ঘের

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

শহরের একটি বেসরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক চামেলি। সপ্তাহের অধিকাংশ দিনেই ওর ক্লাস থাকে দুপুরের দিকে। সেদিন সকালবেলা ড্রয়িংরুমের একটা রকিং চেয়ারে দোল খেতে খেতে ও একটা বাংলা খবরের কাগজ পড়ছিল। না, পত্রিকার রাজনীতি, অর্থনীতির গোমড়ামুখো পাতাগুলো নয়, সবচেয়ে জেল্লাদার খবরে ঠাসা বিনোদনের পাতাগুলোর দিকেই ওর মূল আকর্ষণ। সেদিন সকালে মুম্বাইয়ের কোনো এক ‘নায়িকার বিয়ের পিঁড়িতে বসা’র জটিলতা নিয়ে একটা দারুণ খবরের ভেতর ওর মাথা যখন সেঁধিয়ে আছে, ঠিক সেই সময় ড্রয়িংরুমের দরজায় একটা অদ্ভুত কড়া নাড়ার শব্দ হলো। আর সেই সঙ্গে দরজার ওপর শরীর আধা এলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীকণ্ঠের ক্লান্ত চাপা গোঙানির শব্দ।

তাড়াতাড়ি কাগজ ফেলে দরজার ছোট গোল কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সে দেখল, একটা ষোলো-সতেরো বছরের মেয়ে দরজার কড়া ধরে থেকে থেকে ঝাঁকি দিচ্ছে আর হাঁপাচ্ছে। পোশাক-আশাক থেকে তাকে কোনো বাড়ির কাজের মেয়ে বলে মনে হয়। দরজার এপাশে দাঁড়িয়েও সে তার দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পেল। তার অসহায় নারীকণ্ঠের চাপা কান্নার শব্দটাও যেন এরই মধ্যে আরও কিছুটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

দরজা খুলে চামেলি মেয়েটাকে ঘরের ভেতর নিয়ে এল। মেয়েটা দীর্ঘাঙ্গি, রং শ্যামলা, শরীর পুরুষ্টু, কিছুটা নেশা ধরানো। পরনের শাড়ি ওর শরীরের ভাঁজে ভাঁজে যেন ফুটে রয়েছে। মাঝেমধ্যে শহরের কোনো কোনো বাড়ির কাজের মেয়েদের মধ্যে যেমন আচমকা দুয়েকটা অসাধারণ মেয়ে দেখা যায়, প্রায় তেমনি।

মেয়েটার দৃষ্টি ভয়ার্ত, বিহ্বল, পেছন ফিরে মাঝেমধ্যেই দরজার দিকে তাকাচ্ছে—যেন কেউ ওকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধাওয়া করে ওর পেছনে এসে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ার পাঁয়তারা করছে। ওকে দেখলেই বোঝা যায়, বেশ লম্বা পথ একটানা জোরে হেঁটে ও এ পর্যন্ত এসেছে। ওর দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ওর বুক তখনো জোরে জোরে ওঠানামা করছে।

তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে মেয়েটাকে ভালো করে দেখার জন্য চামেলি ওর মুখোমুখি দাঁড়াল। দরজা বন্ধ হওয়ার পর মেয়েটার মুখে যেন কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু ঘণ্টা দেড়েকের শারীরিক শ্রান্তি ও মানসিক ধকলে কেমন যেন নেতিয়ে গেছে, যেন কিছুটা টলছে, পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।

হঠাৎ ঝপ করে মেয়েটা হাঁটু গেড়ে বসে বিকারগ্রস্তের মতো চামেলিকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল। ওর চোখের দৃষ্টি অসুস্থ, ভীতবিহ্বল। ‘আপা, আমারে বাঁচান’ বলে কাঁদতে কাঁদতে সে ড্রয়িংরুমের দরজার দিকে আতঙ্কিত দৃষ্টিতে থেকে থেকে তাকাতে লাগল।

ঘটনার আকস্মিকতায় চামেলিও থতমত খেয়ে গিয়েছে। নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটাকে মাটি থেকে তুলে ডিভানের একধারে বসিয়ে সামান্য কিছু খাবার এনে দিল। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি সুস্থির হলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়েটির গল্প শুনতে লাগল চামেলি।

