মানুষ অথবা দেয়াল

ওয়াল অব ফ্রিডম–৩, শিল্পী: রুহুল আমিন কাজল
ওয়াল অব ফ্রিডম–৩, শিল্পী: রুহুল আমিন কাজল

গ্যালারিতে ঢুকতেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ দেয়ালের মতো ক্যানভাস। তার সামনে সারি সারি মানুষের ভিড়। শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে রুহুল আমিন কাজলের চিত্র প্রদর্শনীটি অন্য রকম এক ঘোর জাগায়।

আশির দশকে রুহুল আমিন কাজল নিজ দেশ ছেড়ে সুদূর ডেনমার্কে বসবাস শুরু করেন। রোড পেইন্টার হিসেবে সেদেশে খ্যাতি পেয়েছেন। তাঁর শিল্পচর্চার বিচিত্র ভাবনা গৃহীত হয়েছে পৃথিবীর নানান দেশে।

তাঁর এবারের প্রদর্শনীতে দুই ধরনের কাজ দেখার সুযোগ মিলবে। কাজগুলোতে রঙের সীমিত ব্যবহার ও বিষয় নির্মাণে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিকৃতি চিত্রে তুলির সাহায্য ছাড়াই মুখাবয়বের বৈশিষ্ট্যকে সহজে ফুটিয়ে তুলেছেন। কাজগুলোর শিরোনাম দিয়েছেন ‘ফ্রি ফেসেস’ বা ‘মুক্ত রেখায় আঁকা মুখ’। এ শিল্পীর আঁকার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে—কীভাবে বা কেন সনাতন পদ্ধতির আঁকা ছেড়ে এ রকম একটি কৌশল বেছে নিয়ে কাজ করেছেন? এ প্রসঙ্গে শিল্পীর কথা হলো, ‘আমি চেষ্টা করেছি কালার প্যালেট এবং কালি, রঙের স্বতঃস্ফূর্ত নিরীক্ষায় মনোযোগ দিতে। এ কাজগুলোতে আমার আনন্দ হচ্ছে, সূক্ষ্ম রেখা আর রং নিজেই সখ্য গড়ে তুলেছে।’

এ ছাড়া কাজল কোনো ধরনের ফ্রেমবন্দী না করে যে কাজগুলো দেখিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হয়। দীর্ঘ দেয়ালের সামনে মানুষের সারি—সব মানুষের মনোযোগ সামনের দিকে। ধূসর গোধূলি, দেয়াল, দেয়ালের সামনে মানুষের সারি—সব মিলিয়ে বোঝা যায় পৃথিবী দেয়ালে আবদ্ধ। এসব ছবিতে রঙের অনেক বেশি ব্যবহার নেই। শুধু আকৃতির সাহায্য নিয়ে বিষয় বর্ণনা করেছেন শিল্পী। আর পুরো কাজের মধ্যে হাজির হয়েছে এক রকম প্রতীক।

মানুষের ঐক্য, দেয়ালের সামনে থমকে থাকা মুক্তিকামী মানুষের ভিড় আমাদের ভাবায়। শিল্পীর এমন চিন্তা নিয়ে দর্শকমনে তৈরি করে প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে শিল্পী রুহুল আমিন কাজল বার্লিন প্রাচীরকে উদাহরণ হিসেবে নিতে চান। পৃথিবীটাকে এমন দেয়ালে আবদ্ধ করে মানুষের ভেতরে হাহাকার জিইয়ে রাখার যে চেষ্টা, তাতে শিল্পীর মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রতিক্রিয়া। ফলে তাঁর নির্মাণের কেন্দ্রে থাকে সেই দেয়ালে আবদ্ধ মানুষ। তাই হয়তো এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ফ্রিডম অ্যান্ড ফ্রি ফেসেস’, মানুষে মানুষে বন্ধন আর ঐক্যই রয়েছে যার কেন্দ্রে।

১৫ মার্চ শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২৮ মার্চ।