সাজ্জাদ শরিফের প্রেমের কবিতা

এসেছে বসন্ত। এই বসন্তে ভালোবাসা দিবস পেরিয়ে গেলেও ফাল্গুনী হাওয়ায় এখনো ভাসছে প্রেমেরই সৌরভ। সম্প্রতি লেখা একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা।

নির্জন সংলাপ

‘তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

‘ভালোবাসি’—এই শব্দে নিরিবিলি সন্ধ্যার নির্জনে
মুহুর্মুহু উল্কাপাতে দাবানল ঘটে যায় মেহগনি বনে।
মহাসিন্ধু আছড়ে পড়ে কোণের উঠোনে। যেন আমি নিঃস্ব ভূত
স্তব্ধ চোখে দেখি তুমি বিহ্বল, তুমিও প্রস্তুত।
ফিসফিস করে বলি, ‘আমাদের নিয়তি কোথায়?’
শূন্য থেকে নামো তুমি, উড়ন্ত চুলের গুচ্ছে তারা ঝলকায়...
চলকে ওঠে মৃদু হাসি, সাদা মদ, ফেনার প্রহার
পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢোকে। ‘এই সন্ধ্যাই অপার’
বলে তুমি হাতে ধরে নিয়ে চলো পাকে পাকে সিঁড়ির অতলে।
আলিঙ্গনে বিস্ফোরণে নেশাতুর চাঁদ পড়ে ঢলে
অনন্ত জাগ্রত সন্ধ্যা বাকরুদ্ধ, ঝরে হিম, হাপরের মতো পড়ে শ্বাস
তারপর সর্বনাশ, বিষণ্ন মধুর সর্বনাশ।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

আবছায়া রাত

ধরেছ দু হাত।
আবছায়া রাত
মুছছে অধীর
আমার শরীর,
তোমারও মুছুক
আধখানা মুখ।
পূর্ণ ও মুখে
চোখে ও চিবুকে
কীভাবে তাকাই!
তাকালে তো ছাই,
পুড়ে খাক চিতা।
ঝরুক কবিতা
না হয় বরং
আগুনের রং
তোমাকে ছাপিয়ে।
হাতে হাত নিয়ে,
ছুতো কবিতার,
আসলে তোমার
পড়ছি আঙুল,
ঠোঁট, ভুরু, চুল।

হাওয়া অশান্ত।
গিয়েছিলাম তো
তোমাকে জাগাতে।
হাত নিলে হাতে,
মৌন, হঠাৎ।

নির্জন ছাদ
ভাসল আকাশে,
ধীরে নিভে আসে
আবছা আওয়াজ
শহরের ঝাঁজ।
উড়ে যেতে যেতে
কী যে সংকেতে
আধভেজা চোখ।
রক্তের ঝোঁক
ত্বক ছিঁড়ে ডাকে।
ছুঁয়েছি তোমাকে
স্পর্শ করিনি
দূরবর্তিনী।

ভ্রুক্ষেপহীন
কেন এতদিন
তোমাকে চিনিনি?
কেন যে চিনিনি!
১৩ জানুয়ারি ২০১৯
 

সরস্বতী

ঝাঁপিয়ে পড়েছি তোমার বক্ষে
মাথার ওপরে তরঙ্গ বয়
গহন, তোমার আঁধির অতলে
ডুবে মরা একমাত্র অভয়
ডোবারই মন্ত্র শিখিয়েছ তুমি
ডুবেছি মধুতে ডুবেছি কাদায়
কাদা মুছে গেছে সাদা পালকের
পথ মুছে গেছে গোলকধাঁধায়
ও সরস্বতী, এবার আমাকে
বাহন করো গো যুগান্তরের
অথবা বাজাও বীণার মতন
সীমা ভেসে যাক ছোট এ ঘরের
আমার স্বপ্নে তোমার স্বপ্ন
মিশে যাক, বিষে ভরে যাক মন
কেন? এ প্রশ্নে মাথা কুটে মরে
অঝোর শ্রাবণ, অঝোর শ্রাবণ!
১১ ডিসেম্বর ২০১৮