প্রাচীন সংস্কৃত কবিতা

>আজ কবি নির্মলেন্দু গুণের ৭৫তম জন্মদিন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রাচীন সংস্কৃত কবিতা অনুবাদ করছেন তিনি। তাঁর জয়ন্তী উপলক্ষে এখানে প্রকাশিত হলো কবির অনুবাদে একগুচ্ছ সংস্কৃত কবিতা।

অমরু
অমৃতের স্বাদ
মেয়েটি চমকে উঠল, যখন পুরুষটি আচমকা কামড় বসাল তার অধরে।
ক্রোধকম্পিত তর্জনী উঁচিয়ে আর্তকণ্ঠে মেয়েটি বলল পুরুষটিকে—স্টপ ইট! আমাকে যেতে দাও, বদমাশ।
রাগে, ক্রোধে তার শরীরে জ্বর উঠে গেল।
যখন সে ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছিল, তার ঘৃণাকুঞ্চিত ভ্রুযুগল নেচে উঠছিল, আর তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু।
এ রকম তুঙ্গবাসিনী কোনো রমণীকে চুম্বন করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তারাই জানেন শুধু অমৃতের স্বাদ, যার জন্য নির্বোধ দেবতারা বৃথাই মন্থন করেছেন সমুদ্র।

বল্লান
লজ্জার সমুদ্র
খোসা ছাড়ানোর মতো করে
সে আমার গা থেকে খুলে ফেলল
আমার অন্তর্বাসগুলো,
তখন বৃথাই আমার যুগলবাহু দিয়ে
আমি আমার স্তনযুগলকে
আড়াল করার চেষ্টা করেছিলাম।
কিন্তু আমার সেই প্রয়াস
বলা যায় কোনো কাজেই আসেনি।
বরং তার বক্ষতলেই সুসম্পন্ন হলো
আমার স্তনযুগলের সলিল সমাধি।
একপর্যায়ে তার চঞ্চল হাত দুটো
নিমজ্জিত হলো
আমার জোড়া নিতম্বের তলদেশে।
লজ্জার সমুদ্রে ডুবে যাবার হাত থেকে
আমাকে বাঁচাতে পারতেন,
এ রকম কেউই ছিল না তখন।
শুধু একজনই ছিলেন,
যাঁকে আমরা প্রেমের দেবতা
বলে জানি এবং মানি।
তিনিই আমাকে শিখিয়ে দিলেন,
কেমন করে মূর্ছা যেতে হয়!


বিকটনিতম্ব
কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ
যুবতী মেয়টিকে কাছে পেয়ে গেছ বলে
আবেগে অস্থির হোয়ো না—শান্ত হও।
আমের মুকুলে গাঁট হয়ে বসা মৌমাছিদের
দেখো—ওরা কী সুন্দর পান করে মধু!
আম্রমুকুলগুলো তার প্রতিবাদ করে কি?
তুমি বরং দৃষ্টি দাও ঝোড়ো-বাতাসের দিকে।
তোমরা দুজন ছাড়া যখন নিকটে কেউ নেই,
তখন খুব শক্ত করে চেপে ধরো তার হাত।
মনে রেখো, খুব জোরে চাপ না দিলে
ইক্ষু তার সঞ্চিত রস কখনো মুক্ত করে না।


ক্ষেমেন্দ্র
কবি
বৃক্ষপত্রালির গঠনশৈলী জানবেন কবি।
কবিকে জানত হবে
সমবেত শ্রোতাদর্শকদের মুখে
হাসি ফোটানোর কৌশল।
কবিকে জানতে হবে মানুষের মুখশ্রী
পাঠ করতে পারার বিদ্যা।
তাঁর চিত্ত স্নাত হবে সমুদ্রের বিশালতায়,
তিনি মগ্ন হবেন পাহাড়ের মৌনতায়।
সূর্য–চন্দ্র ও গ্রহ-তারা দিয়ে সাজানো
মহাকাশে তিনি আবিষ্কার করবেন তাঁকে,
ঋতুচক্রর ঘূর্ণাবর্তে তিনি আবর্তিত হবেন,
আমরা যাঁকে কবি বলে জানি।
কবিকে পৌঁছুতে হবে মানুষের কাছে,
অনেক অনেক মানুষের কাছে—,
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে।
কবিকে শিখতে হবে গণমানুষের ভাষা।