গোলাপের নিচে নিহত

‘সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে’—কবিতায় তিনি বলেছিলেন এভাবেই। আবুল হাসানের পঙ্‌ক্তিমালা বাংলাদেশের আধুনিক কবিতায় যুক্ত করেছিল নতুন আবহ। ২৬ নভেম্বর ক্ষণজন্মা এই কবির মৃত্যুদিন। এ উপলক্ষে ছাপা হলো আবুল হাসানের অগ্রন্থিত একটি কবিতা। এই কবির মৃত্যুর পর তাঁর অগ্রন্থিত রচনা গ্রন্থিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কবি তারিক সুজাত। তিনি লিখেছেন সেই কাহিনি
আবুল হাসান (৪ আগস্ট ১৯৪৭—২৬ নভেম্বর ১৯৭৫)। প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
আবুল হাসান (৪ আগস্ট ১৯৪৭—২৬ নভেম্বর ১৯৭৫)। প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

‘এখন আবার ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরার দিন ঘনিয়ে এসেছে। ঘরে ফিরব, কিন্তু ঘরের যা অবস্থা, সেখানে থাকব কী করে! তার দরজা–জানালায় এখনো খুনের গন্ধ, তার খাটে রাজনীতির আবোল-তাবোল আবর্জনা।’ শ্রদ্ধেয় ঔপন্যাসিক শওকত ওসমানকে বার্লিন থেকে লেখা এক চিঠিতে আবুল হাসান এ উচ্চারণ করেছিলেন। ঘরে তিনি ফিরেছিলেন ঠিকই, তবে সেই ঘর অনন্তের। মাত্র আটাশ বছর বয়সে লোকান্তরিত হয়েছেন কবি আবুল হাসান।

প্রবল ঘোরের মধ্যে ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে কবি আবুল হাসানের অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত লেখার খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, শাহবাগের গণগ্রন্থাগার, কখনো বাংলা একাডেমি আবার কখনো দৈনিক অবজারভার-এর লাইব্রেরিতে পুরোনো পত্রিকার সাহিত্য পাতা থেকে আবুল হাসানের লেখা খুঁজে বের করাটা একসময় দুর্লভ বস্তু সংগ্রহে যে আনন্দ—সেরূপ হয়ে উঠল। এ কাজে সব সময় যে দুজন মানুষ আমাকে উৎসাহিত করেছেন, তাঁদের একজন কবি জাফর ওয়াজেদ, অন্যজন কবি ফখরুল ইসলাম। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার কাছেও অনেক পরামর্শ পেয়েছি। দেখতে দেখতে প্রায় তিনটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি হলো। আবুল হাসানের কাব্যনাটক ওরা কয়েকজন,আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা আবুল হাসান: গল্প সংগ্রহ।

ওরা কয়েকজন তাঁর একমাত্র কাব্যনাট্য। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তৎকালীন প্রযোজক কবি আবু জাফর সিদ্দিকীর অনুরোধে এই ছোট্ট কাব্যনাটক রচনা করেছিলেন আবুল হাসান ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়ে। অনেক অনুসন্ধান করেও নাটিকাটির মূল পাণ্ডুলিপি শেষ পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই সাপ্তাহিক বিচিত্রা২ ডিসেম্বর ১৯৭৫ সংখ্যায় কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ভূমিকাসহ প্রকাশিত রচনারূপকেই চূড়ান্ত ধরে নিয়ে নাটিকাটিকে গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছিল। এতে মুদ্রণ প্রমাদজনিত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। শব্দের অযাচিত ওলট–পালটের ফলে দু–একটি পঙ্‌ক্তির কোনো অর্থই দাঁড়াচ্ছিল না। সেক্ষেত্রে নিরুপায় হয়ে আমরা অনুমানের আশ্রয় নিয়েছি।

আমার জীবনের প্রথম ক্ষুদ্র একটি কবিতার বই থেকে শুরু করে প্রায় সব বইয়ের ভূমিকা পরম স্নেহে লিখে দিয়েছেন কবি বেলাল চৌধুরী। যত দিন সুস্থ ছিলেন, আমার কোনো আবদার তিনি অগ্রাহ্য করেননি। ওরা কয়েকজন-এর জন্য ছোট একটি ভূমিকা লিখতে যখন অনুরোধ করলাম, এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না। তাঁর লেখা থেকে একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি: ‘কয়েকজন তরুণ তরুণী, সচরাচর যে রকম অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে উপস্থিত হয়েছে একটি রেল ইস্টিশানের ওয়েটিং রুমে। একেকজনের একেক রকম স্বগত চিন্তা। স্বপ্ন আর বাস্তবে মেশানো।

