জিনাত নাহার হাঁটতে বেরিয়েছেন

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

হাঁটার জুতা পায়ে গলিয়ে চাবি নিয়ে বের হন জিনাত নাহার। সকালে হাঁটতে বেরোতেই হবে—ডাক্তারের নির্দেশ। ওজন না কমালে আর চলছে না। শুধু ডায়েট মেনে, মিষ্টি ছেড়ে সুগার কমানো যাবে না। আর সুগার না কমালে কোনো কিছুই ঠিক হবে না। ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস পর্যন্ত ডায়াবেটিসের জন্য বাড়ে—ছেলের বউ জানিয়েছে এ কথা। বউটাও ডাক্তার, গাইনোকোলজিতে এমডি করছে। খুবই যোগ্য মেয়ে, সুন্দরী, ভদ্র। ছেলে প্রেম না করলে অত বড়ঘরের মেয়ে বিয়ে করানো যেত না কোনোমতেই। বউয়ের বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষিত, বহুদিন ঢাকা শহরে থাকে, বাড়ি-গাড়ি—সবই আছে। কিন্তু ছেলের বাপের মত ছিল না এই বিয়েতে। অত বড়ঘরের মেয়ে বিয়ে করলে ছেলে বিক্রি হয়ে যাবে—এই ছিল তার ভয়। এসব অমূলক ভয়-সন্দেহকে মিথ্যা প্রমাণ করে বউটা খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে এই বাড়ির সবার সঙ্গে। কিন্তু ছেলের বাপ যেন তাতেও খুশি না। বউয়ের কোনো না কোনো দোষ ধরতেই হবে। জিনাত নাহার এই মানসিকতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, প্রায় তিরিশ বছর ধরে একজন মানুষের সঙ্গে সংসার করলে তার সম্পর্কে কিছুই অজানা থাকে না।

লিফট দিয়ে নিচে নেমে গ্যারেজে রাখা গাড়িটার দিকে একপলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নেন জিনাত। ফ্ল্যাট কিনতেই হবে, গাড়ি একটা লাগবেই—ফয়সালের বাবার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ তার ছিল না। সংসারের সব ব্যাপারেই তার নিজের কথাই শেষ কথা, ফয়সালের বিয়ের আগে একটা আস্ত কুরুক্ষেত্র জিতে নিতে হয়েছে মা-ছেলেকে। শান্তি বজায় রাখার জন্য জিনাত সারা জীবন অনেক চুপ করে থেকেছেন, কিন্তু এই স্বৈরাচারের কবলে পড়ে ছেলে নিজের পছন্দের জীবনসঙ্গিনী পাবে না, এটা মানতে পারেননি তিনি।

ধানমন্ডি এলাকায় থাকছেন বছর চারেক হলো, আগে মোহাম্মদপুরে থাকতেন। ভাড়া বাসায়। উত্তরায়ও ফ্ল্যাট দেখেছিলেন ফয়সালের বাবা। এটা কেনার পর বড় ননদ আর নন্দাই এসেছিলেন নতুন ফ্ল্যাট দেখতে। রান্নাঘর থেকে শুনেছেন, তাদের সঙ্গে উত্তরায় আর মিরপুরে দেখা ফ্ল্যাটের গল্প করছে ফয়সালের বাবা। তাকে যে জানাননি, তাতে তিনি রাগ বা বিরক্ত হননি, অভিমানের সম্পর্ক কোনো দিন ছিলই না তাদের মধ্যে। এসব অবহেলায় তাই বহুদিন ধরেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

ধীরে ধীরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেন জিনাত। বউমা কয়েক দিন আগে বলছিল, আম্মা, আপনি একটা এয়ারফোন কিনে নেন, মোবাইলে গান শুনতে শুনতে হাঁটলেন। তিনি যে গান শুনতে পছন্দ করেন, সেটাও এই মেয়ের চোখ এড়ায়নি। এয়ারফোনের প্রস্তাব তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই শহরের পথঘাটের কোনো বিশ্বাস নেই, কানে এয়ারফোন লাগিয়ে রাস্তায় হাঁটার মানে হলো মরণের ওষুধ কানে বাঁধা। এক্ষুনি মরার কোনো ইচ্ছা তার নেই। নাতি-নাতনি হবে, তাদের লালন–পালন করবেন—চাঁদের হাটের মধ্যে বিছানায় শুয়ে মারা যাবেন তিনি, রাস্তায় পড়ে বেঘোরে মরা কোনো কাজের কথা নয়।

