গণজোয়ারের মহা আখ্যান

এই পথে আলো জ্বেলে আনিসুল হক
এই পথে আলো জ্বেলে আনিসুল হক

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের নতুন উপন্যাস এই পথে আলো জ্বেলে। প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।

১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ সাল সময়পরিসরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মাটিতে চলমান রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এ উপন্যাসের কাহিনি। লেখকের যারা ভোর এনেছিল, উষার দুয়ারে, আলো-আঁধারের যাত্রীর পরবর্তী খণ্ড এই উপন্যাস।

এই পথে আলো জ্বেলে উপন্যাসে ধরা আছে বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, তার নায়কদের কথা, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবি উত্থাপন, তাঁকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন, তাঁর গ্রেপ্তারের পর গ্রেপ্তার হওয়া, সর্বংসহা সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা রেনুর সংগ্রাম, শেখ হাসিনার সক্রিয় ছাত্ররাজনীতিতে আসা, মওলানা ভাসানীসহ বামপন্থীদের ভূমিকা, জেলে তাজউদ্দীনের জীবন, পিতার সান্নিধ্যবঞ্চিত শেখ মুজিবের ছোট ছেলেমেয়েদের দুঃখ-বেদনা আনিসুল হক এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে পড়তে গিয়ে মনে হবে বর্ণিত ঘটনাগুলো চোখের সামনে দিব্যি ঘটে চলেছে।

দেখতে দেখতে এসে যায় আটষট্টি সাল। জেলবন্দী শেখ মুজিবের কাছে জেল কর্তৃপক্ষের পদস্থ একজন এসে বলেন, তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সন্দেহ হয় মুজিবের। মাথা উঁচু করে বাইরে বেরিয়ে দেখতে পান সামরিক বাহিনীর গাড়ির বহর। তাঁকে আবার জেলগেট থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার মুখে শেখ মুজিব ‘মাটিতে বসে পড়লেন। বাংলার ধূলিমাটি তিনি স্পর্শ করলেন পরম মমতায়।’ তারপর ‘বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, “আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।”’

শুরু হলো কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ফুঁসে উঠল ছাত্রসমাজ। তারা সারা দেশে গড়ে তুলল ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। শুরু হলো মিছিল। সংগ্রাম। সৃষ্টি হলো গণজোয়ার। এই সংগ্রামে, মিছিলে গেল কত প্রাণ!

শেষে শেখ মুজিবের নিঃশর্ত মুক্তি, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তরফ থেকে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা—এসবই এ উপন্যাসে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আনিসুল হকের লেখা এই উপন্যাস ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ কালপর্বের বাংলাদেশের এক মহা আখ্যান। পাওয়া যাচ্ছে প্রথমার প্যাভিলিয়নে।