এই সময়ের পদাবলি
ইমরান মাঝি
জীবন কি এই ঘরের ভেতর শিশির ধরে রাখা
টাপুর-টুপুর শিশির পড়ে। শিশির পড়ার শব্দে ঘরে...যাচ্ছে না তো থাকা। জীবন কি এই ঘরের ভেতর শিশির ধরে রাখা। জীবন কি এই খেলনা নাকি বিলের মধ্যে ধোঁয়া। দৃশ্য ছোঁয়া। শিশির যেন চাদর। ঘরের মধ্যে সোনা–রুপার জল ছিটিয়ে দিচ্ছে জামাই আদর।
জীবন কি এই শিশির দেখা বসে বসে মাঠে। আমি যেন অর্জুন গাছ শান বাঁধানো ঘাটে। জীবন কি এই ঘাটের বধূ চাল ধুয়ে যায় বাড়ি। পুকুর পাড়ে ভাঙা চারি। চারির ভেতর জল। জীবন কি এই ঘরের ভেতর ইঁদুর মারা কল।
আমি তো এই মাঠকে চিনি, চিনি পাশের ঘর। বিশাল মাঠে বাড়ি যেন নদীর মাঝে চর। চরে বসে ঘরে বসে শিশির পতন শুনি। পতনরত শব্দ গুনি। এই কি আমার জীবন। শিশির ভেজা ঘরের মধ্যে আটকে গেছে মন।
হিজল জোবায়ের
বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টি
বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টি—অব্যাহত বৃষ্টিপতনের নিচে ভিজে যাচ্ছে মিলিটারিদের মাঠ ও জঙ্গল।
আমি এক জলপাইরঙা কামান তার ভেতরে বসে ভাবছি বিস্ফোরকের নন্দন—ভাবছি বিস্ফোরিত একটি গ্রেনেড সময়ের বিরুদ্ধে নিজের ভেতরে পুনরায় কেন্দ্রীভূত করছে গতি আর বিস্ফোরক, ফেটে পড়ার আগমুহূর্তের মতন ঘন, সন্নিবদ্ধ।
ব্যারাকের ওপাশে বৃষ্টিতে যেন সন্ত্রস্ত, ফলে ঘন আর নিজেদের ভেতর গুটিসুটি হয়ে আছে লতাগুল্মের ঝাড়—পূর্বেকার যেকোনো সময়ের চেয়ে অন্ধকার ওগুলো—ভেসে আসছে সুর, এই বৃষ্টিতে ভেজা বারুদের স্তূপের ওপর বসে মাতৃভূমির গান গাইছে এক সৈনিক।
মাঠের ঘাসগুলো ছেঁটে ফেলা হয়েছে পরিমাপমতো, শৃঙ্খলার বাইরে ওদের বাড়তে দেওয়া হবে না।
সেই মাঠে সারিবদ্ধ নেমে আসছে বৃষ্টি—ভেসে আসছে গান—অন্তর্বাসের ভেতর গোপনীয়তার মতন আমি এক জলপাইরঙা কামান তার ভেতরে বসে আছি—সার সার সৈন্যের মতন মাঝে মাঝে আমার সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, যেনবা প্যারেডের শব্দে...
পিয়াস মজিদ
শুভ নববর্ষ
গত বছরের চোখ দিয়ে দেখছি
নতুন বছরের শহর।
কুয়াশার ক্যারাভানে
শীত এসে গেছে,
৩১ ডিসেম্বরের খেত থেকে
শাক-সবজি এসেছে
১ জানুয়ারির বাজারে;
বিগত যত খাদ্যপ্রাণ ও পুষ্টিতে
সজীব-সবুজ থাকছে আমাদের
শরীর-বর্তমান।
আমি আমার শরীরে
ঋণের বোঝা আর সঞ্চয়ের সুখ
প্রেম ও পানির বিল
বিরহ ও বিদ্যুৎ বিল
এফবি, হোয়াটসআপ,
ভাইবারের ভারসমেত
খোলা রাস্তায় এসে দাঁড়াই।
আমার গায়ে এসে লাগে
হিম হাওয়ার হল্কা;
টের পাই,
নতুন বছরের আনকোরা বাতাসের কাছে
আমার শরীর একটা শত বছরের জঞ্জাল।