নবীন ছাপচিত্রীদের শৈলী অন্বেষণ

‘ফ্লাবো টমাস’ ছবির জন্য নাসরীন জাহান পেয়েছেন প্রথম পুরস্কার‘ফ্লাবো টমাস’ ছবির জন্য নাসরীন জাহান পেয়েছেন প্রথম পুরস্কার
‘ফ্লাবো টমাস’ ছবির জন্য নাসরীন জাহান পেয়েছেন প্রথম পুরস্কার‘ফ্লাবো টমাস’ ছবির জন্য নাসরীন জাহান পেয়েছেন প্রথম পুরস্কার

‘ফ্লাবো টমাস’ শিল্পীর আদুরে বিড়ালের নাম। ওমসন্ধানী গৃহপালিত এই প্রাণীর আয়েশি ঘুম, নান্দনিক শারীরিক ভঙ্গি নিত্যদিনের পর্যবেক্ষণসূত্রে উঠে এসেছে একটি ছাপচিত্রে। রেখার চলন, মাধ্যমের রসায়ন, স্পেস-প্রধান বিন্যাস ও সরলীকরণের গুণবৈশিষ্ট্যে নিশ্চয়ই বিচারকমণ্ডলী মুগ্ধ হয়েছেন। আর তাই তো ‘ফ্লাবো টমাস’ শিরোনামের ছাপচিত্রে নাসরীন জাহান পেয়েছেন ‘কিবরিয়া নবীন ছাপচিত্রী পুরস্কার-২০১৮’। ড্রাইপয়েন্ট ও প্লানোগ্রাফির মিশ্র মাধ্যমে করা প্রদর্শিত দুটো কাজই করা হয়েছে বিড়ালের শারীরিক ভঙ্গিকে ব্যবহার করে। কলাকেন্দ্রে ২১ ডিসেম্বর শুরু হয়ে এই প্রদর্শনীটি চলেছে ৫ জানুয়ারি অব্দি।

বরেণ্য চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার নামে প্রদত্ত এই ‘কিবরিয়া নবীন ছাপচিত্রী পুরস্কার’ দেওয়া হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। গেল ২০১৮ সালে প্রথম হয়ে এ পুরস্কার পেয়েছেন নাসরীন জাহান। আর দ্বিতীয় হয়েছেন সৌরভ চৌধুরী, তাঁর ‘চিরন্তন অস্তিত্ব-৪৬’ ছবির জন্য। এই ছবিতে বৃত্তাকার বন্ধনীর স্তরে স্তরে বিন্যস্ত হয়েছে গুহাচিত্র থেকে শুরু করে পৃথিবীর একাধিক সভ্যতা ও শিল্পকলার মোটিফ, প্রতীক যা বিশ্বসভ্যতার প্রতিনিধিত্ব যেমন করছে, তেমনি গৌরবময় উজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধ্বনি তুলছে। আর এর সঙ্গে সৌরভ মিলিয়ে দেখেছেন, বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্যের মোটিফগুলোকে। আমাদের অতীত ঐতিহ্য, পৌরাণিক বিশ্বাসের সাংকেতিক ভাষা এবং সমকালের লোকজ শিল্প-উপাদানের চিরন্তন অস্তিত্ব আরও সাবলীল হয়েছে বর্ণালি রঙের আভায়।

দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সৌরভ চৌধুরী ‘চিরন্তন অস্তিত্ব’-এর জন্য
দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সৌরভ চৌধুরী ‘চিরন্তন অস্তিত্ব’-এর জন্য

তৃতীয় পুরস্কারের ক্ষেত্রে বাস্তবানুগ অনুশীলনধর্মী দক্ষতা ও শিল্পীর কসরতের বিষয়ই ছিল মুখ্য। তবুও রফিকুল ইসলামের ‘রূপান্তর’ শিরোনামের ছবিটির ইঙ্গিত ধরে যান্ত্রিক শক্তি ও বৈজ্ঞানিক অবদানের প্রসঙ্গটি ধরে নেওয়া যায়।

অনান্য শিল্পীর মধ্যে ফারিয়া রহমান তাঁর ‘সমাজতন্ত্র-১’ শিরোনামের কাজে সেকাল ও একালের সামাজিক ও রাজনৈতিক মৌলিক নীতিকে দাবার ছকে বাঁধতে চেয়েছেন। তাঁর ভাষ্যে অতীত ও বর্তমানের ক্ষমতা দখলের রাজনীতির মূলনীতি এক ও অভিন্ন। মশিউর রহমান তাঁর চিত্রে মুখমণ্ডলে হলুদ আলো ফেলে ‘আলোর আনন্দ’ নাম দিয়েছেন। মশিউর ও ফারিয়া দুজনেই পুরস্কার পেলেও তাঁদের শিল্পভাষায় বিশেষ রেখাপাত ধরা পড়ে না।

‘রূপান্তর-২’ ছবিটি রফিকুল ইসলামকে এনে দিয়েছে তৃতীয় পুরস্কার
‘রূপান্তর-২’ ছবিটি রফিকুল ইসলামকে এনে দিয়েছে তৃতীয় পুরস্কার

কলাকেন্দ্রে প্রদর্শিত ‘কিবরিয়া নবীন ছাপচিত্রী পুরস্কার ও প্রদর্শনী’ শিরোনামের এ আয়োজনে ১৭ জন নবীন ছাপচিত্রীর ২৭টি শিল্পকর্মে ছিল বিভিন্ন রকম অন্বেষণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সুবর্ণা মোর্শেদের নকশাধর্মী কম্পোজিশন ‘সুখ পাখি’। এটিকে নিছক নকশা হিসেবেও দেখা যেতে পারে। এখানে একটি কথা বলতেই হবে, অনেক শিল্পীর কাজেই বস্তু-উপকরণের বহিরঙ্গের রূপ প্রকাশ ছিল চোখে পড়ার মতো।

এই ছাপচিত্র প্রদর্শনীতে নির্বাচিতদের কেউ কেউ শিক্ষানবিশ, কেউ কেউ সদ্য শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন। ফলে তাঁদের কাজে প্রকৃতি দেখার মধ্য দিয়ে ভাষা তৈরি ও নিজের শৈলী তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট। নবীন ছাপচিত্রীদের জন্য ‘কিবরিয়া ছাপচিত্র স্টুডিও’র এই উদ্যোগ ও স্বীকৃতি শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশে ভূমিকা রাখবে।

কোথায় কোন প্রদর্শনী

● ইফফাত আরা দেওয়ানের একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘চাঁদের এত আলো’

শিল্পাঙ্গন গ্যালারি (বাড়ি: ২/১, ব্লক–ডি, লালমাটিয়া, ঢাকা)

১৫ থেকে ২৮ জানুয়ারি

● সমীর দত্তের আলোকচিত্র প্রদর্শনী

কলাকেন্দ্র (১/১১ ইকবাল রোড, চতুর্থ তলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা)

১১ থেকে ৩০ জানুয়ারি

● ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টুডিয়োর শিল্পীদের প্রদর্শনী ‘গুরু–শিষ্য: শিষ্য–গুরু’

লা গ্যালারি (আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, ধানমন্ডি, ঢাকা)

১৮ থেকে ১ ফ্রেব্রুয়ারি

● তানভীর তপুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী

জয়নুল গ্যালারি (চারুকলা অনুষদ, শাহবাগ, ঢাকা)

১৭ থেকে ২৩ জানুয়ারি