চেনা লোক অচেনা লোক

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

কে হ্যাঁয় আজ হাম তুম নাহি
গ্যায়ের কোয়ি...

লোকটা অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে একটা বাড়ির গেটের সামনে। গেটটা কাঁধসমান উঁচু, ওপরে মধুমালতীর ঝাড়, এখন ফুল নেই কোনো, বরং রাস্তার ধুলায় পাতাগুলো ধূসরিত। সে হয়তো এই সন্ধ্যার আলো নিভে যাওয়া সময়ে বুঝতে পারত না পাতাগুলো তাদের স্বাভাবিক রং হারিয়েছে। পারছে, কারণ তিথি আপার বাসায় যাওয়ার সময়ও এই গেটটাকে দেখেছে সে এবং এই লোকটাকেও, এখানেই।

এমন কি হতে পারে যে এখানেই লোকটার বাসা, সে এই বাড়ির মেজ ছেলে, বাড়িতে সে আর তার বুড়ো মা ছাড়া কেউ থাকে না, বাকি ভাইবোনেরা বিদেশে থাকে, কিংবা অন্য জেলায়, ঢাকা বা চিটাগং। কিন্তু বাইরে থাকা বড়লোকদের বাড়িগুলো আরও সুসজ্জিত থাকে, রাস্তার পাশে হলে পাঁচিল উঁচু করা হয়, নিয়মিত রং করা হয়। এই বাড়িটাকে দেখে মনে হয় না কোনো যত্নের ছাপ আছে। আর লোকটাও তেমনি, একটা হাইনেকের সোয়েটার গায়ে, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, না কামানোর জন্য নাকি এটাই তার স্টাইল—তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।

সে খানিক দাঁড়ায়, রাস্তার উল্টো পাশ দিয়ে যেতে যেতে থামে, লোকটাকে ভালো করে দেখে। বাসায় ফেরার তাড়া নেই তার। সাজিদ অফিসের কাজে বাইরে গেছে কয়েক দিন আগে, আজও ফিরবে না। রান্নার ঝামেলা নেই, একা থাকলে সে নুডলস দিয়ে ডিনার সেরে নিতে পারে। প্রথম দুবেলা সে তা-ই করেছে, দ্বিতীয় রাত থেকে কিছু আর খায়নি। এখন প্রচণ্ডই খিদে পেয়ে গেছে, এতক্ষণ টের পাচ্ছিল না যদিও।

সামনে দিয়ে হুস করে একটা ময়লার গাড়ি চলে গেল। সে জায়গা থেকে নড়ে না। লোকটাও প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ডান দিকে তাকিয়ে, ভুরু কুঁচকে। কারও জন্য কি অপেক্ষা করছে? না এমনিতেই, কোনো কাজ নেই বলে?

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার মনে হয়, অনেক সময় চলে গেছে; হয়তো এভাবে অনেক দিন ধরেই সে এখানে দাঁড়ানো—এমন অদ্ভুত অনুভূতি হওয়ার কোনো কারণ সে বুঝে পায় না। সে কি তাহলে এই লোকটার জন্য অপেক্ষা করছে? লোকটা তার দিকে একবার তাকালেই সে চলে যেতে পারে, মুক্ত হতে পারে?

রাস্তা পার হয়ে সে মধুমালতীর ঝাড়ওয়ালা গেটের দিকে এগোয়। লোকটা এখনো তাকে দেখেনি। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়ার সময় পাওয়া গেল, ভালোই হলো বেশ।

‘এক্সকিউজ মি’ বলবে কি না, ভাবতে ভাবতেই ঘুরে বাঁ দিকে তাকায় হাইনেক সোয়েটার আর খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা লোক, বছর পঁয়তিরিশেক হবে বয়স, বেশিও হতে পারে। চেহারাটার যত্ন নিলে হয়তো আরও কম দেখাত।

‘আমি কি আপনাকে চিনি?’ বেমক্কা এই প্রশ্নে লোকটার বিরক্ত হওয়ার কথা ছিল, অন্তত তার চেহারা দেখে মনে হয়েছে যে সে অযথাই বিরক্ত হতে পছন্দ করে; কিন্তু হেসে ফেলে সে।

‘আমি কীভাবে বলব?’

‘না, মানে, আপনি কি আমাকে আগে দেখছেন কোথাও?’

‘মনে পড়তেছে না তো।’

‘আমার আপনাকে চেনা চেনা লাগতেছে তো, সেই জন্যই জিজ্ঞেস করলাম।’

লোকটা আবার হেসে ফেলে। তার হাসিটা বেশ উজ্জ্বল, একেবারেই তার জামাকাপড় আর চেহারার মতন মলিন নয়।

এবার সে-ও হাসে, হেসে বলে, ‘আপনি কি ব্যস্ত?’