ট্রেনের দেরি। আবার যে ট্রেন আসছে, সেটাও অন্য ট্রেন। স্বভাবতই ওদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। ওদের স্বপ্নগুলি আরও প্রখর হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে বাড়ছে–কমছে উত্তেজনা। আলাপচারিতা হয়ে উঠছে নিবিড়ঘন। কখনো বিষণ্নতা এসে একজনের ঘাড়ের ওপর ছায়া ফেলছে দীর্ঘতর। সংক্রমিত হচ্ছে অন্যরাও।

কখনো স্মৃতি, বিষাদ, স্বপ্ন, শহর, গ্রাম, সুদূর মফস্বল, পাহাড় রৌদ্র–ছায়ার খেলায় মেতে উঠছে। ক্রমশ উজ্জ্বল হতে হতে সমান্তরালে ভেসে ওঠে আরেক যুবক, যে প্রেমিক, যে রাতের গহ্বরে নিমজ্জিত হওয়ার মুখে শুনতে পায় ঘোড়ার গাড়ির শব্দ একবার এগিয়ে আসছে, আবার মিলিয়ে যাচ্ছে...মেতে ওঠে লুকোচুরি খেলায়। বাতাসে ভর দিয়ে আসে আগের দেখা দ্বিতীয় তরুণ। শুধোয় নানা প্রশ্ন অভিযোগের সুরে। শুরু হয় দুজনের মধ্যে কথোপকথন, শহরের বন্দনা।’

আবুল হাসানের মৃত্যুর প্রায় পনেরো বছর পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, সাময়িকীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর নয়টি গল্প নিয়ে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হলো। প্রকৃতপক্ষে সম্পাদক হিসেবে আমার নাম থাকলেও, বহুজনের সক্রিয় সহযোগিতা ও পরামর্শ ছাড়া কাজটি সম্পাদন করা সম্ভব হতো না। এ বইয়ের ভূমিকাও ছিল বেলাল চৌধুরীর লেখা। সেখান থেকে একটি অংশ উদ্ধৃত করছি: ‘ঝোড়ো পাখির মতো জীবন ছিল তাঁর, কবি আবুল হাসানের। স্বল্পদৈর্ঘ্যের জীবনে শুধু খড়কুটো সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত থাকেননি তিনি। নিরাপদ নীড় বাঁধার স্বপ্ন তাঁর অপূর্ণ থেকে গেলেও রাশি রাশি পদ্যের ফসল যেমন তুলেছেন, তেমনই সমান তালে গদ্যেও কাজ করে গেছেন অজস্র, যেগুলো মণিমুক্তোর মতোই দুর্লভ ও মূল্যবান, বর্ণময় হীরকদ্যুতিতে উজ্জ্বল। দুঃখ হয়, বড় অকালে চলে গেলেন আবুল হাসান।

স্থির হয়ে কোথাও বসার লোক ছিলেন না হাসান। মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতেন বন্ধুবান্ধব পরিবৃত হয়ে। তাঁর স্বভাবের মধ্যেই একধরনের উড়নচণ্ডী অস্থিরতা বিদ্যমান ছিল। এ ফুল থেকে ও ফুলে, এ ডাল থেকে ও ডালে। কখনো মগডালে বসে থাকা উপনিষদের দ্বিতীয় পাখি, যে কোনো কাজ করে না, শুধু চেয়ে চেয়ে দ্যাখে। পর্যবেক্ষণরত।...

এই গ্রন্থে সংকলিত গল্পগুলি যে একজন আপাদমস্তক কবির লেখা, সেটা সহজেই টের পাওয়া যায় হাসানের ভাষাশৈলীতে, চরিত্রের বিন্যাসে, গল্পের ঠাসবুনটে। অধিকাংশ গল্পই আত্মজৈবনিক। ভেতরে ভেতরে একটা অন্তর্লীন ফল্গুধারা বহে চলেছে কুলকুল করে। বিষয়বস্তুর মধ্যেও কবিতার প্রভাব প্রবলভাবে। প্রেম–অপ্রেম, দেশকাল, সমকালীন জীবনের অস্থৈর্য, আশা–হতাশা সবকিছুরই সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে প্রতিটি গল্পে। নতুন আলো ফেলা চোখে গভীর তন্ময়তার সঙ্গে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণকে নিয়ে এসেছেন পাতার পর পাতায়। নিজেকে বারংবার ভেঙেছেন, গড়েছেন আশ্চর্য নৈপুণ্যের সঙ্গে। এগুলোকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা সাবান ফেনার বুদ্বুদকে অস্ত্রোপচার করার মতোই নিরর্থক।’

