নাটকটা দেখার পরই ভাবলাম যে থিয়েটারটা আমি সিরিয়াসভাবে করব

রাহুল আনন্দ। গানের দল জলের গানের গায়ক, বাদ্যযন্ত্রশিল্পী ও অভিনেতা। তিনি বলেছেন তাঁর প্রিয় ৫ বিষয় নিয়ে।

১. প্রিয় শিল্পী

রাহুল আনন্দ। ছবি: অন্য আলো
রাহুল আনন্দ। ছবি: অন্য আলো

পার্বতী বাউলের ব্যঞ্জনা
আমার প্রিয় শিল্পী অনেক। তবে এর মধ্যে একজনের নাম নিতে বললে পার্বতী বাউলের নামই বলব। তাঁর পারফরম্যান্স, কস্টিউম (সাজসজ্জা), এনার্জি (দম) এবং গায়কী—সবই আমাকে মুগ্ধ করে। অনবদ্য সাবলীলতার সঙ্গে গান ও নাচ করার আশ্চর্য দক্ষতা আছে এই শিল্পীর। তাঁর সাধনার গভীরতার বিষয়টিও আমার ভালো লাগে। ভেঙে বললে পার্বতীর সামগ্রিক ব্যক্তিত্বই আমাকে স্পর্শ করে। আরেকটা বিষয় হলো, আমি বারবার তাঁর গান ও গানের উপস্থাপনা (পারফরম্যান্স) শুনে এবং দেখেও ক্লান্ত বোধ করি না। প্রতিবারই সুরের, গায়কীর, দৃশ্যের নতুন নতুন ব্যঞ্জনা দিয়ে আমাকে মোহিত করেন পার্বতী বাউল।

২. প্রিয় চিত্রকর

আমাকে আন্দোলিত করেন এস এম সুলতান

চারুকলায় পড়ার সময় আমাদের পাঠ্যসূচিতে ছিল এস এম সুলতানের চিত্রকলা। তাঁর চিত্রকলাকে গভীরভাবে জানতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি, বাংলাদেশকে তিনি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং কৃষককে নিয়ে তাঁর যে ভাবনা, সেটা অনেক বড়। শিল্পের দর্শনসহ দেশ ও পৃথিবীকে দেখার ক্ষেত্রে তাঁর ভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ এবং জারিত করে। এই চিত্রকরের ‘প্রথম বৃক্ষরোপণ’ ছবিটি বিশেষভাবে আমার প্রিয়, এতে তাঁর চিন্তা ও দর্শনের সারসত্তা খুঁজে পাই আমি। ছবিটিতে দেখা যায়, একজন আদি মানব একটি বৃক্ষরোপণ করছে। বৃক্ষরোপণকারী মানবটির পেশীবহুল হাত, দীর্ঘ শরীর যেন আমাদের অতীতের কৃষি সভ্যতার উন্নত দিনগুলোর দিকেই ইঙ্গিত করে। ছবির ওই বিশালদেহী মানুষ আর বৃক্ষের মধ্যে সম্পর্কের রসায়নটি সুলতানের প্রতি আমার মুগ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়, আমাকে আন্দোলিত করে।

৩. প্রিয় চলচ্চিত্র

তপন সিনহার ‘গল্প হলেও সত্যি’

তপন সিনহার গল্প হলেও সত্যি আমার প্রিয় চলচ্চিত্র। সম্ভবত ২০০০ সালে ছবিটা প্রথম দেখি। এই চলচ্চিত্রের গল্প ও নির্মাণ এবং সামগ্রিকভাবে এর কনসেপ্ট—সবকিছুই আমাকে আকর্ষণ করেছিল। একটা যৌথ পরিবারের সমস্যাগুলোকে মূল কেন্দ্রে রেখে গড়ে ওঠা এ চলচ্চিত্র ভীষণ ভাবিয়েছিল আমাকে। ছবিতে বিশেষভাবে ভালো লেগেছিল রবি ঘোষের চরিত্রটা। এ সিনেমা আমাকে এই বার্তা দিয়েছিল যে আমরা যদি সবাই সবাইকে সাহায্য করি, তবে যেকোনো সমস্যা থেকেই উত্তরণ সম্ভব।

৪. প্রিয় বই

সুধীর চক্রবর্তীর ‘গভীর নির্জন পথে’

প্রিয় বই নিয়ে বলতে গেলে সুধীর চক্রবর্তীর গভীর নির্জন পথে বইটার নামই প্রথমে মনে আসে আমার। আরও অনেক বই-ই প্রিয়, কিন্তু এই বইয়ের এক অনন্য প্রভাব আছে আমার জীবনে। চারুকলায় পড়ার সময় বইটি প্রথম হাতে আসে। আর এটি পড়ার পর আমার চিন্তাচেতনায় বিরাট পরিবর্তন এল। বাউলদের প্রতি তৈরি হলো আকর্ষণ। এটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। লালনের প্রতি টান অনুভব করলাম আমি। জানতে শুরু করলাম তাঁকে। আবার রবীন্দ্রনাথের বিশাল-ব্যাপক জগতেও আমাকে নিয়ে গিয়েছিল এই বই।

৫. প্রিয় মঞ্চনাটক

মামুনুর রশীদের নাটক ‘মানুষ’

মামুনুর রশীদের মানুষ নাটকটি আমার খুবই প্রিয়। ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় নাটকটি প্রথম দেখি। এটা দেখার অনেক আগে থেকেই আমি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু নাটকটি দেখার পরই ভাবলাম যে থিয়েটারটা আমি সিরিয়াসভাবে করব। এর আগে থিয়েটার আমার কাছে আড্ডা দেওয়ার, সময় কাটানোর জায়গা ছিল। কিন্তু থিয়েটারের প্রকৃত মর্মভেদী টান আমি অনুভব করেছি মানুষ দেখার পরেই।

অনুলিখন: রোজেন হাসান