‘না তো।’

‘তাহলে চলেন চা খাই।’

হয়তো এবার লোকটা সন্দেহ করতে পারে, বিরক্ত না হলেও। যদিও তাকে দেখে সন্দেহ করার মতন কিছু নেই। একটা সাধারণ শাড়ির ওপর সুতির চাদর পরা, কাঁধে বড় একটা ব্যাগ, ব্যাগে তিথি আপার দেওয়া খাবারের বাক্স। বাক্সে কমলালেবু দিয়ে রান্না করা চিনিগুঁড়া চালের জর্দা। জর্দার কথাটা মনে পড়তেই তার আবার খিদে পেয়ে যায়।

যেতে যেতে একলা পথে
নিভেছে মোর বাতি...

‘চায়ের সঙ্গে আর কিছু খাবেন?’ এমন ভঙ্গিতে প্রশ্নটা করল যেন তাকে কত দিন ধরে চেনে এই লোক।

‘শিঙাড়া খাব, আমার খুব খিদা পাইছে।’

‘আপনারে দেইখাই মনে হইছিল।’ সবজান্তার ভঙ্গিতে কথাটা বলে শিঙাড়া অর্ডার করে, আসার সময় হাতে একটা সিগারেট নিয়ে আসে, ‘স্মোক করলে সমস্যা হবে?’

‘নাহ্। আমার হাজবেন্ড অনেক স্মোক করে, অভ্যাস হয়ে গেছে।’

‘কী করেন আপনার হাজবেন্ড?’ সিগারেট ধরাতে ধরাতে যেন ভদ্রতা করেই প্রশ্নটা করল, জানার আগ্রহ তেমন নেই, থাকার কথাও না হয়তো।

‘আমার বোনের সঙ্গে প্রেম করে।’

সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে আবারও সুন্দর করে হাসে লোকটা, বাচ্চাদের পাকা কথা শুনে কিন্ডারগার্টেনের ভালো মিসরা যেমন হাসে।

‘আপন বোন না, মামাতো বোন।’

‘বড় না ছোট?’

‘অনেক বড়, আমার চেয়ে প্রায় দশ বছরের বড় হবে।’

তিথি আপার বয়স কি আসলেই অত বেশি? দেখে মনে হয় না। আজও বাসায় একটা ছেলেদের হুডওয়ালা পুলওভার আর ফ্লানেলের পাজামা পরে ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনো যুবতী। কে বলবে তার দশ বছর আগে বিয়ে হয়েছে আর বাচ্চাও আছে দুইটা?

‘নেন, শিঙাড়া খান।’

‘আপনি এইটা খান,’ ব্যাগ থেকে প্লাস্টিকের বাক্স বের করে এগিয়ে দেয় সে।

‘কী এইটা?’

‘আমার বোনের বানানো জর্দা, খুব ভালো রান্না করেন উনি।’

‘আপনি কেমন রান্না করেন?’ জর্দার বাক্স নেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখা যায় না।

‘আমিও ভালো রান্না করি।’ কথাটা সত্যি। তার রান্না খেয়ে কেউ কখনো খারাপ বলেনি, সাজিদ তো বলেইনি।

‘তাইলে আপনের জামাই ওনার সঙ্গে প্রেম করবে কেন?’

‘ছেলেরা কি রান্নার জন্য প্রেম করে?’ শিঙাড়া মুখে থাকাতে প্রশ্নটা করতে দেরি হয়ে যায় তার।

‘তাইলে কী জন্য করে?’ লোকটা খুব মজা পাচ্ছে, অপরিচিত এক মেয়ে যেচে কথা বলে আবার নিজের স্বামীর পরকীয়ার গল্প করলে তাকে পাগল ভেবে নিয়ে বিনোদন নেওয়া দোষের কিছু নয়।

‘আপনিই বলেন।’

সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে লোকটা বলে, ‘আপনি গান জানেন?’

‘না তো।’

‘আপনেরে দেইখা মনে হয় জানেন, রবীন্দ্রসংগীত।’

‘তাই নাকি? আর কী মনে হয়?’

লোকটা উত্তর দেয় না, দোকানের ছেলেটার কাছে আরেকটা সিগারেট চায়, আর গুনগুন করে গান ধরে, ‘তুমহে দিল্লাগি ভুল যানি পারেগি, মুহাব্বাত কি রাহো মে আ কার তো দেখো...’

হঠাৎ করেই টিমটিমে ফিলামেন্ট বাতিটা নিভে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। দোকানটা অন্যান্য দোকান থেকে একটু দূরে। ইচ্ছা করেই এখানে এসেছে তারা, ভিড় কম বলে। অন্য দোকানগুলোর ক্যাটক্যাটে সিএফএল বাতিগুলোও নিভে গেছে। লোড শেডিং।

ডোন্ট ইউ লাভ হার অ্যাজ শি’জ
ওয়াকিং আউট দ্য ডোর? লাইক শি ডিড ওয়ান থাউজ্যান্ড টাইমস বিফোর?

