অপরাজেয়

কতক্ষণ হলো ডাকছি, শুনছ?

পাশে ইরিনকে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে দেখে হেডফোনটা খুললাম।

আমি ব্যস্ত।

তুমি এই গেম নিয়ে সব সময় ব্যস্ত, তাহলে কথা কখন বলব?

ব্যস, শুরু হয়ে গেল! আমি খেলতে বসলেই তোমাকে কথা বলতে হবে?

সব সময় খেললে তো তা-ই করতে হবে।

সব সময় খেলি? তুমি যখন অফিসে থাকো, তখন বাচ্চাদের খেতে দিই না?

ওই একটাই, তা-ও আবার চৌদ্দবার ফোন করে মনে করিয়ে দিলে। না হলে ওরা খাবারের অভাবে...’

ওই একটাই মানে? ইরিন কী বলতে চায়? মাথাটা গরম হয়ে গেল। কানে তুলো গোঁজার মতো হেডফোন আটকে দিলাম। কম্পিউটারের স্ক্রিনে দ্বীপের চারদিকে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। দ্বীপটা ছোট। বৃত্তের পরিধি ক্রমশ ছোট হতে হতে কেন্দ্রবিন্দুর দিকে তেড়ে আসছে। ওদিকে এখনো অন্তত বাইশজন বেঁচে আছে। ঝড়ের কবলে পড়লে মৃত্যুই একমাত্র পরিণতি। এ রকম সময়ে অন্যদিকে তাকানো চলে? ইরিনকে বিষয়টার ভয়াবহতা বুঝিয়ে বললেও বুঝবে না। প্রায় জিতে যাওয়া গেমে হারার কষ্ট ইরিন কী বুঝবে? আর এ তো শুধু কষ্ট না, এই মুহূর্তে টুইচ সাইটে গেমটা সরাসরি দেখছে সারা পৃথিবীর লাখখানেক মানুষ। তাদের মধ্যে খুব বেশি কেউ কি আমাকে যেনতেনভাবে হারতে দেখেছে? মানসম্মান বলেও তো একটা জিনিস থাকে!

এতক্ষণ কী বলেছি, শুনেছ?

ইরিন কম্পিউটার স্ক্রিনের প্রায় সামনে এসে আবারও হাত নাড়ছে। ওর শার্টের হাতায় মনিটরের কিছু অংশ ঢেকে যাওয়ার সুযোগে একটা গুলি ঠিক আমার দিকে ছুটে এসেছিল। দেখতে পাইনি বলে লাফিয়ে সরতেও পারিনি। ভাগ্যিস, গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। না হলে কী লজ্জার ব্যাপারটাই না হতো!

আরে বাবা, শুনতে পাচ্ছ নাকি? ইরিন একঝটকায় আমার কান থেকে হেডফোন খুলে নিল। তার গলা উঁচুতে চড়ে গেছে। আমিও আমারটা চড়িয়ে বললাম, তুমি কি আজকে আমাকে জিততেই দেবে না? আচ্ছা, আমাকে খেলতে দেখলেই তোমার কী হয়? হেডফোনের সঙ্গে লাগানো মাইক্রোফোন ইরিনের হস্তগত হলেও মনিটর দেখে আমি চালিয়ে গেলাম খেলাটা। দর্শক কিছুক্ষণ বঞ্চিত হলো রানিং কমেন্ট্রি থেকে। তার আগে তারা ইরিনের চিৎকার শুনে থাকবে হয়তো। বিজাতীয় ভাষাকে অর্থহীন যান্ত্রিক শব্দ ধরে নেবে।

তোমাকে সকালেই বলেছিলাম আজ বাচ্চাদের নিয়ে একসঙ্গে পার্কে যাব। অন্তত পাঁচ মাস ওদের পার্কে নেওয়া হয়নি। ঘাসের স্পর্শ ওরা ভুলে যাচ্ছে। শুনছ কী বলছি?

হ্যাঁ হ্যাঁ, শুনেছি শুনেছি।

তাহলে বলো।

কী বলব?

পার্কে যাবে না? বাচ্চাদের নিয়ে, ওরা পাঁচ মাস ধরে...

