ক্যানভাসের ঘোড়াগুলো কি আমাদের দিকে ছুটে আসছে? জামাল আহমেদের প্রদর্শনীতে ঢুকেই মনে হলো কথাটা। ‘রেসিং স্টালিওন’ বা ‘ধাবমান ঘোড়া’ নামের এ প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় ক্যানভাসটি রাখা উত্তরের দেয়ালে—ঘোড়া গাঢ় অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা করছে। চার দশক ধরে বাস্তবধর্মী শিল্পকর্মের চর্চা করছেন জামাল আহমেদ। বাস্তবধর্মী মানুষ অথবা অন্য কোনো প্রাণীর অবয়ব গড়তে প্রথমেই বিষয়কে আত্মস্থ করে নেন তিনি। তারপর আলোছায়া আর বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেন ক্যানভাসে।
এবারের প্রদর্শনীতে তাঁর কাজগুলো একটু ভিন্ন ধরনের। দল বেঁধে কবুতরের উড়ে যাওয়া, খুঁটে খুঁটে খাবার খাওয়া—এ রকম অতি সাধারণ মুহূর্তের যেসব ছবি তিনি আগে এঁকেছেন, তা বারবারই আমাদের মুগ্ধ করে। শিল্পীর এই প্রদর্শনীতেও কবুতরের দলের দেখা মিলবে, তবে তা চারকোল মাধ্যমে।
নারীর অবয়ব জামাল গড়েন সাবলীলভাবে। ‘দ্য গার্ল উইথ পিজিয়ন’ বা ‘কবুতর হাতে মেয়েটি’ সিরিজের কথাই বলা যাক। এখানে আছে নারীমুখের চাহনি। মায়াবী আকুতির সঙ্গে কবুতরের স্থির অবস্থান আমাদের বিশেষভাবে ভাবায়। আবার ‘মা ও শিশু’ শিরোনামের কাজগুলো মনে করিয়ে দেয় গঁগ্যার তাহিতি দ্বীপে আঁকা ছবিগুলোর কথা।
গ্যালারি কায়ায় চলমান এ প্রদর্শনীতে তিন ধরনের কাজ দেখতে পাওয়া যাবে—কাঠপেনসিল, চারকোল ও প্যাস্টেল। এই তিন মাধ্যমে কোনো কোনো কাজে দ্রুতগতির রেখা ব্যবহার করা করেছে, কোনো কাজে শিল্পী ব্যবহার করেছেন গাঢ় রঙের কাগজের গায়ে কেবল উজ্জ্বল রঙের রেখা।
গ্যালারির দক্ষিণের দেয়ালে থাকা বুড়িগঙ্গা নদীর ছবিটি আমাদের সাম্প্রতিক পরিবেশদূষণ সম্পর্কে জানান দেয়। শিল্পচর্চার সহজপ্রাপ্য মাধ্যম হিসেবে চারকোল আর প্যাস্টেলকে মনে করা হলেও জামাল আহমেদের ক্যানভাস এই মাধ্যম দুটিকে অতি মূল্যবান মাধ্যম হিসেবে প্রকাশ করেছে। প্রদর্শনীর ছোট-বড় সব ছবিই দর্শকমনে নতুন করে শিল্পিত বোধ জাগিয়ে তুলবে। ১০ নভেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২৪ নভেম্বর।