মেয়েটির বাড়ি কুষ্টিয়ায়, নাম রোকসানা। মা নেই, থাকত নিজেদের বাড়িতেই এক বিধবা ফুপুর সঙ্গে। বাবা শুকুর আলী ছিল শহরের একটা মোটর গ্যারেজের মেকানিক। তার পাঠানো টাকায় কোনোমতে চলে যেত ওদের। কিন্তু বছর দুই আগে হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় সে মারা গেলে ওই মানুষ দুটির চোখে অন্ধকার নেমে এল। ওর বাবা প্রায় কোনো টাকাপয়সাই রেখে যায়নি মরার সময়ে। ফলে কিছুতেই দুবেলা খাবার জুটতে চায় না। দুর্ঘটনার সময় ও পড়ত ক্লাস এইটে। ওই পড়ালেখা দিয়ে কোথাও চাকরিবাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া এর মধ্যে ওর শরীরও বেশ বাড়বাড়ন্ত হয়ে উঠেছে, পাড়ার দুটো ছেলে সারাক্ষণ উৎপাত করছে। নিজেদের ঘরকেই যেখানে নিরাপদ মনে হচ্ছে না, সে অবস্থায় পাড়ার এবাড়ি-ওবাড়ি গিয়ে কাজ করা বা চাকরি করে জীবন বাঁচানো আদৌ সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত ওর ফুপু দুটো বাড়িতে ঠিকা কাজ জুটিয়ে কোনোমতে পরিস্থিতি সামাল দিল।

তবু ফুপুর রোজগারে ওদের দুজনের এই সংসারটি কিছুতেই যেন আর চলে না। ক্ষুধার চাবুকে পেটের ভেতরটায় যেন একেক সময় আগুন ধরে যায়। ঠিক এই কষ্টের সময় হঠাৎ করেই ওদের সামনে একটা আশার আলো দেখা দিল।

ঢাকার এক ব্যবসায়ীর বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে রোকসানার একটা চাকরি জুটে গেল। কাজ জুটিয়ে দিল মাইল দেড়েক দূরের রহিমের মা। সে ঢাকায় থাকে, এ অঞ্চলের অনেক মেয়েকে এ পর্যন্ত সে ভালো ভালো বাসায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছে।

ভালো চাকরির কথা শুনেও রোকসানার ফুপুর ফাঁপর বেড়ে গেল। রহিমের মাকে বলল, কোনো গার্মেন্টস-টারমেন্টসে দেওন যায় না?

‘কও কী, ওইখানে গেলে ও তো ছাড়া গরু হইয়া যাইব। ওর খোঁজ নি তোমরা আর পাইবা?’

‘কেন, শেখেগো বাড়ির কাজলি যে কাজ করে গার্মেন্টসে। একটা ভালো পোলারে তো বিয়া কইরা সুখেই আছে।’

‘কী জানি কী সুখে আছে। ওইখানে তো শুনছি ফ্যাক্টরির সাহেবগুলা সব একেকটা আস্ত রাক্ষস। প্রত্যেক দিন নতুন মাইয়া না অইলে তাগো রোচে না। এর চাইয়া এই বাড়িতেই দেও। যেমন ভালো সাহেব, তেমনি বিবি।’

চাকরি হয়ে গেল রোকসানার। সত্যি ভালো মানুষ দুজনই। যেমন দেখতে, তেমন ব্যবহারে। একটা তিন বছরের মেয়ে আছে তাদের। মনে হয় বাড়িজুড়ে একটা সাদা ফুলের মতো ঘুরে বেড়ায় মেয়েটা। কদিন বেশ ভালোই গেল রোকসানার। কাজ তেমন নয়, বাড়ির মালিকদের ব্যবহার ভালো, ভালো খাওয়া-পরা। বিরাট বাড়িটায় উড়ে উড়ে রোকসানা কাজ করে চলল।

কাঁদতে কাঁদতে রোকসানা বলে যায়, ‘দিন দশেক পর বাড়ির কর্ত্রী দিন সাতেকের জন্য বাপের বাড়ি গেল। রাত্রে বিরাট রান্নাঘরের একপাশের মেঝেতে আমি ঘুমাইয়া আছি, হঠাৎ দেখি অন্ধকারের মধ্যে কে যেন দুই হাতে আমার মুখ চাইপা ধরছে। আমার নিশ্বাস বন্ধ হইয়া আসতে লাগল। আমি নিজেরে ছাড়াইয়া নেওয়ার জন্য অন্ধকারে দরজার দিকে তাকাইয়া দেখি দরজা ভিতর থেইকা বন্ধ। মনে হইল মইরা যামু। কাটা মাছের মতো উথাল-পাতাল করতে লাগলাম, কিন্তু সেই লোহার সাঁড়াশির মতো হাত দুইটারে একচুল নাড়াইতে পারলাম না। তখন সেই জন্তুটা আমার শরীরটারে যেন ছিঁড়াখোঁড়া কইরা খাইতে লাগল। রক্তে আমার শরীর-বিছানা ভাইসা গেল।