হাঁটতে হাঁটতে দু-একজন পরিচিত ভাবির সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তিনি হাসিমুখে সালাম আদান-প্রদান করেন, থেমে গল্প করেন না। অত সময় নেই, ফিরে গিয়ে নাশতা বানাতে হবে। মলিনার হাতের ভাজিটা তা-ও সহ্য হয়, রুটি তিনি নিজেই খেতে পারেন না। এত চেষ্টা করেও পাতলা রুটি বানানো শেখাতে পারলেন না মেয়েটাকে। সবদিকে পাতলা আর মাঝখানটা মোটা করে রুটি বেলে, সেঁকলে পরে ফুলতেই চায় না। তা ছাড়া ভাবিরা অধিকাংশ সময়েই পারিবারিক তথ্য জানতে চায়, ছেলের বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে কী কী দিল—এসব জানতে চাওয়া তার পছন্দ হয় না।

জিনাত নাহার নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন এই বউমাকে পেয়ে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান, এই জমানায় এমন মেয়ে পাওয়াই যায় না যে এককথায় শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে রাজি হয়ে যাবে। ফয়সালের বাবা এই শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। বউয়ের বাড়ি থেকে গয়না ছাড়া আর কোনো জিনিস নেওয়া যাবে না, আর বউকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। প্রথম শর্ত নিয়ে জিনাতের দ্বিমত ছিল না, কিন্তু দ্বিতীয় শর্তটা অত পরিষ্কার করে বলার দরকার কী? একটাই ছেলে তাদের, বাপ-মাকে ফেলে যেত নাকি? এই শর্ত দিয়ে দেওয়াতে লাভের লাভ এই হয়েছে যে বউয়ের বাপের বাড়ির লোকেরা তাদের ছোটলোক ভাবার সুযোগ পেয়ে গেল, যদিও তাদের আচরণে কিছুই প্রকাশ করেনি।
বউমা এরই মধ্যে পোয়াতি, ফয়সালের বাবা এখনো শোনেননি সে কথা। শুনলে কি-না-কি বলবেন, জিনাত ফয়সালকে বলেছেন এখনই কাউকে জানানোর দরকার নেই। বউমাও যেন না বলে। আজকালের মেয়ে, আবার নিজে গাইনোকোলজিস্ট, এসব ব্যাপারে রাখঢাক না-ই থাকতে পারে। রাস্তায় বসা এক ভিখিরিনিকে দেখে বউমার কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটা ঢাউস পেট নিয়ে বসে আছে একটা ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে। কোলে আরেকটা বাচ্চা। জিনাত ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে বের হন না, এমনকি মোবাইল ফোনটাও সঙ্গে নেন না। আধঘণ্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে এমন কিছু দুনিয়া উল্টে যাবে না। ইচ্ছা করলেও মেয়েটাকে কয়টা টাকা দেওয়া সম্ভব হলো না। আর কয়জনকেই-বা দেবেন, শহর ভরাই তো ভিক্ষুক।
আন্টি, এই ঠিকানাটা কোন দিকে?

