বই বিক্রির লক্ষণ ভালো

তখনো রোদের তেজ ফিকে হয়ে যায়নি। মঙ্গলবার বইমেলায় দেখা গেল দ্বার খোলার পর থেকে অল্প অল্প করে ভিড় জমতে শুরু করেছে। স্কুল, কলেজ থেকে দল বেঁধে পড়ুয়াদের মেলার মাঠে ঘুরতে দেখা গেল। এরা বেশির ভাগই ঘুরে বেড়ানোর দলে থাকলেও ক্রেতাও নেহাত কম নয়।

অন্যবারের হিসেবে এবার মেলার গতিপ্রকৃতি কিছুটা পাল্টে গেছে। একটাই কারণ—শুরুর দিন শুক্রবার, পরদিন শনিবার। শুরুতেই দুটি ছুটির দিন পাওয়ায় বিক্রির হিসাব–নিকাশটাও বদলে গেছে। প্রথম দুই দিনে বেশি বিক্রি হয়েছে, পরের দিনগুলোতে কিছুটা কমেছে। তা কমুক, প্রথম পাঁচ দিনের মোট হিসাবের চিত্রটা মন ভালো করে দেওয়ার মতো। এ কথা বলছেন অনেক প্রকাশক। তাঁদের ভাষায়, লক্ষণ ভালো। শেষ পর্যন্ত এভাবে চললে বিক্রির রেকর্ডের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশনসের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বললেন, ‘গেল বছর প্রথম দিকে বিক্রয় কম হলেও ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কিন্তু মেলা জমে উঠেছিল। গত বছরের বিক্রয় ডেটাবেইস তুলনা করলে এ বছরের শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক।’ নালন্দার প্রধান নির্বাহী রেদওয়ানুর রহমান মনে করেন, কাল বৃহস্পতিবার থেকে মূল বিক্রিটা শুরু হবে। প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাফর আহমদ একবাক্যে বললেন, ‘গেলবারের তুলনায় এবার মেলা যথেষ্ট ভালো।’ 

জমেছে লেখক বলছি মঞ্চ
বিকেল সোয়া পাঁচটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব দিকে দেখা গেল দর্শনার্থীদের বড় জমায়েত। এখানে এই প্রথম বানানো হয়েছে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চটি। এখানে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রতিদিন পাঁচজন লেখককে ২০ মিনিট করে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেদিন লেখক কথা বলবেন তার আগের দিন তাঁর বই জমা দিতে হবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখান থেকে প্রতিদিন পাঁচজনকে নির্বাচন করে দেওয়া হয়।

গতকাল সরাসরি লেখকের অভিজ্ঞতা শুনতে পাঠকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মিথের পথ নিয়ে কথা বলেন অনুবাদক আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া। শিশুসাহিত্যিক আলম তালুকদার কথা বলেন আদিগন্ত প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত দশ ফালি রোদ, কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক পেন্সিল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মঙ্গলবারের জন্য অপেক্ষা, কবি অরবিন্দ চক্রবর্তী বেহুলা বাংলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রাত্রির রঙ বিবাহ এবং কবি আয়েশা ঝর্ণা সংবেদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কাভাফির কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন। 

নতুন বইয়ের সংখ্যাও বেশি

একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, তথ্যকেন্দ্রে গতকাল নতুন বই জমা পড়েছে ১৫২টি। আগের ৪ দিন বাংলা একাডেমি এবং অন্য সব সূত্রের তথ্যানুযায়ী গত ৫ দিনে ৭৬৪টি নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে কবিতার বই বেশি। পরেই আছে উপন্যাস। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বললেন, গুরুত্বপূর্ণ সব বই মেলার প্রথম সপ্তাহে চলে আসবে।

গেল বছরের মার্চের পর প্রকাশিত বইগুলোকে নতুন বই হিসেবে বিবেচনা করেন প্রকাশকেরা। এর মধ্যে মেলায় ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ এনেছে হাসান আজিজুল হকের স্মৃতিকহন। প্রথমা প্রকাশন এনেছে জাভেদ হুসেন অনূদিত সাদত হাসান মান্টোর কালো সীমানা, মালেকা বেগমের পুষ্পকুন্তলা: বিপ্লবী সূর্য সেনের জীবনসঙ্গিনী। পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস এনেছে খসরু চৌধুরীর বাংলাদেশের বাঘের গল্প। এ ছাড়া কথাপ্রকাশ এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সময় বহিয়া যায়, শাকুর মজিদের বুয়েটকাল, সময় প্রকাশন এনেছে মো. মশিউর রহমানের সম্পদ ও কল্যাণ ব্যবসা, সৌম্য সালেকের শব্দ চিত্র মত ও মতবাদ, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন এনেছে তানিয়া হোসেনের ফেরাউনের জনপদ, এবং প্রাচ্য-পাশ্চাত্য-মধ্যপ্রাচ্য, কামরুল হাসানের মুক্তিযুদ্ধ ফিরে ফিরে ডাকে, অনন্যা এনেছে মোস্তফা মামুনের রাজু ভাই মাইনাস শেলী আপা, নাগরী প্রকাশন এনেছে আবু হাসান শাহরিয়ারের বিমূর্ত প্রণয়কলা ইত্যাদি।

আজ ষষ্ঠ দিন বুধবার মেলার দ্বার খুলবে বেলা তিনটায়।