অগ্নিময় বাকু

আমাদের দেশে যেমন ফুটপাত আটকে পুরোনো কাপড় বিক্রি হয়, অনেকটা যেন তেমন করেই ফুটপাতে টুকরো কার্পেট বিক্রির বন্দোবস্ত
আমাদের দেশে যেমন ফুটপাত আটকে পুরোনো কাপড় বিক্রি হয়, অনেকটা যেন তেমন করেই ফুটপাতে টুকরো কার্পেট বিক্রির বন্দোবস্ত

ফেলুদার গল্পের সোনার কেল্লার মতোই ইশেরি শেহের পাতালরেলস্টেশন থেকে মিনিট দশেক দূরত্বে এক সোনার কেল্লার সন্ধান পাই আমি। বিকেলের পড়ন্ত রোদ কেল্লার দেয়ালে পড়ে ধাতব মুদ্রার মতো ঝিকমিক করে ওঠে। আর অদূরের কাস্পিয়ান সাগর থেকে ছুটে আসা দামাল হাওয়ায় কেল্লার মাথায় টানিয়ে রাখা পতাকা যেন সবকিছু ছিঁড়েছুড়ে ভেসে যেতে চায় অজানার পানে। কেল্লার ওই পতাকাটিকে অজান্তে নিশানা করে হাঁটলেও আমার গন্তব্য কিন্তু এই কেল্লা নয়। আমি খুঁজছি আমার হোটেল। রেলস্টেশন থেকে এক আইসক্রিমওয়ালার নির্দেশিত পথ ধরে চলতে গিয়ে চলে এসেছি এ পথে। এখানে দুর্গের প্রাকার আছে, সংলগ্ন উদ্যান আছে, আছে প্রাকার উপচে সড়কের দিকে মুখ করে চেয়ে থাকা ডালিমগাছের কুঁড়ি। কিন্তু হোটেল কোথায়? ভুল পথে হাঁটছি কি না, সে সন্দেহ বদ্ধমূল হয় ধীরে ধীরে। পথচলতি আরও দু-একজনকে জিজ্ঞেস করলে তারাও তাড়াহুড়োয় ওই একই পথ নির্দেশ করে; যে পথ গিয়ে মিশেছে দুর্গের ফটকে। আচ্ছা বিপদে পড়া গেল দেখছি!

ব্যাপক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে অবশেষে নিজের ট্রলি ব্যাগটি ঠেলে সদর ফটক ধরে ভেতরে প্রবেশ করি। আর তখনই বুঝতে পারি ঘটনাটি কী। এখানে কেল্লার চৌহদ্দির মধ্যে গড়ে উঠেছে রীতিমতো এক ক্ষুদ্র শহর। বেলেপাথরে গড়া গায়ে গা লাগানো বাড়িঘর। মাঝ দিয়ে চলে গেছে কোবলস্টোনে মোড়া এবড়োখেবড়ো সড়ক। এক বাড়ির উঠোন হয়তো গিয়ে মিশেছে আরেক বাড়ির অন্দরমহলে। পথ হারালে তাই সর্বনাশ। আবারও হয়তো ফিরে আসতে হবে পূর্বের পথপ্রান্তে, কিংবা কাপড় শুকাতে দেওয়া নির্জন গৃহকোণে। নিজের ট্রলি স্যুটকেসটি নিয়ে আমি তাই কিছুটা বিপাকে পড়ি। খুব বুঝতে পারছি, এখানকার কোনো বাড়িই হয়তো আমার হোটেল। কিন্তু এই গোলকধাঁধার পথ মাড়িয়ে সেখানে পৌঁছাব কী করে?

কাচের জানালার ওপাশে রাখা বেশ কিছু আদিকালের বাহারি টেবিলবাতি। বাতির শেডে হাতে আঁকা কারুকাজ। আর জানালার নিচে দড়িতে টানিয়ে রাখা পাঁচ বাই দশ ফুটের কার্পেট। আশপাশে আরও দু-একটি কার্পেট লটকে রাখা। আমাদের দেশে যেমন ফুটপাত আটকে পুরোনো কাপড় বিক্রি হয়, অনেকটা যেন তেমন করেই ফুটপাতে টুকরো কার্পেট বিক্রির বন্দোবস্ত। যে বাড়ির রোয়াকে এই ব্যবস্থা, সে বাড়ির সিঁড়িতে বসে আছে দুই যুবক। এদের একজন আমার বিপন্ন অবস্থা আঁচ করে এগিয়ে আসে। তবে হোটেল চিনিয়ে সাহায্য করার বিনিময়ে ছেলেটি আরেক নিবেদন পেশ করে। সে নাকি এখানকার এক ট্যুর এজেন্সির দালাল। হোটেলে নেওয়ার পথে আমাকে সেই এজেন্সির অফিসে একপাক ঘুরিয়ে আনতে চায়। যতই তাকে বলি, দেখুন, আমি বড্ড ক্লান্ত, ততই সে নাছোড়বান্দার মতো বলে, ‘এক্কেবারে ভাববেন না। আমাদের অফিসটি আপনার হোটেলের পথেই, একটিবার এসেই দেখুন।’ একপর্যায়ে আমার স্যুটকেস নিজ হাতে তুলে নিয়ে সামনে ছুট দেয়। এবার তাই তাকে অনুসরণ করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকে না।

