ভাবলাম আর একবার। না, ওরা ওদের নিয়েই
বিভোর। মঞ্চের মাঝখানের উঁচু চেয়ারে আসীন সবচেয়ে প্রাচীন প্রাজ্ঞের কথা থামছিল
না। ঘড়ি বেজে উঠল ঢং ঢং। তিন ঘণ্টা পার। অদূরে দেখি একটি টেবিল। তাতে চা-শিঙাড়া,
বিস্কুট, কমলা সাজানো। গিয়ে খেতে শুরু করে খাব কি খাব না ভাবতে লাগলাম।
তারপর উঠে দাঁড়ালাম। অদূরে একটি কুকুরকে দেখি আমারই মতো উঠে দাঁড়িয়েছে।
আমরা বাসস্টপের দিকে যেতে লাগলাম।