নির্বাসনের গল্প

এক্সাইল স্টোরি–১, শিল্পী: সজীব সেন। প্রদর্শনীটি চলছে কলাকেন্দ্রে
এক্সাইল স্টোরি–১, শিল্পী: সজীব সেন। প্রদর্শনীটি চলছে কলাকেন্দ্রে

অসংখ্য কাঁটাযুক্ত বৃত্ত থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসছে বিরাট আকৃতির মানুষ। মানবসমাজের কারণেই এগিয়েছে সভ্যতা, আবার মানুষই সভ্যতার বিনাশকারী। পুঁজির বিকাশ ও ধনতন্ত্রের আগ্রাসন পৃথিবীকে এখন দিয়েছে আরেক সভ্যতা। সজীব সেনের শিল্পকর্মগুলো এসব গল্পই বলে। সঙ্গে সঙ্গে এ–ও জানান দেয় যে বর্তমানে চলছে মানুষে মানুষে সংঘাত; এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলছে মানুষের স্থানান্তর প্রক্রিয়া। সব মিলিয়ে ছবিগুলো যেন মানুষের নির্বাসনের গল্পই বলে।

প্রচলিত সমাজভাবনায় সজীব মন নেই সজীবের। তাই ‘এক্সাইল স্টোরি’ শিরোনামে কলাকেন্দ্রে চলমান তাঁর প্রদর্শনীর ১২টি কাজের মধ্যে দেখা মেলে প্রথাগত শিল্পের বাইরে দাঁড়িয়ে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা, দেখা মেলে নিরীক্ষার।

এক্সাইল স্টোরি–২
এক্সাইল স্টোরি–২

সজীব কাজ করেছেন রং, ক্যানভাস, প্লাস্টিক শিট, সুই-সুতা, কাগজ, প্লাস্টিকের সরু পাইপ, বিভিন্ন রংয়ের সিগনেচার পেনের মাধ্যমে। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রেখেছেন বৈশ্বিক অবস্থা ও বাংলাদেশের সমকালীন সমাজ।

আগেই বলেছি, এই শিল্পীর কাজে মানুষগুলো ছুটে বেরিয়ে আসতে চায় কাঁটাযুক্ত বৃত্তাবস্থা থেকে। সিরিজচিত্র ‘এক্সাইল স্টোরি’র ১, ২, ও ৩ নম্বর কাজে লাল-কালোর ব্যবহারে স্পষ্ট হয়েছে সামাজিক উদ্বিগ্ন অবস্থা। ২ নম্বর ছবির বিভিন্ন অংশে দেখা যায়, মানুষের সারি সারি ছুটে চলা আর মোটরগাড়ির সীমাহীন জটলা যেন আমাদের নিত্যদিনের চিত্রই প্রকাশ করেছে।

এক্সাইল স্টোরি
এক্সাইল স্টোরি

ছবিতে মানুষকে বিশেষ স্থানে জায়গা করে দেননি সজীব, কেবল মানুষের অভিব্যক্তিকে তিনি স্থাপন করেছেন ছবির মূল কেন্দ্রে। এ ক্ষেত্রে নান্দনিকতাকে খানিকটা দূরে রেখেই গড়েছেন শিল্পকর্ম। প্রযুক্তির ব্যবহার যে এখন মানুষের সম্পর্ককে অনেকটা ঢিলেঢালা করে দিয়েছে, কাজের মধ্যে আছে তার উদ্ভাস। মোদ্দাকথা, চারপাশের অস্থিরতাকে ছবিতে উন্মোচন করেছেন সজীব। অনেক অনেক অস্থিরতার ভিড়ে শেষাবধি মানুষের বেঁচে থাকার অভিব্যক্তিকেই ধরতে চেয়েছেন সাবলীলভাবে। প্রতিটি কাজের মধ্যেই তিনি বলতে চেয়েছেন মানুষের নির্বাসনের গল্প।

কলাকেন্দ্রে ১৭ নভেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ১৫ ডিসেম্বর।