কবিতা

তুষার দাশ

একদিন

একদিন ব্রহ্মাস্ত্র পেলে মুখোমুখি তোমাদের দাঁড়াব আবার!

এখন সকল অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে, হন্তারক ইচ্ছেরা উধাও—

নখরে তুলব মাটি, চারাগাছ রুয়ে দেব দক্ষিণের বারান্দার সব কটি দূরত্ব যোজনে,

হাহাকারে সায় নেই, কর্মের এমন জটিল কোলাহলে

মনের ভেতরে যত বৃষ্টিপাত-সম্ভাবনা ছিল—তার একটুকু নেই;

অজস্র জলের পিপে শূন্য হয়ে উল্টে আছে নিখাদ অরণ্য অন্ধকারে—

যে জলে অস্ত্রেরা ওঠে ফুঁসে,

অভিনিবেশের কালে তারা আজ শত্রুতার সব চিহ্ন মুছে দিতে চায়,

গৌরবের সবটুকু, লুণ্ঠনের করাল গ্রাসের নিচে মাথা কুটে মরে—

সাবলীল জ্যোৎস্নায় যতটুকু দেখা যায়, তার সব কালো আর কুৎসিত, জঘন্য এঁটেল—

কথা বলো সম্ভাবনা—কথা বলো অকৃত্রিম আলোর ফোয়ারা—

মানুষের কাছে গেলে তোমাকেও যত দূর নেমে যেতে হয়—নুয়ে পড়তে হয়,

বিকিয়ে দিতেই হয় লাউডগা, পুঁইমাচা, খিলানের যত কারুকাজ—

ততটা নিমগ্ন আর গানহীন হয়ে উঠতে পারা, শয়তানের পক্ষেই সম্ভব,

তুমি কি তোমার দ্যুতি খুলে দেবে এইবার—

নাকি পুরোনো বিশাল বৃক্ষ থেকে একটানে খুলে নেবে লুকানো অস্ত্রের গাঁট,

তোমার ব্রহ্মাস্ত্র আর শৌর্যবীর্যচূড়া সঙ্গে শঙ্খধ্বনিময় বজ্রঘোষ!

একদিন মুখোমুখি দাঁড়ালে তোমার ব্রহ্মাস্ত্র ঠিকই আমি পেয়ে যাব জেনো।

হেনরী স্বপন

ফসলের মুমূর্ষু জীবন

ঘুমন্ত রুটির মতো এইমাত্র ফুলে উঠলাম;

এতক্ষণ সব সকাল ফুরিয়ে গেছে

তেলছাড়া পরোটার মতো বিক্রি হচ্ছে

সকালের তাপ...

পাখিরা ভোরের গান খুলে ফেলছে গরম পোশাকের মতো

উলের নরম খড় ছড়ানো হলুদ শর্ষের ক্ষেত

মাঠের উনুন জ্বেলে শান্ত হচ্ছে;

পাকা ধানের সৌন্দর্য ফেলে রেখে যাওয়া

ফসলের মুমূর্ষু জীবন...

অশ্রু ও রোদন বেয়ে ঝরা শিশিরের মন ।

তুষার কবির

জঙ্গলে

জঙ্গলের তৃণপথে হেঁটে যাই বিকেলের শেষ রোদে। পুরোনো ছাতিম গাছে নিকেল ঘণ্টির সাইকেল খানিক হেলান দিয়ে রেখে আমি হেঁটে যাই জেগে ওঠা ঘাসের জঙ্গলে। কোত্থেকে যেনবা ভেসে আসে শুধু ময়ূরীর মনোলগ—তার মৃদু পাখসাটে মৃদঙ্গ বাজে ধীর লয়ে! কোথাওবা সুর ওঠে দরবার-ই-কানাড়ার; কান পেতে আমি শুনে যাই বাগ্​দেবীর কড়া নাড়া! জঙ্গলের কিছুটা ভেতরে গিয়ে দেখি এক ঘুমঘোর সরোবর—যার ছেঁড়া ছেঁড়া পদ্মের কোরকে বেজে ওঠে দূরের সরোদ! টোপাজ পাথর জ্বলে চকমকি রোদে—ফুঁসে ওঠা সাপের ফণার নিচে; তার জ্যোতির দ্যুতিতে আমি মিশে যেতে থাকি হাওয়া ও হরিদ্রায়! এ জঙ্গলেই আমি লিখে যাচ্ছি দ্যাখো ধূলিতে মোড়ানো প্রেমগাথা, রক্তের হরফে লেখা ভাঁজপত্র আর ছড়ানো পথের নোটবুক!

শাফিনূর শাফিন

সিন্দুক

কোথাও যেতে চাই

আলীকদম কিংবা এসব ফেলে

আরেকটু দূরে পাহাড়ের গা ঘেঁষে

দাঁড়িয়ে পড়া বোবা কোন রাস্তার মাথায়।

কোথাও থামতে পারছি না

কোথাও ফিরতেও না

স্মৃত–বিস্মৃত শিসগুলো

লুকিয়ে আছে চন্দন কাঠের

গোলাপ-পাতা নকশা কাটা

সিন্দুকে।

ডালা খুললেই বেরিয়ে আসবে প্রেম—

তীক্ষ্ণ দাঁত আর চেরা জিহ্বা বের করে।