জিনাত একটু বিরক্ত হয়েই থামেন। প্রশ্নকারী রাস্তা পার হয়ে এই দিকে এসেছে তাকেই উদ্দেশ্য করে। এত সকালে রাস্তায় দু-একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ভিখিরি আর রিকশাচালক ছাড়া তেমন কেউ নেই। তার ওপর আজ শুক্রবার, স্কুলে আর অফিসে যারা যায় রোজ সকালে, তারাও বাসায় ঘুমাচ্ছে এখন। তাই বাধ্য হয়েই তাকে থামিয়েছে মেয়েটা। ভালো করে তাকান তিনি, বছর আঠারো হবে বয়স, কুড়িও হতে পারে, হালকা-পাতলা গড়ন বলে বোঝা যাচ্ছে না। পিঠে ব্যাকপ্যাক, মুখে ঘাম, চুলগুলো পনিটেল করে রাখা, তবু এলোমেলো হয়ে গেছে।
নিজের অজান্তেই কাগজটা হাতে নেন, একটা খাকি কাগজে বাজে হাতের লেখায় একটা বাড়ির নম্বর আর নাম লেখা। কোনো রোড নম্বর, ব্লক নম্বর—কিচ্ছু নেই। বিরক্তি চেপে যথাসম্ভব নরম করে বলেন, কীভাবে বলব? এখানে তো কোনো রাস্তার নাম নেই।
মেয়েটা প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, এটা কি ধানমন্ডি না?
হ্যাঁ, ধানমন্ডিই, কিন্তু ধানমন্ডি এলাকা তো অনেক বড়। রাস্তার নাম না জানলে কীভাবে ঠিকানা পাবা?
মেয়েটা এক হাতে মুখ মুছে শ্বাস নেয়। করবেন না করবেন না ভেবেও একটা প্রশ্ন করেই ফেলেন জিনাত, বাসা কই তোমার?
টাঙ্গাইল।
মানে এই মেয়ে ঢাকায় থাকে না। বোঝা দরকার ছিল, ঢাকায় বড় হওয়া বাচ্চারা আরও চালাক-চতুর হয়, এমন রাস্তার নম্বর ছাড়া ঠিকানা খুঁজে বেড়ানোটা বড় ধরনের বেকুবির লক্ষণ।
কার সঙ্গে আসছ ঢাকায়?
একাই।
কাকে খুঁজতেছ?
মেয়েটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলে। জিনাত কাগজের টুকরোটার দিকে তাকান, কারও নাম নেই। বিরক্ত হওয়ার বদলে তার মন দ্রবীভূত হয়। মফস্বলের মেয়ে, নিশ্চয়ই বাসা থেকে না বলে এসেছে, প্রেমিকের খোঁজে হবে। আহা রে! কিন্তু একে সাহায্য করার কোনো উপায় তার নেই।
হাঁটা চালিয়ে যাবেন কি না, ভাবতে ভাবতেই একটা দমকা বাতাসের সঙ্গে একগাদা ধুলা এসে গায়ে লাগে। এবার বসন্ত বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। যেকোনো ঋতুর প্রকটত্ব তাকে কৈশোরের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। অনেক বৃষ্টি হলে ভিজে ভিজে স্কুল থেকে ফেরার কথা মনে পড়ে, স্কুলে থাকতে তার কখনো ছাতা ছিল না। অত ভিজলেও সর্দিটর্দি তেমন লাগত না, শক্ত-সমর্থ ছিলেন। খুব রোদ উঠলে আরও ছোটবেলার দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে, কী গরমের মধ্যে রোজার মাস আসত, বড় ডেকচিতে বরফ দিয়ে রুহ আফজার শরবত বানানো হতো তাদের বাড়ির খোলা উঠানে। রান্নাঘরটা উঠান পেরিয়ে উল্টা দিকে, বিদ্যুৎ চলে গেলে বাড়ির সবাই উঠানেই পাটি আর পিঁড়ি পেতে বসত ইফতার করতে।
কী রঙিন সেই সব স্মৃতি...অথচ সেই সময়ের ঢাকার স্মৃতি তার কাছে ধূসর। একটা দোতলা বাড়ির সামনে একটা ভক্সওয়াগন, বাড়িটার আঙিনায় বড় আমগাছ, পাতাগুলোতেও ধুলার আস্তরণ—কোন এলাকা, সেটাও আর এখন মনে নেই। এই ধূসর শহরে এসে সারা জীবন থাকতে হবে, এমন কথা ভাবেননি কোনো দিন। ছোটবেলায় ঢাকায় কেন এসেছিলেন, কার সঙ্গে, তা-ও এখন আর মনে নেই।
তবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে একবার একা ঢাকায় এসেছিলেন, এই মেয়েটার মতোই প্রায় অচেনা কাউকে খুঁজতে। জীবনের নানা ঘটনার ঘনঘটায় ভুলেই গিয়েছিলেন সেদিনের কথা। কলেজের ইউনিফর্মের ওপর একটা রঙিন ওড়না পরে সেলাই করা ওড়না আর বেল্ট খুলে ব্যাগে ভরে নিয়েছিলেন। তখন এত বোরকা পরার চল ছিল না, বোরকা পরে পরিচয় গোপন করতে চাইলে আরও বেশি চোখে পড়ে যেতেন হয়তো। ক্লাসের নাম করে বেরিয়ে বাসে চাপলেন, সেই বাসও তেমন লক্কড়ঝক্কড় মার্কা, সকালে রওনা করে ঢাকায় পৌঁছাতে দুপুর হলো। গন্তব্য মেডিকেল কলেজ। সেটা বিরাট বড় জায়গা, শুধু নাম দিয়ে একজনকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
