এই নায়িকার উপস্থিতি অন্য সবকিছুকে যেন ম্লান করে দেয়

তৌকীর আহমেদ
তৌকীর আহমেদ
>তৌকীর আহমেদ। অভিনেতা ও চলচ্চিত্রনির্মাতা। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় ৫ সম্বন্ধে।

১. প্রিয় বই

আলোড়িত করেছিল ইউজিন ওনিলের বই

অনেক বই-ই তো আমার প্রিয়। তাই বিশেষভাবে একটি বইয়ের কথা উল্লেখ করা একটু মুশকিল বটে। কেননা, মানুষ যখন বই পড়ে, তখন একটি-দুটি বইয়ের মধ্যে তার পছন্দ আর সীমাবদ্ধ থাকে না। তবে যেহেতু বলতেই হবে, ফলে এ মুহূর্তে বলব লং ডেজ জার্নি ইনটু নাইট বইটির কথা। এটি মূলত একটি নাটিকা। মার্কিন নাট্যকার ইউজিন ওনিল রচিত এই নাটিকায় তাঁর নিজের জীবনের কিছু বিষয় উঠে এসেছে। ছোটবেলায় ইউজিন ওনিল ছিলেন উড়নচণ্ডী। ট্রেনে ট্রেনে ঘুরতেন তিনি। কবীর চৌধুরীর অনুবাদে ওনিলের এই বই পড়েছিলাম। বইটি ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল আমাকে। তবে প্রিয় বইয়ের কথা বলতে গিয়ে আফসোস হয় এই ভেবে যে এখনো পৃথিবীতে ভালো ভালো বই রয়ে গেছে, যা আমার পড়া হয়নি।

২. প্রিয় গান

মুগ্ধতার কি ব্যাখ্যা হয়?

প্রিয় গানের কথা লিখতে গিয়ে এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে, আনন্দবসন্তসমাগমে...’ গানটির কথাই বলতে ইচ্ছা করছে। এই গানের বাণী আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়। রবীন্দ্রনাথের প্রায় সব গানের বাণীই তো অসাধারণ। তবু এ গান কেন যেন বিশেষভাবে মুগ্ধ করে আমাকে। কেন মুগ্ধ করে, তার সঠিক ব্যাখ্যা অবশ্য দিতে পারব না। আসলে মুগ্ধতার কি ব্যাখ্যা হয়? অনেক শিল্পীই গানটি গেয়েছেন এবং আমিও শুনেছি অনেকের গায়কিতে। বলা ভালো, কবি এটি রচনা করেছিলেন ১২৯৯ বঙ্গাব্দে। স্বরলিপিকার ছিলেন সরলা দেবী।

৩. প্রিয় অভিনেত্রী

শৈশবের নায়িকা সোফিয়া লরেন

প্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সোফিয়া লরেন। সোফিয়া লরেনের কথা বলার কারণ, তিনি আমার শৈশবের নায়িকা। আমি ভাগ্যবান এই অর্থে যে একদম শৈশবেই বিদেশি ছবি, বিশেষত ইংরেজি ছবি দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। আমার বাবা সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন চিকিৎসক হিসেবে। তো, সে সময়ে ক্যান্টনমেন্টে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ইংরেজি ছবি দেখানো হতো। সোফিয়া লরেনের টু উইমেন ছবিটি সে সময়ই প্রথম দেখেছিলাম। এরপর তাঁর আরও অনেক ছবিই দেখেছি। এখানে সানফ্লাওয়ার সিনেমার কথা তো বলতেই হবে। আদতে সোফিয়া লরেন অভিনীত প্রতিটি ছবিতে এই নায়িকার উপস্থিতি অন্য সবকিছুকে যেন ম্লান করে দেয়।

সোফিয়া লরেন
সোফিয়া লরেন



৪. প্রিয় চলচ্চিত্র
যুদ্ধের বিভীষিকা, জীবনের সৌন্দর্য

প্রতিদিন আমি একটি ছবি দেখি। ছুটির দিনে কখনো কখনো একসঙ্গে তিনটি সিনেমাও দেখে ফেলি। সুতরাং বলা বাহুল্য, অজস্র ছবির কথা জমা হয়ে আছে আমার স্মৃতিতে। সেখান থেকে যদি একটি ছবির যদি বলতে হয়, অবশ্যই বলব দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং-এর কথা। এ ছবির পরিচালক মিখাইল কালাতোজভ। আর কাহিনি লিখেছেন ভিক্টর রোজভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি প্রেম, অতঃপর বিচ্ছেদের—এককথায় এটিই ছবির গল্প। ছেলেটি যুদ্ধে যায় এবং মেয়েটি বাধ্য হয় তার কাজিনের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে। ছবিটি ভালো লাগে এ কারণে যে এর মধ্যে যুদ্ধের ভয়াবহতা, বিভীষিকা আছে, একই সঙ্গে আছে জীবনের সৌন্দর্য আর বেঁচে থাকার আকুতি।

৫. প্রিয় চিত্রকর

দারুণভাবে আকর্ষণ করেন ভ্যান গঘ

ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ আমার প্রিয় চিত্রশিল্পী। তাঁর অনেক চিত্রকলাই আমার প্রিয়। এমনকি তাঁকে চিহ্নিত করতে পারি আমার প্রিয় মানুষ হিসেবেও। এই চিত্রকরকে প্রিয় মানুষ বলছি এই অর্থে যে তাঁর শিল্পীজীবন আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে। ভ্যান গঘের জীবনে যে বঞ্চনা এবং সেই বঞ্চনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত তাঁর যে শিল্পসৃষ্টির প্রবণতা, বিষয়টি আমার কাছে বিস্ময়করই মনে হয়। প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন ভ্যান গঘ। অনেকে তাঁকে উন্মাদ ভাবতেন। তবে তিনি উন্মাদ ছিলেন না, ছিলেন সাধারণের বোধগম্যতার বাইরের মানুষ। আর তখনকার সমাজ তাঁর মতো প্রতিভাকে ধারণ করার উপযুক্তও ছিল না। এর প্রমাণ এখন পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীতে ভ্যান গঘ মহাগুরুত্বপূর্ণ একজন শিল্পী। তাঁর যাপিত জীবন আজ আমাদের গবেষণার বিষয়। সোফিয়া লরেন