পার্কে কেন? দেখছ না খেলার লাইভ স্ট্রিমিং হচ্ছে? এর মধ্যে তুমি কী সব আবোলতাবোল...তা ছাড়া বাইরের বাতাসের প্রতি ইউনিটে প্রায় এক হাজার ন্যানোগ্রাম সিসা। অক্সিজেন কোথায় যে পার্কে নিয়ে যাচ্ছ? বাড়িতে আর গাড়িতে ফিল্টার লাগানো আছে দেখে টের পাও না। বাই দ্য ওয়ে, পার্কে এখনো ঘাস গজায় নাকি? আমি হাসলাম।

বাচ্চাদের হাতে ট্যাব ধরিয়ে দাও, খেলুক।

বাচ্চাদের কোলের ওপরে ট্যাব ছিলই। মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে ছিল দুজন। মা-বাবার চেঁচামেচি তাদের স্পর্শ করে না। এই সব মানবিক ক্যারিকেচারের মধ্যে না পড়াই ভালো। ট্যাবে কিছু চলছে, তারা আছে এক ঘোরের মধ্যে। একজন মিটিমিটি হাসছে, আরেকজন বিস্ফারিত চোখে ট্যাবের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনের হাত থেকে হেডফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কানে আটকানোর আগমুহূর্তে শুনলাম, আচ্ছা, সংসারই যখন করবে না, তাহলে বিয়ে করেছিলে কেন?

এটা একটা প্রশ্ন বটে! কিন্তু আমারই-বা কী দোষ, আমি কি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম? তখন ইউটিউবে আমার হাজার হাজার লাইক পড়া গেমের ভিডিও দেখে পটে গিয়েছিল ইরিন। লাখ লাখ প্রদর্শন আমার আয় বাড়াচ্ছিল হু হু করে। তার ওপরে আনকোরা সব গেমে আমার না হারার প্রবণতা ওকে পাগল করে তুলেছিল। ওর কাছে তখন আমি সুপারহিরো! আমাদের সমবয়সী অনেকেই তত দিনে বিয়েশাদি করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিয়েটিয়ের নিয়ম যে টিকবে না, দূরদর্শী লোকেরা বুঝে ফেলেছিল। গেমিং ক্যারিয়ারের জন্য এতটা সময় আর মনোযোগ দিতে হলে সংসার টিকবে কেন? তা ছাড়া ফালতু ওসব একসঙ্গে থাকাটাকা। ‘আমাদের’ বলে কিছু ভাবতে শেখা তখন পুরোনো ধাঁচের ধারণা। সবখানে ছিল ‘আমি’ ‘আমি’ ধ্বনির জয়জয়কার। আমি আসলেও চাইনি বিয়ে হোক। এই তো বেশ ছিল, সারা রাত সেলফোন কোম্পানিদের দেওয়া বিনে পয়সার ডেটায় গুজুরগুজুর করা, মাঝেমধ্যে গেমে জেতার উল্লাস, ফোনের ওপাশে ইরিনও উত্তেজিত, চেয়ার থেকে তার লাফিয়ে ওঠার শব্দ, লাইভ স্ট্রিমিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুজনেরই ফোনে থেমে থেমে কুলকুল স্রোতের মতো কথা। সকাল হলে ঘুমিয়ে পড়তাম আমরা। এসব কি ইরিন লক্ষ করেনি? তাহলে বিয়ের জেদ উঠল কেন তার? উঠল তো উঠল, বিয়ে করেই ছাড়ল। তারপর নিয়মকানুন বদলে আমাকে পাঠাল চাকরি করতে। নিজেও শুরু করল। এসব কি আমাকে দিয়ে হয়? সারা রাত গেম খেলে দিনে অফিসের টেবিলে ঘুমাতে শুরু করলাম আমি। একের পর এক চাকরি গেল। অবশ্য চাকরি-বাকরি থাকুক, সে আমিও চাইনি। তবে বাড়ির বাইরে যাচ্ছিলাম বলে ‘পোকিমন গো’ গেমটায় দক্ষতা বাড়ছিল। হাঁটতে হাঁটতে খেলতে গিয়ে একদিন গাড়ির নিচে পড়ে গেলাম। হাতের ফোনটা উড়ে গিয়ে কোথায় পড়ল কে জানে। দুই মাস হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফেরার পর ইরিন বলল, থাক, বাড়িতেই থাকো। এমনিতেও তো চাকরি টিকছে না, তার ওপরে জীবনের ঝুঁকি। আমার চাকরি আছে, অসুবিধা হবে না। আমার জন্য ভালোই হলো, চাকরি করতে গিয়ে একের পর এক সাড়াজাগানো গেমে দক্ষতা কমে যাচ্ছিল। চোখের সামনে নামডাকওলা অন্যেরা ‘কল অব ডিউটি’ কিংবা ‘ডাইন্যাস্টি ওয়ারিয়র’ গেমগুলোতে একেক দিন আমাকে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিল। সেটা শুধু আমার কেন, ইরিনেরও ভালো লাগত না।

ইরিন আমার পাশে দাঁড়িয়ে কী যেন করছিল। ওর শরীর ফুলে ফুলে ওঠা দেখে মনে হচ্ছিল ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কাঁদুক। আমাদের স্মৃতিময় ‘ফোর্টনাইট’ গেমটা খেলছিলাম আমি। সেই ২০১৯ সালে, টুইচ সাইটে এই গেমের লাইভ স্ট্রিমিং দেখে ইরিন শেষ অব্দি আমার জন্য দিওয়ানা হয়েছিল। কত রাত, কত হাসি-ঠাট্টা এই গেমের একেকটা দৃশ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে! ইরিন কি সেসব রোমন্থন করে কাঁদছে? যখন আমাকে একটা পুরো বাক্যও শোনাতে পারে না, তখন অবশ্য প্রায়ই এভাবে কাঁদে, ফাঁকে ফাঁকে মুখ আর হাত নাড়ানো দেখে বুঝি, কথাও বলে। কিন্তু আমারইবা কী করার থাকে, এই গেমের ঝামেলা তো ইরিনের জানা!