>এখানে কেল্লার চৌহদ্দির মধ্যে গড়ে উঠেছে রীতিমতো এক ক্ষুদ্র শহর। বেলেপাথরে গড়া গায়ে গা লাগানো বাড়িঘর। মাঝ দিয়ে চলে গেছে কোবলস্টোনে মোড়া এবড়োখেবড়ো সড়ক। এক বাড়ির উঠোন হয়তো গিয়ে মিশেছে আরেক বাড়ির অন্দরমহলে। পথ হারালে তাই সর্বনাশ। আবারও হয়তো ফিরে আসতে হবে পূর্বের পথপ্রান্তে, কিংবা কাপড় শুকাতে দেওয়া নির্জন গৃহকোণে। নিজের ট্রলি স্যুটকেসটি নিয়ে আমি তাই কিছুটা বিপাকে পড়ি। খুব বুঝতে পারছি, এখানকার কোনো বাড়িই হয়তো আমার হোটেল। কিন্তু এই গোলকধাঁধার পথ মাড়িয়ে সেখানে পৌঁছাব কী করে?

সরু পাথুরে রাস্তা ধরে একটি ট্যাক্সি আমাদের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। সেটি থেকে উঁকি দেয় কয়েকজন বোরকাবৃত নারীর মুখ। দেখেই বুঝি, এরা স্থানীয় নয়। নিশ্চয়ই দুবাই কিংবা সৌদি পার্টি। ওদের সেই ট্যাক্সিটি বিলেতের হেকনি ক্যারেজ গাড়ি। লন্ডনের বাইরে একমাত্র এই বাকু ছাড়া অমন ঢাউস ট্যাক্সি আর কোথাও চলে কি না, সন্দেহ। গাড়িটি পেরিয়ে গেলে আমরা দুই পাশে দুটি আঙুরগাছকে পাহারাদার বানিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতল বাড়ির সম্মুখে এসে দাঁড়াই। দরজার ওপরের দিকটায় ঝুলে রয়েছে কালচে রঙের টসটসে আঙুরের থোকা। আমাকে ভেতরে যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত দিয়ে যুবকটি অমায়িক হাসিতে মুখ ভরিয়ে দেয়। ভেতরে ঢুকে উল্টো দিকের টেবিলে উপবিষ্ট ছিপছিপে এক ভদ্রলোকের দেখা পাই। লম্বাটে মুখটিতে খাঁটি আরবের ন্যায় সযত্নে ছাঁটা দাড়ি, পরনে গলফ টি-শার্ট। নানা রকমের ট্যুর প্যাকেজের প্রস্তাবদানের পাশাপাশি তিনি এক ফাঁকে টুক করে আমার ফোন নম্বরটি টুকে রাখেন মলাট দেওয়া ডায়েরিতে। ঠিক যেন বিমার দালাল। তবে নম্বর টুকতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গিয়ে বলেন, ‘আরে, আপনি কি ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন?’ ভদ্রলোককে তো জ্যোতিষী বলে মনে হয় না! তাহলে তিনি সত্যি কথাটি জানলেন কী করে? চটুল স্বরে জানালেন, ইংরেজি শেখার একটা কোর্সে পড়তে গিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছেন বেশ কয়েক বছর। এমনকি থেকেছেন আমার শহরেই। আর সে জন্যই ফোনের এরিয়া কোড দেখেই ধরে ফেলেছেন আমার প্রকৃত নিবাস। পাকা দালাল যেমন আসল কথায় যাওয়ার আগে শুরু করে নানা খেজুরে আলাপ, তেমনি করে লোকটি এবারে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার নানা স্মৃতিকাহিনি। সেই থেকে জানতে পারি, এই-সেই করে এক বছরের কোর্স পাঁচ বছরে সমাপ্ত করে শেষ অবধি আমেরিকায় টিকতে না পেরে সে ফিরে আসে নিজ শহর বাকুতে। খুলে বসে পর্যটন ব্যবসা। এখন যদি আমার মতো পশ্চিমা পর্যটকেরা তার কাছ থেকে প্যাকেজ না কেনে, তাহলে দেশে ফিরেই-বা তার লাভটা কী হলো? বেচারা এমন করুণ ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে যে কিছু আগাম টাকা হস্তান্তর করে একটি ট্যুর প্যাকেজ আমাকে কিনতেই হয়।

