জোড়া প্রদর্শনীতে বিবর্তনের ধারা

মোস্তাফা জামান ও শর্মিলী রহমানের কিউরেটিংয়ে ‘(আন) সিন’
মোস্তাফা জামান ও শর্মিলী রহমানের কিউরেটিংয়ে ‘(আন) সিন’

লাল রঙের স্কচটেপ দিয়ে হাত ও মুখমণ্ডল বাঁধা ব্যক্তিটি হিংস্রতার কবল থেকে উদ্ধার পেতে চাইছেন, নাকি জাদু দেখাচ্ছেন? টেনেহিঁচড়ে গায়ে জড়ানো স্কচটেপ খুলতে চেষ্টাও করছেন একজন। তাহলে কি তিনি বিপদগ্রস্ত? পারফরম্যান্স আর্ট হচ্ছিল। চারদিকে পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি, স্থাপনাশিল্প, ভিডিওগ্রাফি, পারফরম্যান্স আর দর্শককের ভিড়ে নিজেকে কিছুটা অপ্রস্তুত মনে হলেও এই আবহের মর্ম উদ্ধারে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে বুঝলাম, শিল্পের মর্ম উদ্ধারের দায়ভার দর্শকের নিজের। বলছি, কামরুল হাসান এক্সিবিশন হলে মোস্তাফা জামান ও শর্মিলী রহমানের কিউরেটিংয়ে ‘(আন) সিন’ বা ‘অদেখা’ এবং জিহান করিমের কিউরেটিংয়ে সুবীর চৌধুরী এক্সিবিশন হলে ‘অযান্ত্রিক’ শিরোনামের প্রদর্শনী প্রসঙ্গে। বলা যায়, বেঙ্গল শিল্পালয়ে চলমান এ দুটি প্রদর্শনীর ভাবধারা এক এবং প্রযুক্তিনির্ভর। 

এই জোড়া প্রদর্শনীটি আর্ট ক্যাম্পভিত্তিক। গাজীপুরে ক্যাম্পের ‘প্রজেক্টে’ নিসর্গ দেখেছেন শিল্পীরা। এ জন্য শিল্প-উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে সেখানকার মাটি ও অন্যান্য প্রকৃতিক উপাদান এবং ওই স্থানে ধারণকৃত ভিডিও ও ফটোগ্রাফি। মোটকথা, সব শিল্পমাধ্যম একাকার এখানে।

এবার যাওয়া যাক জোড়া প্রদর্শনীর অন্দরে: ‘(আন) সিন’ বা ‘অদেখা’ প্রদর্শনীত এমরান সোহেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল অবজেক্ট ও ন্যাচারাল অবজেক্টের সমন্বয়ে স্পেস বিন্যাসের সঙ্গে পেইন্টিং, স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স—সবকিছু মিলিয়ে একটা আর্ট প্রসেসও দেখাতে চেষ্টা করেছেন। শিরিন আখতারের ভিডিও উপস্থাপন বেশ নান্দনিক। একটি কোদালের ইস্পাত ফলকে বৃক্ষরোপণের আকাঙ্ক্ষা ও ব্যাকুলতা প্রতিবিম্বিত হচ্ছিল ভিডিওতে। আবীর সোম শ্রীপুর যাত্রা ও যাপনের মুছে যাওয়া স্মৃতি ধরতে চেয়েছেন অ্যানিমেশনধর্মী ভিডিওতে। 

জিহান করিমের কিউরেটিংয়ে ‘অযান্ত্রিক’
জিহান করিমের কিউরেটিংয়ে ‘অযান্ত্রিক’

‘অযান্ত্রিক’ প্রদর্শনীর কক্ষ অনেকটা প্রেক্ষাগৃহের মতো। অন্ধকার কক্ষের আনাচকানাচে স্থাপনাশিল্প, ভিডিও, আর থিয়েটার পারফরম্যান্স—এ যেন ভিন্ন স্বাদের বায়োস্কোপ। রাজীব দত্তের থ্রি চ্যানেল ভিডিওতে অন্তত তাই মনে হয়েছে। মুনেম ওয়াসিফের ‘মেশিন ম্যাটার’ ভিডিওতে মাকড়সার বোনা জাল আর মানুষের হৃৎস্পন্দনের দৃশ্যে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াতে হয়। ইশিতা মিত্রের রকমারি প্লাস্টিক পণ্যের স্থাপনাশিল্প কি পরিবেশ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত? এসব সাংকেতিক জটিলতা গণিতের ধাঁধার মতো ধূম্রজাল সৃষ্টি করে। তবে বিমল মিত্রের ছোটগল্প আর ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’কে কেন্দ্রে রেখে প্রদর্শিত দৃশ্যশিল্পে কনসেপ্ট নোট অনুযায়ী যুক্তি ও আবেগের রসায়ন কতটুকু স্পষ্ট হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। 

 দুটি প্রদর্শনীই মূলত মাধ্যমগত বিবর্তনের দৃষ্টান্ত। কিন্তু সেই বিবর্তন কী রকম, বিবর্তনটি কী বলতে চায়, তা বুঝতে অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে প্রদর্শনীটি দেখা জরুরি। বেঙ্গল শিল্পালয়ে দুটি প্রদর্শনীই শুরু হয়েছে ২২ জুন, শেষ হবে ৩ আগস্ট।