উপমহাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচ

কলকাতার ওল্ড গভর্নমেন্ট হাউস। এখানে বাস করতেন ওয়ারেন হেস্টিংস। এ বাড়ির পাশের মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ। ছবির শিল্পী: উইলিয়াম হিকি
কলকাতার ওল্ড গভর্নমেন্ট হাউস। এখানে বাস করতেন ওয়ারেন হেস্টিংস। এ বাড়ির পাশের মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ। ছবির শিল্পী: উইলিয়াম হিকি
ইংরেজদের হাতে এই উপমহাদেশে ক্রিকেটের সূচনা হলেও প্রথম আনুষ্ঠানিক ম্যাচটি হয়েছিল বঙ্গদেশে। আর অভিজাতদের কাছ থেকে এ খেলাকে মাটি ও মানুষের কাছে নিয়ে এসেছিল বিখ্যাত এক বাঙালি পরিবার। সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে ক্রিকেটের শুরুর লগ্নে বাংলা ও বাঙালির সঙ্গে খেলাটির ঘটে গিয়েছিল অমোচনীয় এক রাখিবন্ধন। বাংলা+িক্রকেট িনয়ে আয়োজন।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ নিয়ে নাবিকেরা আরব সাগরের উত্তর-পূর্ব দিকের ক্যাম্বে উপসাগরে প্রবেশ করার পর কোনো একটি চ্যানেলের তীরে নোঙর ফেলেন। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে এবং নিজেদের শারীরিক দক্ষতা অটুট রাখার জন্য ইংরেজ নাবিকেরা ওই নদীতীরবর্তী ডাঙায় ক্রিকেট খেলতেন। ক্যাম্বে উপসাগরে পতিত হওয়া নদীগুলোর মধ্যে নর্মদা, তাপ্তি, মাহি ও সবরমতী অন্যতম। অঞ্চলটি ভারতের বর্তমান গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত। ব্রিটিশ নাবিকেরা সে সময় যে ক্রিকেট খেলেছেন, সেগুলো কোনো প্রথাসিদ্ধ আনুষ্ঠানিক ম্যাচ ছিল না। আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলার শুরুটা ছিল বাংলার মাটিতে, উল্লিখিত ঘটনাগুলোর আরও অনেক বছর পর। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ীরা ভারতে প্রথম উপনিবেশ গড়ে তোলেন এখনকার মুম্বাই (বোম্বে) ও চেন্নাইয়ে (মাদ্রাজে)। বাংলায় তাঁদের উপনিবেশ স্থাপিত হয়েছিল এরও অনেক পর। কিন্তু তাঁদের প্রথম আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচটি হয়েছে বাংলায়। এর প্রেক্ষাপটটিও ছিল ভিন্ন।

জানা যায়, ক্রিকেট খেলাটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের (যুক্তরাজ্য) ইংল্যান্ডে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৫৯৮ সালে। তবে ইংল্যান্ডের ঠিক কোন জায়গায় খেলাটির জন্ম, সেটি এখনো অজানা। খ্রিষ্টীয় সতেরো শতক থেকে নৌশক্তিতে বিশ্বসেরা হয়ে উঠতে শুরু করে ব্রিটিশরা। সে দেশের নাবিকেরা ছড়িয়ে যেতে থাকেন পুরো পৃথিবীতে। এরই একপর্যায়ে তাঁরা ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী সিরিয়ার প্রাচীন শহর আলেপ্পোতে ১৬৭৬ সালে ক্রিকেট খেলেছিলেন। এটি ছিল সম্ভবত ইউরোপের বাইরে এশিয়া মহাদেশে প্রথম ক্রিকেট খেলার ঘটনা। ‘নিউ ইংলিশ’ ডিকশনারিতে এ-জাতীয় খেলাকে ‘সেইলরস ক্রিকেট’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ নাবিকদের ভারতে ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যায় ক্লিমেন্ট ডাউনিংয়ের আ কমপেনডিয়াস হিস্টরি অব দ্য ইন্ডিয়ান ওয়ারস নামের একটি বইয়ে। ১৭৩৭ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত এই বইয়ের ২২৯ পৃষ্ঠার বর্ণনাটি ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট।

আলোচনার সুবিধার জন্য একটু পেছনে ফিরে যাচ্ছি। রাশিয়ার জলাভূমিতে সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট যে সময় সেন্ট পিটার্সবার্গ নগরীর গোড়াপত্তন করছেন, তখন সতেরো শতকের শেষ দিকে এশিয়ার গাঙ্গেয় বদ্বীপের স্যাঁতসেঁতে জলাভূমিতে আরেকটি নগরীর ভিত্তি গড়ে তুলছেন এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জব চার্নক। নতুন জনপদ কলিকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রামের অধিকাংশই ছিল তখন জলাভূমি। এই তিন গ্রাম মিলেই গঠিত হলো নতুন নগরী, যার নাম ‘কলিকাতা’। আর দুই জলাভূমিতে গড়ে ওঠা দুটি শহর পরবর্তীকালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল দীর্ঘদিন।

এশিয়ার স্যাঁতসেঁতে জলাভূমিপ্রধান নগরী ধীরে ধীরে বিভিন্ন দিকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ হলো। একপর্যায়ে ‘কলিকাতা’ নামে অভিহিত হয়ে সেটি ব্রিটিশ ভারতের রাজধানীর মর্যাদাও লাভ করল। ক্রমেই কলকাতা শিল্প ও বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে থাকে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যের পাশাপাশি কলকাতাকে গড়ে তুলতে থাকে ভারতবর্ষের সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম শীর্ষ পাদপীঠ হিসেবে।