পূর্বাশ্রম

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

শালিকের ঠ্যাঙের মতো হলুদ ছিল তার বোরকার রং, ফুটিরঙা মলিন ওড়নামুড়ি—পথশ্রমে ক্লান্ত মুখ, সে আসত তার ভাইয়ের বাড়ি, দ্রুত পায়ে হাঁটবার অভ্যাস, দ্রুত ভাত খাওয়ার অভ্যাস, এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে না থাকতে পারা জঙ্গম ছোটখাটো মানুষটি। মোহছেনা ফেরদৌসী। মেজ ফুপ্পি। প্রথম দিকে সে ‘ফেরদৌছি’ও লিখত বোধ হয়, আমরা হাসাহাসি করে বদলেছি, আমরা শহুরে। গাঢ় শ্যামবর্ণ মুখে টানটান চামড়া, মুখভরা অজাতশত্রুর হাসি, চোখে কখনো শুকনা উদ্বেগ, কপাল থেকে হটিয়ে বাঁধা অজস্র চুলে সিঁথি অগোচর। সংসারীর যা কিছু স্বার্থ-সুরক্ষা প্রয়োজন, তাতে তার মনোযোগ আছে, বসতে পারার বয়সে নিকানো দাওয়ায় ভাতের দানা পড়লে ‘টুকায়-টুকায় খাইত বইলা তারে মামায় কইছিল এই মেয়ে লক্ষ্মী হবে’, প্রায়ই ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপারমার্কেটে সে পুরোনো সোনা ভেঙে মামুলি অলংকার গড়াত, স্যাকরার আলোকশোষী সবুজ দোকানগুলো থেকে মাটিতে গর্ত করে থাকা কোনো প্রাণীর মতো তুরতুরে পায়ে তারপর চলে আসত আমাদের বাড়িতে—চঞ্চল গায়ে মেখে সংসারের খুদ। তার পুঁটুলির সেই সব ফঙ্গবেনে অলংকারে পানি মেশানো এক ফোঁটা রক্তের মতো গোলাপি পাথর দেখে আমরা হাসতাম।

বড় ফুপ্পি আর সেজ চাচ্চুর মাঝখানে একটি শান্তি-সুনিবিড় হাইফেন ছিল সে। শৈশবে টের পেতাম, আমাদের চেয়ে মেজ ফুপ্পিদের বাড়ির দশা খারাপ, অগোছালো, কালো ট্রাংকবোঝাই, মেঝেয় বড় বড় ফোকর। গেলেই বরাদ্দ ছিল নরম একটু ঘেঁটে যাওয়া পোলাও, চর্বিতে রাঁধা কালচে মাংস আর দেশি মুরগির ডিমের কোরমা। উদাসী বেলায় সেই বাড়ির পাছে বসে আঙুল চালিয়ে চুল শুকাতে শুকাতে ওরা নিজেরা গল্প করত দুধ ঘন করে কাঁঠালের ক্বাথে ফেলে খই-মুড়ি খাওয়ার কথা, পানিতে সয়লাব ধানখেতে ট্যাঁটা দিয়ে মেরে কুঁইচ্চ্যা ধরার কথা, কাঁটাওয়ালা বাজনাগাছের চমৎকার তেলের কথা। কিন্তু আমরা গেলে সেই সব হতো না, অতিথি সৎকারের কিছু বাঁধা নিয়ম পালিত হতো সেই সব বাড়িতে—ঘুরেফিরে। মেজ ফুপ্পিদের বাড়িটার পেছনের দিকে তখনো ঘর ওঠেনি, ভিটেমাটি থেকে ঢাল নেমে গেছে পানাপুকুর আর চষা জমিতে, আর তার ওপর সুজনি মেলে রেখেছে ঝিরিঝিরি শজনেগাছের ছায়া। ঘুঘু ডাকত সেই মলাটহীন বাড়িতে। আর ওরা নিজেরা নিজেরা মৃগীরোগীর কোমরে শিয়ালের দাঁত ঝুলিয়ে দেওয়ার গল্প করত, গাঁয়ে নির্বোধ বৈদ্যরা জলাতঙ্ক রোগীকে রোগের উপশমের জন্য জলাতঙ্কগ্রস্ত কুকুরের যকৃৎ খাইতে দিচ্ছে, সেই সব গল্পও করত। ওই সব দেহাতি গল্পের আশপাশে লোলুপ আমি ঘুরে বেড়াতাম।

