দাগ

হাঁস-মুরগির মতোই গৃহপালিত ছিলাম আমরা! সকাল-সন্ধ্যা পরাধীন।

রাত শেষে সূর্যভোরে আমার দেশের ডিম অথবা ডিঙি সবই হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের! আমরা কেবল ডিম দিতে, নয়তো সোনাভর্তি ফসলের নাও ঠেলতে থাকতাম।

এ গল্প আব্বুর কাছে শোনা। আমার আব্বু, একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। আবেগের আহ্লাদে কখনো বলা হয়নি, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশে আব্বুর ক্ষতটাই আজও অক্ষত আছে। এ তো অনেক দামি অলংকার!

আব্বুর বুকের ডান পাশ থেকে সরে আসা বুলেটের এই স্থানটুকু আজও বড় বেশি জ্বলজ্বলে। কখনো বুলেট দেখিনি আমি। তবে বুলেট ছোটার স্থান দেখেছি। কখনো আচমকা পকেটে গোঁজা রিভলবার দেখেছি। স্টেনগান দেখিনি। তাই কত শতবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি আমাদের ঘরের সবচেয়ে মূল্যবান  সেই স্থান, আব্বুর বুকের ডান পাশে গুলির দাগটা। বুঝে নিই, আর একটু সরে গিয়ে বুকের মাঝে তোলপাড় করে বিজয় আনার ‘ধুক ধুক’, স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার আওয়াজ!

মাঝেমধ্যে দেখে নিই একাত্তরে আব্বুর সেই প্রেসক্রিপশন। ভাবি, প্রেসক্রিপশন ভুল লিখেছে। যোদ্ধারা কখনো আহত হয় না, হয় বাঁচে, নয়তো মরে। একাত্তরের সেই কিশোর, আমার আব্বু বেঁচে ফিরেছেন বলেই আজ আমরা তাঁর গর্বিত সন্তান।

শ্রদ্ধা তোমায়, আব্বু।

জাহান রীমা

ভ্যালেন্সিয়া কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র