হাঙ্গেরিয়ান কনস্যুলেটের এক কোণে লুকিয়ে থাকা হোটেলটিতে ঢুকে চারধারে কারোর দেখা পাই না। রিসেপশন ফাঁকা। দেয়ালের হুকে ঝুলছে বেশ কিছু ঘরের চাবি। পাশের একটি ছোট ঘর থেকে ভেসে আসছে রেডিওতে বাজা তুর্কি গানের ছন্দ। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে গলাখাঁকারি দিয়ে ম্যানেজারকে ডাকাডাকি করতে হয়। গায়ে সাদা শার্ট আর সেই সঙ্গে ষাটের দশকের পুরুষদের মতো ঠোঁটের ওপর পাতলা লাইনের গোঁফওয়ালা ম্যানেজার উদয় হন হাতে কিছু আপেল আর কলার সম্ভারসহ। আন্দাজ করি, তিনি আগামীকালের প্রাতরাশে সরবরাহ করার জন্য এগুলো হয়তো কিনে এনেছেন আশপাশের কোনো ফলওয়ালার কাছ থেকে। বিন্দুমাত্র দুঃখপ্রকাশ না করে তিনি সেই ফলারির দিকে চক্ষু নির্দেশ করে বলেন, ‘আরেকটু সবুর করুন। এগুলোকে যথা স্থানে রেখে তবেই আপনাকে চাবি বুঝিয়ে দিচ্ছি।’

ততক্ষণে বিকেল পেরিয়ে সূর্য প্রায় অস্তাচলে। হোটেলে ব্যাগ রেখে আমি লাইট হাউসের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ময়দান স্তম্ভের দিকে হাঁটি। পাহাড়ি নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে আসা গাছের কাণ্ড যেমন অনেক সময় আটকে যায় ভাটিতে থাকা পাথরখণ্ডে, তেমনি আমিও সবেগে চলতে গিয়ে আটকে যাই পথপাশের জটলায়। সেখানে হ্যাজাক বাতির তলে তুর্কি আইসক্রিম বিক্রেতা ছলনা করছেন এক বালকের সঙ্গে। বালকটি যতবারই আইসক্রিম ধরতে চায়, লোহার শিকের আগায় আটকে থাকা আইসক্রিমটিকে সেই বিক্রেতা ভোজবাজির মতো হাওয়া করে দেন। এই দৃশ্য দেখে মজা পায় আশপাশে গোল হয়ে দাঁড়ানো বাকি লোকজন। এর পাশে এক বৃদ্ধা রুটি সেঁকে বেচছেন। রুটির স্তরের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া পালংশাক আর মাখনের মিশ্রণ। তবে আমাকে কিন্তু আকর্ষণ করে এই রুটি নয়, বরং এ রাস্তার শেষ মাথার রেস্তোরাঁটি। ওটির ভেতরের উনুন থেকে ভুড়ভুড়িয়ে ভেসে আসছে তাজা মাংস পোড়ানোর গন্ধ। আজেরিরা খুব গর্ব করে বলে, আমাদের দেশে লোক আসে তিনটি জিনিসের স্বাদ পেতে—সংস্কৃতি, ইতিহাস আর আমাদের খাবার। শেষোক্তটি পরখ করে দেখার একটা জুতসই মওকা তৈরি হওয়ায় আমি সুড়ুৎ করে সেই রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ি।