উড়ন্ত এক বাসে করে এক শজন মানুষকে নির্জন এক দ্বীপে নামিয়ে দেওয়া হবে। তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের শত্রু। বাকি নিরানব্বইজনকে খুন করে কেবল নিজেকে টিকে থাকতে হবে। অথচ বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার সময়ে হাতে কোনো অস্ত্রই থাকবে না। অস্ত্র খুঁজে বের করতে হবে দ্বীপের বিচিত্র জায়গায় লুকিয়ে রাখা একেকটা সিন্দুক থেকে। যে আগে পাবে, সে-ই সমানে খুন করতে পারবে। বাস থেকে নামার সময়ে ইরিন বরাবর ফোনের ওপাশ থেকে চিৎকার করে উঠত, আই ক্যান সি ইউ, মাই গ্ল্যাডিয়েটর! আমার তখন বুকটা ফুলে উঠত। প্যারাস্যুট পিঠে বেঁধে যখন উড়ন্ত বাস থেকে দ্বীপের মাটিতে লাফ দিতাম, মনে হতো গ্ল্যাডিয়েটরের বেশে বীরদর্পে প্রতিপক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর অ্যাম্ফিথিয়েটারের উঁচু ধাপে মাথায় ঘেরওলা হ্যাট পরে ধবধবে সাদা গাউনে বসে আছে ইরিন।

আচ্ছা, তুমি কি আসলেই আমার কোনো কথা শুনতে পাচ্ছ না? ইরিনের কান্নাভেজা কণ্ঠস্বর।

শুনতে পাচ্ছিলাম। ইরিন কাঁদছে কি না, বোঝার জন্য কানের হেডফোনটা সামান্য সরিয়ে আটকেছিলাম। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার দিকে অবশ্য তাকাতে পারছিলাম না। খানিক আগে ওর দু-চারটা কথার উত্তর দিতে গিয়ে তিনজনকে মারার সুযোগ হাত ফসকে গেছে। বোকামির এই কষ্টটা মনে মনে বহুদিন বয়ে বেড়াতে হবে।

কী পাও এসব গেম খেলে? কী হবে এত জিতে? সত্যিকারের জীবনের দিকে তাকাও। ইরিন তার চোখমুখ মুছে নিয়েছে।

সত্যিকারের জীবন মানে? এটাই তো জীবন! আমি হারলে তোমার ভালো লাগবে?

এই সমস্ত কিছু সাজানো, কোনো সত্যিকারের সমস্যা নয়, বোঝার চেষ্টা করো।

আশ্চর্য! সত্যিকারের সমস্যা নয় কেন? দিনে দিনে গেমগুলো এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, যেন মানুষ রাজ্যের সমস্যা আর সমাধানের ঝক্কি নিয়ে সম্পূর্ণভাবে তাতে ডুবে যেতে পারে। আর তুমি কি না বলছ...

আমি সেটাই বলছি, এতটা ডুবিয়ে তোমাকে আর কত অথর্ব করে দেবে এসব...

অথর্ব মানে? খেলতে বসলে তোমার ঝগড়ার চোটে আজকাল আমি প্রায়ই হেরে যাচ্ছি। আমার লাইভ ভিডিওর ফলোয়ার কমে যাচ্ছে, আয়ও যাচ্ছে কমে। কদিন হলো তুমি একটু চাকরি করে খাওয়াচ্ছ দেখে আমাকে অথর্ব বলছ?

বলছি। এসব বাদ দাও।

দেব না। কী করবে? আর তোমার দোষে হারছি বলে তুমিই তো সংসার চালাবে, ঠিক না?

তুমি এ রকম করলে আমি কিন্তু চলে যাব।

চলে যাবে মানে? চলে যাবে মানে কী?