মোহছেনা ফেরদৌসী খুব কলকলিয়ে কথা বলে, যখন তার ছেলেবেলায় ফিরে যায় সে। দেশগাঁয়ে থাকতে খাঁচি বোঝাই করে মাছ মেরে আনত তার ভাই, মাছ মারার খুব বাই ছিল তার, তাদের মা বিরক্ত হয়ে বলত, টুকরিসহ পগারে ফেলে দেবে মাছ, এত মাছ কে কোটে, কে রাঁধে, কেই–বা শুঁটকি দেয়! বিল ভরা তখন মাছ। পানিতে ভরে যাওয়া ধানখেত, পাটখেত আর বিল–ঝিল মিশে যাওয়া নিধুয়াপাথারে রাতে চকচকে দা হাতে চলে যেত সেই ভাই, অনেক রাত অব্দি আলো জ্বেলে মাছ মারত, শোল-শিং-মাগুর-টাকি। মোহছেনা একে বলত, ‘আলোকাটা কইরা’ মাছ ধরা, আলোর নিচে মাছ এসে জড়ো হয়ে বিড়বিড় করে, পুচ্ছ ছাড়া কিছুরই নাচন দেখা যায় না তখন, খড়কুটোর নুড়ি বাঁশের আগায় বেঁধে জ্বালানো মশাল, সে মশালের লাল আলো মাছদের দেখায় কোনো আলেয়া, তারা নড়ে না। আমার ভাবতে ভালো লাগে, জলেশ্বরী কোনো মৎস্যকন্যা তাকেও টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল অতলে, ব্রহ্মচর্য ভেঙে যেত তার...সে হাত ছাড়িয়ে চলে এসেছিল, অস্কার ওয়াইল্ডের সেই জেলে যুবকের মতো করে চলে যায়নি মৎস্যকন্যার সঙ্গে...তাদেরই কারও বিড়বিড় করে ফুঁকে দেওয়া দোয়া কি লেগেছিল তার কালো গায়ে? প্রকৃতিকে অসংগত দোহন করে চলা আর সব অমিতব্যয়ী মানুষের গায়ে যা লাগে, যেমন করে লাগে। নাকি সে আসলে মৎস্যনারীর হাতছানিতেই চলে গিয়েছিল, ওই যে উন্মাদের মাথায় থেকে যাওয়া আধিয়ার, সেটাই কি ছিল তাদের জলক্রীড়ার রুপোলি পৃথিবী...তারপর আর মরজগতের মানুষের কাছে ফিরতে পারেনি সে, বিনিময় করেনি শয়তানের সঙ্গে তার রুহ। বিলের পানি শুকালে একদিন হাঁটতে হাঁটতে তার সেই ভাই কোথায় চলে গেল, কেউ জানে না। আমি তার সেই যাওয়ার চারদিকে ফুল-লতা-পাতার মতো করে অস্কার ওয়াইল্ড-উলূপীর অর্জুন এই সব আঁকি, নাগরিক লজ্জায়, নইলে আমার সম্মান যায়।

