তাঁর কণ্ঠে গাওয়া ওই গান আমি আক্ষরিক অর্থেই কান পেতে শুনতাম

>

হাসনাত আবদুল হাই। ছবি: খালেদ সরকার
হাসনাত আবদুল হাই। ছবি: খালেদ সরকার

হাসনাত আবদুল হাই। প্রধান পরিচয় কথাসাহিত্যিক হলেও চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, সংগীত ও ভ্রমণসহ নানা বিষয়ে তাঁর আগ্রহ রয়েছে। তিনি বলেছেন তাঁর প্রিয় ৫ নিয়ে

১. প্রিয় বই

কালজয়ী ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’

আমার প্রিয় বই আর্নেস্ট হেমিংওয়ের দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি। এই উপন্যাসে মাত্র দুটি চরিত্র—মানুষ ও সামুদ্রিক মাছ। এদের কথোপকথনের ভেতর দিয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের চিরকালীন সংগ্রাম এবং সেই সংগ্রামে পরাজিত হয়েও ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হওয়ার সংকল্প প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৬০ সালে প্রথম পড়েছিলাম বইটি। তারপর থেকে কতবার যে পড়েছি! উপন্যাসের মূল চরিত্র বৃদ্ধ সান্তিয়াগো হাঙরের কাছে তার মাছ হারানোর পর ক্লান্ত দেহে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ে এবং সমুদ্রসৈকতে ক্রীড়ারত সিংহকে স্বপ্নে দেখে। মানুষের জীবনের এই পরাজিত না হওয়ার চিরায়ত সত্যকে কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু করার জন্য উপন্যাসটি কালজয়ী হয়েছে।

২. প্রিয় চলচ্চিত্র

চিত্রকলার মতো দৃশ্যমান ‘পথের পাঁচালী’

প্রিয় চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী! এটি প্রথম দেখেছিলাম ১৯৬২–তে, যুক্তরাষ্ট্রে বসে। গ্রামবাংলার এমন নিখুঁত ও হৃদয়গ্রাহী কাহিনিভিত্তিক চলচ্চিত্র অদ্বিতীয়। পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের দক্ষতায় বিভূতিভূষণের অক্ষরে লেখা নীরব কাহিনি এখানে চিত্রকলার মতো দৃশ্যমান এবং সচল হয়ে উঠেছে। খুব ছোট এবং নগণ্য বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সত্যজিৎ রায় তাঁর এই চলচ্চিত্রকে নান্দনিকতার মানদণ্ডে উৎকর্ষের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন। এর প্রতিটি চরিত্রই এমন দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছে যে তাদেরকে অত্যন্ত বাস্তব ও পরিচিত বলে মনে হয়। কাহিনির মূল সুর করুণ হলেও আর্টের স্বার্থে পরিচালক একে নেহাত সেন্টিমেন্টালিটির বিষয় করে তোলেননি।

৩. প্রিয় চিত্রকলা

যুদ্ধবিরোধী চিত্র ‘গুয়ের্নিকা’

পাবলো পিকাসোর ‘গুয়ের্নিকা’ আমার প্রিয় চিত্রকলা। এটি শুধু শান্তির সপক্ষে যুদ্ধবিরোধী চিত্র নয়, এর মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছে অন্যায় ও অসুরের বিরুদ্ধে মানুষের চিরকালীন প্রতিবাদ। ছবিটি সরল বর্ণনামূলক নয়। এর আঙ্গিক কিউবিস্ট ধারার ভিত্তিতে অভিনব। স্পেনের মাদ্রিদে কুইন রাইনা জাদুঘরে এটি আমি সরাসরি দেখেছিলাম ১৯৯৭ সালে। ওই জাদুঘরের একটি ঘরের দেয়ালজুড়ে কেবল এই ছবিই প্রদর্শিত। যে ছবি ছাত্রজীবন থেকে বহুবার দেখেছি সংবাদপত্রে, চিত্রকলায় বইয়ে ও সাময়িকপত্রে, সেটি সামনাসামনি দেখে দারুণভাবে রোমাঞ্চিত হয়েছি। তবে এত বিশাল আকারের ছবি যে দূরত্ব থেকে দেখা প্রয়োজন, সেই স্পেস ওই ঘরে নেই।

গ্রেটা গার্বো
গ্রেটা গার্বো

৪. প্রিয় অভিনেত্রী

জটিল নায়িকার চরিত্র রূপায়ণের গ্রেটা গার্বো

আমার প্রিয় অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বো। গত শতকের চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে হলিউডের চলচ্চিত্রজগতে তিনি ছিলেন একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী। তিনি যে সিনেমায় অভিনয় করেছেন, সেটিই বক্স অফিসে হিট করেছে, সব শ্রেণির দর্শকের মন জয় করেছে। তিনি আমার কাছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী আনা কারিনিনা সিনেমায় জটিল নায়িকার চরিত্র রূপায়ণের জন্য। মানসিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত একটি মানুষ, কীভাবে হতাশা, অস্থিরতা ও বিভ্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়, আনার চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি তার দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

৫. প্রিয় গান

কান পেতে শোনা গান

রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের গান ‘আমি কান পেতে রই’ আমার প্রিয় গানের তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে। এটি প্রিয় হওয়ার কারণ দুটি। প্রথমত, এটিই আমার জীবনের প্রথম শোনা গান। তখন আমার বয়স চার, থাকি ভারতের রানাঘাটে। আমার বড় বোন সংগীতশিক্ষকের কাছে গান শিখতেন। তাঁর কণ্ঠে গাওয়া ওই গান আমি আক্ষরিক অর্থেই কান পেতে শুনতাম। পরে শুনেছি এ গানের গায়িকা কানন দেবী। এই গান শোনার স্মৃতি এবং পরবর্তী সময়ে কানন দেবীর কণ্ঠে আরও গান শোনার অভিজ্ঞতা তাঁকে আমার প্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখনো আমি মাঝেমধ্যেই তাঁর গান শুনি—রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক গান।