একসময় আমার শরীর দুর্বল হইয়া এক পাশে এলাইয়া পড়ল। আমি চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। জানোয়ারটা আমারে ছাইড়া বিছানা থেইকা আস্তে আস্তে উইঠা চুপ কইরা দরজা খুইলা বাইর হইয়া গেল। আমার চোখ তখন ঝাপসা। তবু সেই ঝাপসা চোখেই শয়তানটারে আমি চিনলাম।

এরপর এই অত্যাচার দিনের পর দিন বাড়তে লাগল। যখনই বিবি সাহেব বাসায় না থাকত, তখনই তাগো ঘরের মধ্যে নিয়া আমারে অত্যাচার করত।

এদিকে এই বাড়ি থেইকা আমার পালানের পথ নাই। দারোয়ানেরে সারাক্ষণ লাগাইয়া রাখছে আমার পিছনে। ভালো কাজ করি বইলা বেতন ডবল কইরা দিছে—সেই টাকা সোজা চইলা যায় ফুপুর কাছে। কী কইরা আমি বাঁচি!

আমি পালানের চেষ্টা করতে লাগলাম। আইজ দারোয়ান খাইতে বসছে, সেই সময় দরজা খুইলা রাস্তায় নাইমা পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দারোয়ান টের পাইল। সে আমারে ধরার জন্যে ছুইটা আসতে লাগল। আমি পিছনে ফিরা সবার মাথার ওপর দিয়া অনেক দূরে তার মাথা দেখতে পাইলাম। হঠাৎ সামনে একটা চৌরাস্তা পাইয়া গেলাম। একটা রাস্তায় ঢুইকা কিছুটা সামনে যাইয়া একটা বাড়ির আড়ালে লুকাইয়া পড়লাম। দারোয়ান আমারে আর খুঁইজা পায় নাই।

এরপর এক মাইল হাঁইটা আপনার বাসায় আসছি। খালাম্মা, আমারে বাঁচান।’

ঘটনাটা শুনতে শুনতে চামেলির শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা তীক্ষ্ণ ঠান্ডা স্রোত যেন থেকে থেকে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছিল।

রোকসানার কথা শেষ হলে ও তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে আরও ভালো করে সেটা লক করে দিল—যেন নিশ্চিত হলো দরজার ওপাশে কেউ এসে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনোমতেই ভেতরে ঢুকতে না পারে।

বীভৎস কাহিনিটা শুনে রোকসানার ওপর চামেলির একটা মায়া পড়ে গেল। এমন দুর্ভাগ্য মানুষের হয়! এমন কত অসহায় মেয়ে এ দেশে যে তিলে তিলে শেষ হচ্ছে, কে তার খবর রাখে?

রোকসানার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বলল, ‘তুই আমার কাছেই থেকে যা। এখানে থাকলে তোকে কেউ খুঁজে পাবে না।’

মাস তিনেক পর আবার একদিন বেলা ১১টার দিকে চামেলির ড্রয়িংরুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। কিন্তু এবারের শব্দটা আগেরবারের মতো ভয় বা আতঙ্কের নয়, দরাজ আর জোরালো। রোকসানা গিয়েছিল দরজা খুলতে। খুলতেই চমকে উঠল ও। দেখল সামনে দাঁড়িয়ে সেই ভদ্রলোক। ধাক্কা খাওয়া মানুষের মতো পেছন ফিরে ‘মা গো’ বলে একদৌড়ে বেডরুমে ঢুকে চামেলির পেছনে গিয়ে লুকাল। ‘কী হয়েছে’ বলে চামেলি ওর দিকে তাকাতেই দেখল ওর চেহারা পুরো বিভ্রান্ত, ফ্যাকাশে। রোকসানা গাছের পাতার মতো থরথর করে কাঁপছে।

চামেলি ধমকে উঠল, ‘কী হয়েছে, বলবি তো?’