ওরা কয়েকজন প্রকাশিত হওয়ার পর কাব্যপ্রেমীদের মধ্যে বিপুল সাড়া দেখে নাটকটি মঞ্চস্থ করার আগ্রহ তৈরি হলো। শুরু হয়ে গেল এর কাজ। শামসুন্নাহার হলে রেবু আপা-পীযুষদার ফ্ল্যাট হয়ে উঠল আমাদের রিহার্সেলের স্থান। বাড়িটি ছিল সে সময় সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের বড় আশ্রয়ের স্থল। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা এ বাড়ির দরজা তরুণ কবি, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য অবারিত ছিল। আমার প্রিয় অগ্রজ শিল্পী ইউসুফ হাসান বলামাত্র একটি পোস্টারের ডিজাইন করে দিলেন। আবুল হাসানের জন্মোৎসব উপলক্ষে ২৫ আগস্ট ১৯৮৮ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায় নাটকটি মঞ্চস্থ হলো। যাঁরা অভিনয় করলেন, তাঁরা এবং যাঁরা শ্রোতা ছিলেন তাঁরা একই সমতলে দাঁড়িয়ে-বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো নাটকটির রহস্যনগরীর পথে পথে পরিভ্রমণ করলেন। সেদিন আমরা সমবেতভাবে একজন কবির প্রতি আমাদের ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করলাম।তখনো এই প্রশ্ন মনে জাগত, আবুল হাসানের এই লেখাগুলো প্রকাশের জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে হলো কেন? তিনি যে একটি কলাম লিখতেন—‘খোলা শব্দে কেনাকাটা’—সেই লেখাগুলো এখনো পর্যন্ত গ্রন্থাবদ্ধ হয়নি।সম্প্রতি জার্মান ভাষায় লিখিত তাঁর শিল্পী বন্ধুর একটি স্মৃতিচারণধর্মী বইয়ের সন্ধান পেয়েছি। লেখা-ছবিতে সমৃদ্ধ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটি দেখার সৌভাগ্য আমার হলেও এখনো প্রকাশের অনুমোদন পাইনি। সেই বইটি প্রকাশিত হলে কবি আবুল হাসানের চিকিৎসাকালীন প্রবাস জীবনের অকথিত একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হবে। সেই সুদিনের প্রত্যাশায় আছি।

নতুন বই, বিদেশি নতুন কবিতা পাঠের ব্যাপারে আবুল হাসান ছিলেন রীতিমতো একজন আগ্রাসী পাঠক। আমার বাবা কবি, ভাষাসংগ্রামী তোফাজ্জল হোসেন আবুল হাসানকে নিয়ে একদিন একটি ঘটনার কথা বলেছিলেন। স্বাধীনতার পর তৎকালীন বাংলাদেশ পরিষদের তখন তিনি পরিচালক। ঢাকা প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে একটি সমৃদ্ধ বিশাল লাইব্রেরিসহ এই অফিসের অবস্থান ছিল। একদিন হঠাৎ লাইব্রেরির সিঁড়িতে শোরগোল শুনে তিনি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ঘটনার বৃত্তান্ত শুনলেন। বইপ্রেমী তরুণ কবি আবুল হাসানের নাম ও কবিতার সঙ্গে ইতিমধ্যে তিনি পরিচিত। যখন শুনলেন সদ্য লাইব্রেরিতে আসা একটি নতুন কবিতার বই আবুল হাসান নেবেই নেবে, যদিও এভাবে নেওয়ার বিধান সেখানে ছিল না, তাই লাইব্রেরি কর্মীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল, তিনি তখন পরম স্নেহে আবুল হাসানকে তাঁর ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। এরপর চা সহযোগে আপ্যায়ন করে বললেন, ‘আমি তোমার লেখা ও নামের সঙ্গে পরিচিত, তুমি ভালো লেখো। এরপর থেকে যখন কোনো বই তোমার পড়ার জন্য পছন্দ হবে, তুমি সরাসরি আমার কাছে চলে এসো।’ এভাবে পিতৃস্নেহে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন কবিকে।

‘গোলাপের নিচে নিহত হে কবি কিশোর’... সেই সুদূর বেলায় যে প্রগাঢ় আহ্বানে সব যন্ত্রণাকে তুচ্ছ করে আমরা যেমন কবিতার কাছে সমর্পিত হয়েছিলাম, যুগে যুগে কবিতাপথের নবীন যাত্রীরা তাঁর বিরহী বাঁশির সুরে চেনা পথ ছেড়ে নতুন আলো ফেলা অপ্রতিরোধ্য এই কবিতার পথেই হাঁটবে, যত কষ্টেরই হোক এই পথ । জয়তু আবুল হাসান।

আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা

আমার হৃদয়ে, আশেপাশে

পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এল বাণীবাহকেরা:

কঞ্চির মতন দিল গেড়ে বুকে

                             বলীয়ান যে সংবাদ তাতে,

        মনে হলো, মৃত, তারা মৃত;

        মরে গেছে ফল্গু পাখি,

        আমার দেশের ঝিঁঝি, জিহ্বার তরঙ্গ ঢেউ

আকুল আঘ্রাণ!