তবু সেই মানুষের হদিস পাওয়া গিয়েছিল, মানুষটাকে পাওয়া যায়নি যদিও-বা। তার পরিচিত একজন জিজ্ঞেস করলেন, কিছু জানাতে হবে কি না, কিংবা কিছু পৌঁছানোর থাকলে দিয়ে যেতে, বিকেলের দিকে ক্যানটিনে আসার কথা, চাইলে অপেক্ষাও করতে পারেন জিনাত—এ কথা বলে চা সাধলেন সেই প্রায় অপরিচিতের পরিচিত। কিন্তু অপেক্ষা করার মতো সময় ছিল না, সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরতেই হবে। জিনাত সেদিন খুব বেশি আশাহত হয়েছিলেন কি? না মনে হয়, দেখা হলেও-বা কী হতো? শুধু দেখাটাই হতো বড়জোর, এর বেশি কিছু নয়। প্রায় অপরিচিত সেই সুপুরুষ তার নামটাই জানতেন, তার মনের দশা নয়।
সেই দিন সন্ধ্যা নয়, ফিরতে রাত হয়ে গেল। বাড়িতে তখন কান্নাকাটির রোল পড়ে গেছে। আব্বা থানায় গেছেন, বড় ভাইজান হাসপাতালে, আম্মা মাথা ঘুরে পড়েছেন বেশ কয়েকবার, জেঠি জায়নামাজে। ছোট ভাইজান না থাকলে বড় জ্যাঠা হয়তো সেদিন তাকে খুনই করে ফেলতেন।
সেদিনের পর থেকে জোরেশোরে বিয়ের চেষ্টা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ের তারিখ পড়ে গেল। জিনাতের আপত্তি ধোপে টিকবে না জেনে ছোট ভাইজান বললেন আবার পালাতে। কই যাব, জিজ্ঞেস করাতে রাগ-ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছোট ভাইজান বললেন, ‘সেই দিন কই গেছিলি? সেইখানে যা।’ তখন কেঁদে ফেললেও জিনাত স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন, তার কাটা ঘায়ে লেবু চিপে দেওয়ার জন্য বলা হয়নি কথাটা, নিষ্ফল অসহায় রাগ থেকেই বলেছিলেন, রাগটা তার ওপর নয় একেবারেই। বাবা-জ্যাঠাদের সঙ্গে তর্ক করা আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা একই কথা, ছোট ভাইজান করতে পারেননি সে কাজ।
চিন্তায় ছেদ পড়ে সাইরেনের আওয়াজে। কোথাও একটা আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জিনাতের বুকের ভেতর কী যেন লাফাতে থাকে। আসার সময় গ্যাস অফ করে এসেছিলেন কি? সকালে হাঁটতে বেরোনোর আগে এক কাপ লেবু-চা খান তিনি, চিনি ছাড়া। মলিনা এত রাত পর্যন্ত কাজ করে, সকালে তাকে ডেকে ওঠাতে মায়া লাগে, তাই নিজেই করে নেন চা। এখন পর্যন্ত গ্যাস অফ না করে রান্নাঘর থেকে বেরোনোর রেকর্ড নেই তার, কিন্তু মানুষেরই তো ভুল হয়। মলিনা মাঝেমধ্যে চুলা কমিয়ে রেখে অন্যান্য কাজ করে, বকলে হাসে, বলে, ‘আম্মা, আবার ইট্টু পরেই জ্বালান লাগব, হুদাই ম্যাচ খরচ কইরা কাম কী?’ গ্রামের মেয়ে, লেখাপড়া করেনি, গ্যাস লিকের ঝুঁকির ব্যাখ্যা শুনেও পুরোপুরি বোঝে না।
নাকি ইলেকট্রিসিটির শর্টসার্কিট? গ্যারেজে দারোয়ান একটা লাইন থেকে মাল্টিপ্লাগ দিয়ে অনেকগুলো জিনিস চালায়, মোবাইলে চার্জ দেয়, টেবিল ফ্যান চালায়। সেখান থেকে কিছু হলো না তো? জিনাত আর কিছু না ভেবে বাড়ির দিকে রওনা করেন। দ্রুত পায়ে।
সাইরেনের শব্দটা কাছে চলে আসছে। হাঁটা আর দৌড়ের মাঝামাঝি গতিতে ছিলেন তিনি। এখন একেবারে দৌড় শুরু করেন। দোয়া ইউনুস পড়তে শুরু করেন মনে মনে। কোথায় আগুন লেগেছে, তা নিশ্চিত না হয়েই। ফয়সাল, ফয়সালের বউ তানিয়া, মলিনা, ফয়সালের বাবা—কিছু হলে ওরা সাততলা থেকে নামতে পারবে তো সময়মতো?
পেছন থেকে মেয়েটা আকুল হয়ে ডাকতে ডাকতে দৌড় দেয়, ‘আন্টি, আমার ঠিকানাটা।’ আরও দু-একবার ডেকেছে সে, জিনাত শুনতে পাননি। এবার তিনি থেমে পেছন ফিরে হাত বাড়িয়ে কাগজটা দিতে চান, মেয়েটার হাতে পৌঁছানোর আগেই আরেকটা দমকা বাতাসে উড়ে যায় ঠিকানা লেখা ছোট্ট কাগজটা।