দৃষ্টিনন্দন জলরং চিত্রের মেলায়

‘মৌরীর ভূ-দৃশ্য’, শিল্পী: মুর্তজা বশীর
‘মৌরীর ভূ-দৃশ্য’, শিল্পী: মুর্তজা বশীর

কাগজের অমসৃণ বুকে জল ও রঙের মিশ্রণ যখন গড়িয়ে পড়ে, তখন তৃষার্ত কাগজ শুষে স্থির করে রাখে সেই মাতোয়ারা জল ও রঙের ধারা। জলরঙের সেই চিত্রধারা বড়ই অনুপম। ১৯৩২-১৯৮৬ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা সমকালীন শিল্পীর জলরং চিত্র ‘কনটেম্পোরারি কালারস: সোকড ইন পেপার’ শীর্ষক প্রদর্শনী দেখে এমনটাই অনুভব হলো। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পী মুর্তজা বশীরের ১৯৫৩ ও ১৯৬১ সালে আঁকা দুটি কাজ ভিন্ন অন্য শিল্পীদের সব কাজই চলতি দশকে আঁকা। কিছুটা নীলাভ ও ছাইরঙা আকাশের নিচে দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠের কিনারে একদল ছাগলের উপস্থিতি রয়েছে রফিকুন নবীর কাজে। তিনি ‘উড্ডয়নের পরে’ চিত্রে ক্লান্ত দুটি পাখির বিশ্রাম দেখিয়েছেন। দুটি কাজেই লাবণ্যময় ওয়াশের মাধুর্য রয়েছে।

হামিদুজ্জামান খানের কাজে আছে নদী ও আকাশের মিলন। সে মিলনে কখনো উৎসব হয়ে আসে বর্ষাধারা, কখনো রাঙিয়ে দেয় গোধূলির আভা। তাঁর ‘বুড়িগঙ্গা’ শিরোনামের ছবিতে কালচে নীল পানি আকাশকেও বেদনাতুর করেছে।

আলপ্তগীন তুষারের কাজে আছে একাডেমিক দক্ষতা। শিশির ভট্টাচার্য্য, শেখ আফজাল, জামাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইকবাল, আহম্মেদ শামসুদ্দোহা, কামালুদ্দিন, রতন মজুমদার, কাজী রাকিব ও সুমন ওয়াহিদের অধিকাংশ কাজই দৃষ্টিনন্দন, দৃশ্যচিত্রের ফটোগ্রাফিক কম্পোজিশন অর্থাৎ ‘ড্রয়িং রুম আর্ট’ বলা যায়। প্রত্যেকের বিষয়ভাবনা, অঙ্কনশৈলীতে তেমন পার্থক্যও খুঁজে পাওয়া যায় না।

যাঁদের কাজে গবেষণা ও নতুনত্বের ছাপ পাওয়া যায়, তাঁদের মধ্যে আজমীর হোসেন উল্লেখযোগ্য। ‘পাহাড়ের গান’ সিরিজচিত্রে আজমীরের শ্রম, সাধনা ও অধ্যাবসায় চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া গৌতম চক্রবর্তী, চন্দ্রশেখর দের কাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য যেমন বোঝা যায়, তেমনি অন্যদের মতো তাঁদের কাজে দৃষ্টিনন্দন নিসর্গচিত্রণও বিবর্জিত হয়েছে।

জলরঙের স্বাধীন চলনকে দমন করে ফটোগ্রাফির সৌন্দর্যকে অনুকরণ করেছেন আনিসুজ্জামান। হাশেম খান ও সোহাগ পারভেজের কাজে রয়েছে ইলাস্ট্রেশনধর্মী মূর্ছনা ও অলংকরণধর্মিতা। শাহানুর মামুনের নিসর্গচিত্রণেও রয়েছে নিজস্ব ভাব-ভাষা। সব মিলিয়ে এই প্রদর্শনী দেখে আমাদের সমকালীন শিল্পী ও জলরং চিত্র নিয়ে নানান প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। আমাদের সকালীন জলরং চিত্রের বড় অংশ কি ২০০ বছরে চর্চিত হয়ে আসা ‘ড্রংয়িং রুম আর্ট’ থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারেনি? নাকি নির্বাচিত শিল্পীরা তাঁদের গবেষণাধর্মী কাজগুলো উপস্থাপন করেননি, অথবা সমকালীন জলরংচর্চার অনেক শিল্পীই গ্যালারির নজর কাড়তে পারেননি। যা হোক সমকালীন জলরং চিত্রের অনেক সম্ভাবনাই অনুপস্থিত রয়ে গেছে এই প্রদর্শনীতে।

গ্যালারি কায়ায় ১ মার্চ শুরু হওয়া দৃষ্টিনন্দন এই প্রদর্শনীটি শেষ হয়েছে ১২ মার্চ।