‘দ্যান তো ওইটা, কী জানি খাইতে দিতে চাইছিলেন।’

সে সামনে রাখা বাক্সটা এগিয়ে দেয়। একটা টেবিল তারা দখল করে বসেছে বলে দোকানদারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই, এখন পর্যন্ত চার কাপ চা আর তিনটা সিগারেট বিক্রি হয়েছে তার।

দোকানদারের কাছ থেকে চামচ চেয়ে নিয়ে জর্দা মুখে দেওয়ার আগে তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় লোকটা।

‘আমি খাব না।’

‘কেন খাবেন না? রাগ কইরা? খাওয়ার উপ্রে রাগ করতে নাই।’

তার হঠাৎ চোখে পানি এসে যায়। মা এভাবে বলতেন, ‘খাওয়া হইলো আল্লাহর নিয়ামত, কিসমতে যা জুটছে, তা খাইতে হয়, নাইলে নাফরমানি হয়।’ আম্মা মারা যাওয়ার পর আর কেউ খাবার নিয়ে সাধাসাধি করেনি। ভাগ্যিস বিদ্যুৎ আসেনি, লোকটা দেখতে পাবে না সে কাঁদছে। আর দেখলেই কী? এত কিছু বলে ফেলেছে যখন।

‘ঘি একটু কম হইছে, মিষ্টিও; নেন, খায়া দেখেন।’

নিজেকে সামলে সে জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা, আপনি কি বাঙালি?’

‘আমারে দেইখা কি ইংরেজ মনে হয়?’ আবার হাসতে থাকে লোকটা। অথচ মধুমালতীর ঝাড়ওয়ালা গেটের সামনে দাঁড়ানোর সময় তাকে বেশ খিটখিটে মেজাজের বদরাগী লোক বলে মনে হচ্ছিল।

‘না, বিহারি মনে হয়।’

এবারে হো হো করে হেসে ফেলে লোকটা। তার হাসির আওয়াজে দোকানদার পেছন ফিরে তাকায়, তার মুখটাও হাসি হাসি।

হাসিতে যোগ না দিয়ে সে তার আটকে রাখা কান্নাটা ছেড়ে দেয়। প্রসঙ্গ পাল্টে সে মায়ের কথা ভুলে যেতে চাইছিল। আহা রে মা, ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রিত থাকা বিধবা মা, ভাইঝিদের ঝি-গিরি করে মেয়ে মানুষ করা মা, আল্লাহভক্ত মা, মানুষে বিশ্বাস রাখা মা। ভালোই হয়েছে, মা নেই, বেঁচে থাকলে কত কষ্ট পেতেন, যখন দেখতেন তাঁর বাপের মতন বড় ভাই, যার মুখের ওপর কোনো কথা কেউ বলতে পারেনি, সেই ভাইয়েরই বড় মেয়ে নিজের প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে দিয়ে যেন ফুফাতো বোনের কত বড় উপকার করল—এমন ভঙ্গিতে পরিবারের সবার পিঠ চাপড়ানি নিচ্ছে কতগুলো বছর ধরে, আর সব প্রমাণ নিয়ে গিয়েও তার মুখের ওপর কিছুই বলতে না পেরে তার রান্না খাবার বাক্সে করে নিয়ে এসেছে সেই মেয়ে...ছোট মেয়ে, পরিবারের সবচেয়ে ছোট, সবার ফরমাশ খাটার মতন ছোট, তিথির পুরোনো জামা পরে বড় হয়েছে বলেই কি তিথির পুরোনো প্রেমিকের সঙ্গেই সংসার করতে হবে তাকে? পুরোনোই-বা বলে কী করে? তাদের প্রেম তো এখনো চলছে। অথচ দুলাভাইয়ের সঙ্গেও প্রেমের বিয়েই তিথি আপার...

‘একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’

‘করেন’ একটু পর বাসায় গেলেই সব শেষ, সেসব ঠিক করে রেখে এসেছে। বাসার সামনের স্টোরে চার শ টাকা বাকি ছিল, চুকিয়েছে, তিনতলার ভাবি তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর তেহারি পাঠিয়েছিলেন বড় বাটিতে, খালি খালি ফেরত দেওয়া ভালো দেখায় না আর অত বড় বাটিতে কী দেবে ভেবে পাচ্ছিল না বলে রয়ে গিয়েছিল বাটিটা, ফেরত দিয়েছে সেটা। বাকি ছিল তিথি আপার সঙ্গে দেখা করা, সেটাও করে এসেছে, যদিও কাজ হয়নি, জিজ্ঞেস করতে পারেনি কেন সে এমন করল, কী ক্ষতি করেছিল সে যে এমন প্রতারণা করতে হলো তিথির...আর সাজিদকে তো আগে চিনত না সে, ক্ষতি করার প্রশ্নই নেই।

‘আপনি কেমনে জানলেন ব্যাপারটা?’