রেস্তোরাঁর সামনের উঠোনে পেতে রাখা কিছু গোল টেবিল। ওখানে বসে বহুদূরে দীপ্যমান ফ্লেম টাওয়ারকে একেবারে আরাম করে দেখা যায়। আজারবাইজানের ইতিহাসের সঙ্গে একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জরথুস্তিয়ান ধর্ম আর অগ্নিমন্দির। সেই অগ্নির রূপকল্প হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে গ্লাস প্যানেল দিয়ে গড়া ওই ভবন তিনটি। ভবনের গায়ে লাগিয়ে রাখা হাজারো লেড বাতি যখন জ্বলে ওঠে, তখন মনে হয় বাকু শহরে যেন জ্বালানো হয়েছে মহাযজ্ঞের অগ্নিশিখা। আমি সেই শিখার দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকায় কখন যে নিঃশব্দ সঞ্চারে পেছনে এসে বেয়ারা দাঁড়িয়ে গেছে টের পাইনি। টের না পাওয়ার আরও কারণ ছিল। উল্টো দিকের বাড়ির বারান্দায় এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক বাজাচ্ছিলেন আজেরি বাদ্যযন্ত্র ‘তান’। এর সুর সেতারের কাছাকাছি। তবে বেশ ছন্দময়। আমার শ্রবণেন্দ্রিয় পুরোপুরি মজে ছিল সেই সুরগঙ্গায়। তবে তাই বলে তো আর বেয়ারাকে অনন্তকাল দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। লেবুজল জারিত মুরগির ভাজা ঠ্যাঙের অর্ডার দিয়ে তাকে বলি, ‘আগে আমাকে এক কাপ চায়ে দাও।’ বিকেলটা একটু চা-সহযোগে চাঙা হোক।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙে কাচের সার্সিতে বাতাসের জোরালো গোঙানির শব্দে। পর্দা সরিয়ে দেখি, দূরের কাস্পিয়ান সাগর থেকে বয়ে আসা দুরন্ত সাগরবায়ু উড়িয়ে নিতে চাইছে জানালাটিকে। হোটেলটি বেশ পুরোনো বিধায় জানালার পাল্লার শক্তিমত্তা নিয়ে মনে কিছুটা সংশয় জাগে। এ তল্লাটে কিছুকাল আগে স্থাপন করা হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্ল্যাগ পোল। কিন্তু সাগরের শক্তিমান হাওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই নয়তলার সমান উঁচু সেই পোল গেল বেঁকে। অবশেষে আশপাশের বাড়িতে ভেঙে পড়ার ভয়ে গত বছর সেই পোলটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দুই শ বিশ টনের পোলকে যে হাওয়া নড়িয়ে দিতে পারে, সেই হাওয়ার কাছে তো এই নড়বড়ে জানালা নস্যি। তবে এই জানালা নিয়ে পড়ে থাকলে তো পুরো দিনটাই মাটি। আজ আবার সকাল ঠিক দশটায় সেই ট্যুর এজেন্সির সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার রফা।

ফুটপাতের দোকান
ফুটপাতের দোকান

লোকটির নাম সামির। ওপরের পাটির দুটো দাঁত ইতিমধ্যে খুইয়েছে। এককালে কাজ করত বাকুর এক তেল উত্তোলন কোম্পানিতে। অবসরের পর এখন ট্যুর গাইডের কাজ করছে। নিজের গাড়িতে চড়িয়ে প্রথমেই বলল, আগে না হয় তোমাদের আমার কর্মস্থলের একটা চিত্র দেখিয়ে নিয়ে আসি। গাড়ি ছুটে চলল মেরিন ড্রাইভের সুপ্রশস্ত সড়ক ধরে। বাঁ ধারে দূর সাগরে শত শত ডেরিক। গুবরেপোকার শুঁড়ের মতো অবিরাম উঠছে-নামছে তাদের তেলকলের লিভার। এই যে তেল, এই কালো সোনাকে ভিত্তি করেই কিন্তু গড়েই উঠেছিল গত শতকের বাকু, যেটিকে একসময় ডাকা হতো ককেশাসের প্যারিস বলে। আজকের বাকু নগরীর যে জৌলুশ, সেটিও ওই তেলের কল্যাণেই। তবে গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় বাকুতে মানুষের মনে বেশ হাহুতাশ। তাদের কথা হলো, বছর দশেক আগে তেলের দাম যখন আকাশচুম্বী হয়েছিল, তখন সেই টাকায় আমাদের বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছিল। আবার যে কবে আসবে সেই সুদিন!
এই তেলসম্পদ নিয়ে আলাপকালে সামির জানাল এক চমকপ্রদ কাহিনি। আজারবাইজান তখন রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলে বাণিজ্য আকৃষ্ট করার জন্য রুশ দেশের জার বিদেশিদের জন্য স্বল্পমূল্যে জমি আর আয়করে ব্যবসা করার সুযোগ দিলেন। সেই সুযোগে সুদূর সুইডেন থেকে এখানে এসে বসত গড়লেন পাকা ব্যবসায়ী নোবেল ভাইয়েরা। তাঁরা এর আগে পেট্রোলিয়াম আর রিফাইনারি নিয়ে ব্যবসা করে বেশ টাকা কামিয়েছেন আমেরিকায়। এবার আবারও ভাগ্যপরীক্ষার জন্য এলেন বাকুতে। বাকুতে কিন্তু তারও আগে থেকেই তেলশিল্প স্বল্প আকারে ছিল। এককালে তো অবস্থা এমন ছিল যে লোকে কুয়ো খুঁড়লেও জলের পরিবর্তে তেল পেত। তো নোবেল ভাইয়েরা এখানে নিয়ে এলেন তেল শোধনের আধুনিক পন্থা আর সরঞ্জাম। সেই দিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়া আর এশিয়ার বাদবাকি অঞ্চলে বাকুর তেল সাপ্লাই করে তারা রীতিমতো কোটিপতি বনে গেলেন। পরবর্তীকালে আলফ্রেড নোবেল যে নোবেল পুরস্কারের প্রচলন করেন, সেই পুরস্কারের অর্থের বড় অংশই ছিল বাকুর তেলশিল্প থেকে তাঁর উপার্জিত অর্থ।