কানে টাইট করে হেডফোনটা আটকে নিলাম। ইরিনের অর্থহীন আলাপ শুনে গেমটা মাটি করা ঠিক নয়। এমন করতে থাকলে গেমিং জগতে আমার দুর্নাম হয়ে যাবে। ইরিন জাহান্নামে যাক। ওদিকে এখনো অন্তত আটজন বেঁচে আছে। খানিক আগে নবম জনকে মারতে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রটা আমার হাত থেকে ছিটকে দূরে কোথাও ছিটকে গেছে। দ্রুত আরেকটা খুঁজে পেতে হবে। পাগলের মতো আমি দ্বীপের আনাচে-কানাচে কাঠের আর লোহার বাক্সগুলো খুলে খুলে দেখছি, ঝোপঝাড়ে তোলপাড় করে খুঁজছি। ওদিকে চারদিক থেকে এগিয়ে আসা ঝড়ের বৃত্ত দ্বীপটাকে ছোট্ট উঠোনের মতো করে ফেলেছে। এরই মধ্যে আমাকে আরেকটা অস্ত্র খুঁজে পেতে হবে, পেতে হবে আটজনকে মারার মতো যথেষ্ট গুলি...আমি গ্ল্যাডিয়েটর, সামান্য অবহেলার জন্য কারও হাতে নির্মমভাবে মরতে পারি না।

আমি সত্যিই চলে যাব। খেলো তুমি। যত্ত খুশি খেলো। কানের খুব কাছে এসে বলাতে হেডফোনের ফাঁক দিয়ে ইরিনের অস্পষ্ট অথচ দৃঢ় গলা শুনতে পেলাম। কী ভালোটাই না বেসেছিলাম আমি তোমাকে, এই এখনো!

ইরিনের কথাগুলো কানে যেতেই মনে মনে বললাম, তুমি আমাকে এত ভালোবেসেছ, তা আমাকে শোনাচ্ছ কেন? তোমার ভালোবাসার দায় আমি নিতে যাবইবা কেন! আমি যে গেম ভালোবাসি, তা কি তুমি জানতে না? মনে মনে বললেও মুখ ফুটে বলার সময় নেই তখন আমার। পাঁচজনকে মারা হয়ে গেছে। দর্শকেরা উত্তেজিত। অনুপ্রেরণার নানান মন্তব্য টুংটাং শব্দে মনিটরের কোণে ভেসে উঠছে। শত্রু আর মাত্র তিনজন। আমিই জিতব, আমিই।

ইরিন কি বাচ্চাদের কিছু বলেছে? একজন গুনগুনিয়ে কেঁদে চলছে। সবাই মিলে গেমটা ভেস্তে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ঘাড়ের ওপরে কাঁদতে থাকা শিশুর ছোট্ট হাতের স্পর্শ পেলাম। একমাত্র এবং সর্বশেষ শত্রু তখন আমার সামনে অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে। গ্ল্যাডিয়েটরের যুদ্ধের শেষ মুহূর্তের মতো, হয় আমি, নয়তো সে। ছোট্ট হাতটা ঝাঁকি দিয়ে আমার ঘাড়টা নাড়িয়ে দিল। মাত্র দুটো গুলি ছিল, হাত নড়ে একটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেল। সেই ফাঁকে শত্রুর গুলি আমার হাতে এসে লাগল। অস্ত্রটা পড়ে গেল হাত থেকে। চোখের পলকে উঠিয়ে নিয়ে শেষ গুলিটা শত্রুর মাথা লক্ষ করে ছুড়লাম। ঘাড়ের ঝাঁকাঝাঁকিতে সেটা সঠিক জায়গায় আঘাত করা নিয়ে সন্দেহ থেকে গেল। উত্তেজনায় আর রাগে তখন আমার শরীর কাঁপছে। গরগর করতে করতে পাশ ফিরে বাচ্চাটাকে ছোঁ মেরে শূন্যে তুলে ধরলাম। তারপর যতটা পারা যায় উঁচুতে উঠিয়ে মেঝেতে দিলাম এক আছাড়। কিছু ভাঙার শব্দ ক্ষীণ হয়ে কানে এল। হেডফোন খুলে দেখি কোনো কান্না নেই। খানিক দূরে আরেক বাচ্চা হাসি হাসি মুখে ট্যাবের দিকে তাকিয়ে আছে। চলে যাওয়ার জন্য ব্যাগ হাতে ইরিন দাঁড়িয়ে পাশে, মুখের ওপরে হাত চাপা, চোখে অবিশ্বাসের দৃষ্টি। মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে। বাচ্চাটার মাথা দুভাগ, আমার শেষ গুলিটা খেয়ে শেষ শত্রুর মাথাটা ঠিক যেমনটা হওয়ার কথা।

চমকে মনিটরে তাকালাম। হ্যাঁ, একমাত্র শত্রু দুই ভাগে বিভক্ত মাথা নিয়ে লুটিয়ে পড়ছে। ঝড় আসতে আসতে আমার চারপাশে কুয়োর মতো হয়ে থেমে গেছে। দর্শকেরা উল্লাসে ফেটে পড়ছে। প্রচণ্ড উত্তেজনার লড়াইটা তারা বহুদিন মনে রাখবে।