সে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে অন করে। অন্ধকারে সামান্য আলো যেটুকু বের হয়, তাতে তেমন কিছুই দেখা যায় না, সাজিদের ভুলে ফেলে যাওয়া ফোন। চ্যাটবক্স মুছে রাখেনি, এমনকি কোনো পাসওয়ার্ড পর্যন্ত নেই। এতটাই বেপরোয়া...

এখানে ইন্টারনেট নেই, মেসেজবক্সের এসএমএসগুলো খোলে সে। বুঝতে পারে তার হাত কাঁপছে।

‘এটা আপনার জামাইয়ের ফোন?’

‘হুম,’ এগিয়ে ধরে সে, লোকটা পিছিয়ে যায় যেন একটু।

‘না, না, আমারে দেখানোর দরকার নাই, আমি ভাবতেছিলাম আপনি কোনো কারণে ওনারে ভুল বুঝতেছেন কি না।’

‘ভুল বুঝছিলাম, আগে, এখন ঠিকটা বুঝলাম।’

‘উনি কই?’

‘কে? আমার হাজবেন্ড?’

‘জি।’

‘অফিসের কাজে গেছে, বাইরে—বিদেশ।’

‘আপনে তাইলে বাসায় একাই?’

‘হ্যাঁ।’

‘একা থাইকেন না, মায়ের বাড়ি থাইকা আসেন কিছুদিন।’

‘আমার মা নাই।’ মায়ের বাড়িও তো আসলে তিথিদেরই বাড়ি। উঠে দাঁড়ায় সে।

‘আসি, অনেক ধন্যবাদ।’

কহিব তারে আমার প্রিয়ারে আমারও অধিক ভালোবাসিয়ো...

বাসায় ঢুকে সাজিদের ফোনটা আবার অন করে সে। ওয়াই-ফাই নিজে থেকে কানেক্ট হয়ে চ্যাটবক্স নোটিফিকেশন দিতে থাকে। সে একবার খুলে দেখতে চেয়েও দেখে না। তিন দিনে তারা নিশ্চয়ই যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় নেই, তিথি হয়তো জানে ফোনটা তার কাছে, যদিও আজ সারা বিকেলে তার কোনো আচরণেই বোঝা যায়নি সে কথা। খুব স্বাভাবিক, খুব সব সময়ের মতন বাচ্চা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিউটি পারলারে যাওয়ার উপদেশ দিয়ে বাক্সে জর্দা ভরে দিল।

ছোট একটা ব্যাগে দুয়েকটা কাপড়, টুথব্রাশ, চিরুনি আর টুকিটাকি ভরা ছিল। হ্যান্ডব্যাগের ভেতরের ছোট পার্সে রাখা ট্রেনের টিকিটটা ঠিকমতো আছে কি না, দেখে নিয়ে জর্দার বাক্সটা সিঙ্কে রেখে বাসায় তালা আটকায় সে, একবার ভাবে ধুয়ে রেখে যাবে। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টায়।

স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটা বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করে সে। একবার ভাবে, সেই লোকটার ফোন নম্বর থাকলে বেশ হতো, তাকে স্টেশনে আসতে বলা যেত। কেউ বিদায় দিতে না এলে যাত্রাটা কেমন যেন লাগে। পরক্ষণেই মনে হয়, কোন অধিকারেই-বা আসতে বলত তাকে, চেনে না জানে না, অপরিচিত একটা মানুষ। কিন্তু চেনে বলে ভাবত, ভালোবাসাবাসির উদ্দাম রাতগুলোতেও কোনো দিন সন্দেহ হয়নি এই লোকটার মন পড়ে থাকতে পারে অন্য কোথাও।

সে ঠিক করে, এখন থেকে আর সে সাজিদের কথা ভাববেই না। চলে আসার আগে কোনো নোট লিখেও আসেনি সে। কীই-বা লিখত? শুভকামনা? ভালো থাকার আশীর্বাদ? সে কথাও কি আর লিখে জানাতে হবে? যা এত দিন এক ছাদের নিচে থেকে বুঝতে পারেনি সাজিদ, লিখলেই কি পারত?

আধো অন্ধকারে কেউ একজন এগিয়ে আসছে তার দিকে, চোখের কোনা দিয়ে সে দেখেছে। তাকায় না ভালোমতো, চেনা কেউ কি না, সেই লোকটা কি না...অথবা সাজিদই কি না, দেখতেও চায় না সে। একমনে রেললাইনের দিকেই তাকিয়ে থাকে।