মোহছেনা ফেরদৌসী মনে করতে পারে, বিলের পানি একটু শুকিয়ে আসতে থাকলে মাছে গন্ধ হতো, পোকা হতো, এঁটুলি হতো, খাদ অর্থাৎ গর্ত করে তখন লোকে গাছের কাটা ডাল, অর্থাৎ ‘ছাঁটা’ দিয়ে তা ঢেকে রাখত, সেই ঘেরাটোপে এসে ঠাঁই নিত অজস্র মাছ, এই ছাঁটা ‘হিইচ্যা’ (সেচে) পাড়ার সব মানুষ জমায়েত হয়ে মাছ তুলত, বিলাত, মটকায় জিয়ল মাছ রাখত (মেছো গন্ধে টেকা দায় সেই মটকার আশপাশে), শুঁটকিও দিত, কে খাবে অত মাছ? চাঁই দিয়ে মাছ ধরত মোহছেনাদের মামাবাড়িতে, ‘বিলে চাঁই পাইত্যা সুবিদা অইছে না গো মা, চাঁই দিবা আইলের গড়াইন্যা ঢালে, আইলের ফুটা দিয়া এক জমিন থিকা আরেক জমিনে যায় পানির স্রোত, সেই দিকে দিবা। চাই দিয়া ঢুকলে আর বাইর অইতে পারবা না, ভোরে গিয়া দ্যাখবা চাঁই ভর্তি, এই চাঁই দিয়া সমানে ধরবা কই মাছ।’ মামাবাড়ি গেলে তাই কই মাছ খাওয়া চলত খুব, চড়চড়িয়ে চাঁই থেকে ঢালা হতো কই মাছ, কানকোয় ভর দিয়ে তারা হেঁটে যেত মোহছেনার মতোই বাঁধ না মানা চঞ্চলতায়। ছাই দিয়ে ধরে ক্ষিপ্র হাতে কচকচিয়ে তাজা মাছ কুটত তাদের মামাতো বোন জাহানারা, সেই আওয়াজ পরের পঞ্চাশ-ষাট বছর মনে থাকবে শিশু মোহছেনার, জীয়ন্ত মাছের কী স্বাদ, ‘চাষের মাছের, ওই তোমগো পালা মাছের কুনো টেস নাই। ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ কইরা চাঁইয়ের মাছ কুটত জাহানারায়, মাপাজোপা নাই কিছু, কিনা মাছ না তো, এই কাটা মাছ বাঁশের ডুলায় নিয়া না ফরে...এট্টা পুকুর ছিল অ্যাদের, বড়...মিডিয়াম ধরনের এট্টা পুকুর ছিল—খুব টলটলে পৈষ্কার পানি, পুকুরের পাড়ে একটা তালগাছ দিয়া বানাইন্যা কোষা উল্টায়া রাখা আছিল, সেইখানে উইঠ্যা পুকুরের পানিতে ডুলার মাছ ভিজাইত আর জুরে ঝাঁকা মারত, সব আঁইশ গিয়া মাছগুলা এই ঝকঝক ঝকঝক করত।’ মাছগুলো সরু বালা পরা ঢোলা হাত ঘুরিয়ে তাদের মামানি রাঁধত, খুব দ্রুত, অত দ্রুত তেল ঢুলায়ে মসলা কষাত কেমন করে কে জানে, ‘অত মজানি কষানি কিছুই আছিল না!’ অথচ খেতে খুব ভালো হতো। মামানির উঠানেই করলাখেত ছিল, ছিল ঝিঙের মাচা (মামানি শুনেও আমি হাসতাম, আমরা মামার স্ত্রীকে ডাকতাম বউমণি)। কেলেকুলো-ক্ষীণদেহী মামানির নাম মনে নেই মোহছেনার, মামাদেরও নাম মনে নেই, ‘বড় মামা’ আর ‘ছোট মামা’—এই-ই ডাকত তারা, দীর্ঘদেহী সংসারপ্রধানদের। রাস্তাঘাট ছিল না এত, গাড়িঘোড়াও এত ছিল না, ছেলেমেয়েরা হেঁটে হেঁটে যেত মামাবাড়িতে, দিগন্তের মাঠ দেখিয়ে তাদের মা বলত, ‘চক পার হইলেই মামাবাড়ি’, তারপরে মাঠও ফুরাত, দিকরেখায় দেখা দিত বড়সড় বটগাছ, ‘গাশটা পার হইলেই মামাবাড়ি’, আবার আনন্দ কইরা পা চালাত তারা। ‘হুই যে ওইডা পার হইলেই তারফরে পুরানদিয়ার মামাবাড়ি!’ অভীষ্ট এইভাবে দূর দিগ্বলয়েই স্থায়ী দূরত্বে থাকে, সেই অভিজ্ঞতা হতো তাদের। মামাবাড়িতে খুব আদর ছিল বোনের ছেলেমেয়েদের, গ্রীষ্মের ছুটিতে কত না আম খেত তারা...না না, বেনারসি ল্যাংড়া নয়, মামানিদের নামের মতোই আমগাছগুলোরও নাম মনে নেই মোহছেনা ফেরদৌসীর, ওই ‘উঠানের গোল আম’, ‘হলুদ আম’, ‘বড় মামার বাইত্তের ছুটো ছুটো লম্বা আম’, ‘সিন্দুইর‍্যা আম’, চারাগাছ বড় হলেও ‘চারাগাছের আম’ নাম ছিল তাদের...সম্ভবত চোষ আম। আমের প্রসঙ্গ এলে আমি মেজ ফুপ্পিকে সম্রাট বাবরের সমরখন্দের ফলের চেয়ে আম ভালোবাসবার বাদশাহি গল্প বলতাম, ইতিহাসের আভায় আমাকে নাগরিক দেখাত।

ইক্ষুখেতেই জ্বাল দেওয়া গুড় সারা বছর রেখে দেওয়ার মটকা বাড়িতে, বছর ভরে গুড় খেত মোহছেনারা, ‘দুদ দিয়া মাইক্কা ভাত...আতের তলে দানা দানা হইয়া থাকত গুড়গুলি’, দুধেরও অভাব ছিল না, গাইয়ের দুধে গোয়াল ভিজত, সর ‘উঠায় উঠায় বাটিতে রাইক্কা রাইক্কা’ ঘি বানাত তাদের মা, শীতের ভোরে অনেকক্ষণ কচলে ধুয়ে নিলে ভেসে উঠত নরম ননি, সেটা চুলায় চাপিয়ে জ্বাল দিলেই কিছুক্ষণের ভেতর ঘিয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হতো পাড়া। ননি তুলে নিলে বাকি থাকে মাঠা, অনেক দিনের হলে মাঠার স্বাদ তেমন ভালো হয় না অবশ্য। অনেকখানি মটকার শোল মাছ দিয়ে ‘চ্যাপচ্যাপা কইরা’ মাষডাইল রাঁধত মোহছেনার মা, ডালের ওপর জমাটি জেগে থাকত মাছেদের চাঙড়, নামানোর আগে ঘি, খুব ভালো হতো সেই আমিষ-ডাল। ‘মাষডাইলের অত্ত সুন্দর বড় বড় জিলাপি বানাইত মায়ে, জিলাপি-আমিরতি-মিষ্টি—কত পদের সরভাজা পাড়াভর্তি কইরা বিলাইত, কইত যে শিক্যা রাক।’ শাশুড়ির হাতে জিলাপির প্যাঁচ খুব ভালো খেলত শুনে আড়ালে হাসার জন্য রান্নাঘরের দিকে চলে যেত আমার মা, তার হৃদয়ে এ বাক্যের প্রতিধ্বনির ভাঁজে ভাঁজে মিশত অনুচ্চারিত ব্যাজস্তুতি।

মোহছেনার গৃহপালিত মৌমাছি ছিল, কাঠের একখানা সাবেকি আলমারি ছিল বাড়িতে, তার পাল্লা দুটোর মাঝখানে ফাঁক ছিল আর ভেতরটায় তাকগুলো রুমালের ধারের মতন হয়ে থাকত মৌচাকের ঝুল দিয়ে। সকালে দরজা খুলে দিলে ভোঁ করে চলে যেত মৌমাছিরা, সদর দরজা কালো করে ভিড় করত সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকবে বলে, চাকে ফেরত