 

সত্যিই কি মৃত তারা?

        সত্যবাহকেরা এল অতঃপর শার্টে গুঁজে

        নবঘন শ্যাম ঘুঘু, দোয়েল, শালিক।

        মুখে ভরা হর্ষোজ্জ্বল হাসিগুলি তাদের সবার

বসন্তের বর্ণচোরা

কোকিলের কাছে কান নুইয়ে দিয়ে

        যখন সাঁতার দিল বাংলার সমস্ত সীমায়—

 

ছাতকের কমলাবাগান থেকে,

খাসিয়ার পাহাড়ের পাদদেশ থেকে

হাওয়া এসে তখনই সে আমাদের

গ্রামের চিকন ভোরে ঝিঁঝির ঝঙ্কার ঝাঁট দিয়ে

‘আবুল হাসান আছ’ আবুল হাসান—

                                ডাকলেন আমাকেই, আর

তখন সে মিথ্যা মৃত্যু থেকে

অতুলন ঝিঁঝি জিহ্বা, ফল্গু পাখি উঠে এলে আমার নিজস্ব ঘরে

দেখলুম: সত্যিই তো, মৃত নয় তারা—

বরং বাংলার সে প্রিয়তম সবার সচ্ছল অনুভূতি

                             আশরীরে আগলিয়ে আজও

তাহারা দাঁড়িয়ে আছে, আমার হৃদয়ে, আশেপাশে।

 

.......

‘আমার হৃদয়ে, আশেপাশে’ শিরোনামে আবুল হাসানের অগ্রন্থিত এই কবিতার সংগ্রাহক কবি তারিক সুজাত। বর্তমানে তোফায়েল আহমেদ স্থাপিত স্বাধীনতা জাদুঘর, ভোলার ডিজাইনের কাজ করছে তিনি। ওই কাজ করতে গিয়ে ১৯৬৮-৬৯ সালের পত্রপত্রিকা ঘাঁটতে হচ্ছে তাঁকে। সেই সূত্রেই কবিতাটি তিনি উদ্ধার করেছেন। কবিতাটি প্রথমে ছাপা হয়েছিল দৈনিক পূর্বদেশ–এর সাহিত্য সাময়িকীতে, ২ মার্চ ১৯৬৯ সালে (১৮ ফাল্গুন ১৩৭৫)।

এখান ছাপার সময় এ কবিতায় সমকালীন বানানরীতি ব্যবহার করা হয়েছে।

আবুল হাসানের কাব্যনাটক  ওরা কয়েকজন
আবুল হাসানের কাব্যনাটক ওরা কয়েকজন

জানা–অজানা আবুল হাসান

l আবুল হাসানের জন্ম ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার বর্ণি গ্রামের মাতুলালয়ে। পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে।

l তাঁর বাবার নাম আলতাফ হোসেন মিয়া। তিনি ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার।

l আবুল হাসানের সার্টিফিকেট নাম আবুল হোসেন মিয়া। তবে লেখালেখির প্রারম্ভে সাহিত্যিক নাম হিসেবে বেছে নেন ‘আবুল হাসান’।

l তিনি ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক, বরিশাল বিএম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ না করেই ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাক–এরবার্তা বিভাগে যোগ দেন। পরেপর্যায়ক্রমে গণ বাংলা জনপদ পত্রিকায় যোগ দেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে।

l ১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হন আবুল হাসান।

l মুক্তিযুদ্ধের পর আবুল হাসান ও সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী মিলে বের করেছিলেন একটি ছোটকাগজ। নাম ছিল কাক।

l কবিতা লিখেছিলেন মাত্র ১০ বছর। প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাজা যায় রাজা আসে (১৯৭২) বাবা–মাকে, দ্বিতীয় কবিতার বই যে তুমি হরণ কর (১৯৭৪) বন্ধুকবি নির্মলেন্দু গুণকে এবং তৃতীয় ও জীবদ্দশায় শেষ কবিতার বই পৃথক পালঙ্ক (১৯৭৫) প্রেমিকা সুরাইয়া খানমকে উৎসর্গ করেন।

l হৃদ্‌যন্ত্রের বৃদ্ধিজনিত কারণে ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র ২৮ বছর বয়সে সেই সময়ের পিজি হাসপাতালে এই কবির মৃত্যু হয়।

l কবিতা ছাড়াও কিছু গল্প ও কাব্যনাটক লিখেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় একমাত্র কাব্যনাটক ওরা কয়েকজন (১৯৮৮) ও আবুল হাসান গল্প-সংগ্রহ (১৯৯০)। এ ছাড়া মৃত্যুর পরে তাঁর কবিতাসমগ্র বের হয়। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন শামসুর রাহমান।

গ্রন্থনা: রোজেন হাসান