রোকসানা কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলল, ‘সেই মানুষটা।’ বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। ভয়ে, আতঙ্কে ওর মুখ কাগজের মতো সাদা।

চামেলি পায়ে পায়ে ভদ্রলোকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

চামেলির চোখাচোখি হতেই একগাল হেসে ভদ্রলোক বললেন, ‘রোকসানা কোথায় পালাল, বলুন তো? একদিন তুচ্ছ কী নিয়ে আমার স্ত্রীর ওপর অভিমান করে সেই যে বাসা থেকে পালিয়ে এল, আর ফিরল না। এত সব সামান্য ব্যাপার নিয়ে এ রকম পাগলামি করলে কি হয়!’ জন্তুটার নির্লজ্জতা দেখে রাগে কিছুক্ষণের মতো ভাষাহীন হয়ে গেল চামেলি। ওর সারা গা যেন জ্বলে যাচ্ছে। সাপের মতো শীতল চাউনি মেলে ও লোকটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। যেন ধারালো কোনো কাল্পনিক ছুরি দিয়ে ওকে ফালি ফালি করে ফেলবে।

ভদ্রলোক পুরো নির্বিকার। তিনি মেয়েটার অভিভাবকের মতো মধুমাখা গলায় একইভাবে বলে চললেন, ‘কই রে রোকসানা, গেলি কোথায়? আয়! চল। তুই চলে আসার পর আমার মাইশা তোর নাম ধরে কাঁদতে কাঁদতে মরে যাচ্ছে যে!’

ভদ্রলোক বলে চললেন, ‘কই, চল রোকসানা। আমার মেয়েটাকে বাঁচা। তুই আমাদের ভালো না বাসলে কী হবে। আমরা তোকে ঠিকই ভালোবাসি রে। না হলে সেদিন এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের কাদের ড্রাইভার তোকে বারান্দায় কাপড় নাড়তে দেখতে পাবে কেন, বল?’

রোকসানার দিক থেকে সাড়াশব্দ না পাওয়ায় লোকটি এক পা, দুই পা করে একসময় বেডরুমের দিকেই এগোতে শুরু করে দিলেন। ‘তুই আয় রোকসানা। তোর খালাম্মা প্রতিদিন তোর কথা বলে বলে শুধু হাহুতাশ করে।’

লোকটাকে এগোতে দেখে চামেলি চেঁচিয়ে উঠল, ‘এক পা এগোবেন না, খবরদার। এক পা-ও না। দারোয়ান। দারোয়ান।’

ভদ্রলোক হেসে বললেন, ‘সরি, ম্যাডাম, খুবই লজ্জিত। আমার অন্যায় হয়ে গেছে। ও আমাদের বাড়ির মেয়ের মতো তো!’ বলে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল।

ভদ্রলোক চলে গেলে বাড়ির সবাই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। চামেলির স্বামীর পুরো ঘটনাই জানা ছিল। অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সিকিউরিটিকে বলে তিনি বাড়ির নিরাপত্তা আরও জোরদার করলেন।

সপ্তাহ তিনেক পরে আবার একদিন একই রকম শব্দে দরজার কড়া বাজল। দরজা খুলতেই চামেলি দেখতে পেল সেই ভদ্রলোক। তবে একা নন, সঙ্গে এক বিশালদেহী পুলিশ অফিসার, পেছনে জনাকয় সেপাই—হুড়মুড় করে দরজা দিয়ে ঢুকছে। পুলিশ অফিসার চামেলিকে বললেন,‘এই বাড়িতে রোকসানা বলে কেউ থাকে?’

‘হ্যাঁ।’

‘তাকে নিয়ে আসুন। আমরা তাকে অ্যারেস্ট করতে এসেছি।’

‘অ্যারেস্ট!’ চামেলির প্রায় সংবিৎ হারানোর অবস্থা।

‘অ্যারেস্ট করার মতো কী করেছে ও?’

ও এই ভদ্রলোকের বাড়ি থেকে মাস চারেক আগে ত্রিশ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়েছে। তারপর চামেলিকে কোনো কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়ে প্রায় হুকুমের স্বরে বলল, ‘নিয়ে আসুন মেয়েটাকে।’

ভেঙে পড়া রোকসানা নিঃস্বের মতো এগিয়ে আসতেই দুজন পুলিশ খপ করে দুদিক থেকে ওর দুহাত চেপে ধরে দরজার বাইরে নিয়ে গেল। যেন একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশন শেষ করেছে—এভাবে পুলিশ অফিসার আর ভদ্রলোকের পেছনে বাকি সবাই রোকসানাকে নিয়ে বুটের শব্দ তুলতে তুলতে সিঁড়ি দিয়ে উধাও হয়ে গেল।

রাস্তায় নেমে ভদ্রলোক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে বারে বারে হ্যান্ডশেক করে তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানালেন। পুলিশ অফিসার তাঁর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে চোখ টিপলেন।