যাবে বলে। চাকে হাত দিলে সরসরিয়ে সরে যেত তারা, মধু খেত মোহছেনারা, মৌমাছি কিছুই বলত না, কামড়াতও না কখনো। ভাইবোনেরা বলত, মৌমাছিরা তাদের পরিবারের একজন, অনেক মায়া ছিল তাদের। সন্ধে হলে আর পাড়া বেড়াত না। সেই সব ধূসর সন্ধ্যায় মুরগি নিতে আসত বনবিড়াল, বাগডাশ আর শিয়াল, খোঁয়াড়ে ঢোকার ঠিক আগে খপ করে নিয়ে যেত দ্রুতগতি ছাইরঙা আততায়ী।

‘তোমাগো দাদির বিয়াতে তার বড় ভাই শাড়ি পরায় দিছিল জানো গো মা?’ কে জানে আমার দাদির বিয়ের শাড়ির রং কী ছিল, কী সুতোর ছিল? কোনো সাক্ষী বেঁচে নেই, কোনো ছবি তোলা নেই। কিন্তু বিয়ের শাড়ির চেয়ে অনেক দুর্মূল্য, অনেক জরিপাড় একটি উজ্জ্বল ইতিহাস রেখে গেছে আমার দাদি, সেটি তার মেয়ে মোহছেনার জীবনে। ক্লাস সিক্স থেকে মোহছেনাদের গায়ে চড়াতে হতো বোরকা, আখখেত আর পাটখেতের মাঝের সরু রাস্তা পাড়ি দিয়ে বহু দূরের স্কুল...সেই সুতাখালী পথে সুতাশঙ্খের মতো জেগে থাকে প্রণয়প্রার্থীর ঝাঁক, বড় অমঙ্গলের ভয়; গোঁড়া-ধর্মভীরু দাদা ক্লাস এইটে পড়াকালীন কন্যাসন্তান মোহছেনার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিল, হাইস্কুলে সহশিক্ষায় গিয়ে কাজ নেই। মোহছেনা ফেরদৌসী পূর্ণোদ্যমে ঘরের কাজ করতে লাগল, বাপকে সন্ধ্যাবেলা গরম হরলিকেস ডুবিয়ে খাওয়ার মালপোয়া পিঠা গড়ে দিতে লাগল আর আমাদের দাদি সবার অজ্ঞাতসারে মেজ মেয়েটিকে পড়াতে লাগল, সে স্থিরপ্রতিজ্ঞ—এই মেয়েকে পড়াবে, পরীক্ষা দেওয়াবে। বড় মেয়ে তদ্দিনে সংসার করছে পুরোদমে, সেকালের একুশ টাকা দিয়ে তার স্বামী কিনে দিয়েছে একখানা ঝরনা কলম, কিন্তু মেয়েটি আর সেই কলমে লেখে না। খুব রাগ-জেদ ছিল আমাদের দাদির, ছিল অর্থ উপার্জনের শক্তি আর সংসারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুমর। অবশেষে বাপের সম্মতিতে মোহছেনা ভর্তি হলো দুলালপুর হাইস্কুলে। তারপর শিবপুর কলেজ। তদ্দিনে পড়ানোয় উৎসাহ হয়েছে বাপের, ভেবে ফেলেছে তার মেয়ে একদিন প্রফেসর হবে। এই সব জয়ের গল্প সোল্লাসে বলত আমার মেজ ফুপ্পি, রাস্তার ধূলিমলিন-ঘর্মাক্ত বোরকার ঘেরে ঢাকা গ্রাম্য বালা, রান্নাঘরে আমার শহুরে মা যে আর হাসছে না, তা জানতাম না, তার বিএ পরীক্ষা দেওয়া হয়নি, ‘মিছিলের মুখ’ বা ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’ থেকে প্রশ্নোত্তর করা হয়নি।