নজরুলের 'উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি'

>২৯ আগস্ট কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজন।

কাজী নজরুল ইসলামের যত জীবনী রচিত হয়েছে, এর সব কটি একজায়গায় করলে দুটো ব্যাপার খুব সহজেই চোখে পড়ে। কিছু জীবনী বইয়ে নজরুলকে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সদস্য বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা আছে, আবার কিছু বইয়ে নজরুলকে প্রায় নামহীন–গোত্রহীন বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা লক্ষ করা যায়। বিষয়টা অনেকটা লালন শাহর মতো। একদল তাঁকে মুসলমান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, আরেক দল হিন্দু হিসেবে। তবে এতে নজরুল বা লালনের কিছুই যায়–আসে না। কারণ, তাঁদের মানুষ বিবেচনা করে কাজ দিয়ে। নজরুল ও লালন উভয়েই তাঁদের কাজের ভেতর দিয়ে এই সব টানাহেঁচড়ার সমুচিত জবাব দিয়েছেন বটে। যাঁরা নিজের মুখে ঝাল খান, তাঁরা নিশ্চয় জানেন ও বোঝেন।

সৈনিকের পোশাকে কাজী নজরুল ইসলাম (২৫ মে ১৮৯৯–২৯ আগস্ট ১৯৭৬)
সৈনিকের পোশাকে কাজী নজরুল ইসলাম (২৫ মে ১৮৯৯–২৯ আগস্ট ১৯৭৬)

নজরুলের কুলগৌরব নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাঁর জীবনী বইগুলোতে সবাই মোটামুটি একমত যে নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে এক চরম গরিবি হালতে। এই গরিবি হাল কেমন ছিল, দ্রুতরেখায় তার একটা ছবি আঁকা যেতে পারে। মাত্র ৯ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। বাবার সহায়-সম্পত্তি তেমন ছিল বলে কোনো জীবনীকারই সাক্ষ্য দেননি। উপরন্তু, বাবার ছিল দুই বিয়ে। টানাটানির সংসারে সংগত কারণেই নেমে আসে অনাহার-অর্ধাহারের খড়্গ। ফলে ওই বয়সেই নজরুলকে রোজগারের জন্য নিতে হয় কবরস্থান আর মসজিদের খাদেমগিরির কাজ। স্বভাবতই ছিটকে পড়েন পড়াশোনা থেকে। ১০ বছর বয়সে খাদ্যনিরাপত্তা আর বাড়তি কিছু টাকার জন্য যোগ দেন ‘লেটো নাচ-গান আর যাত্রার দলে’। সহজেই অনুমান করা যায়, ওই বয়সী একটা ছেলের পারিবারিক অবস্থা কতটা শোচনীয় হলে যাত্রার দলে যোগ দেয়! এই যাত্রাদলের সঙ্গে নজরুল দূরদূরান্তে এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে চলে যেতেন। একবার গেলেন বাড়ি থেকে প্রায় এক শ কিলোমিটার দূরে মাথরুন গ্রামে। সেখানে জমিদারগোছের কারও অর্থসাহায্যে পড়ার সুযোগের আশায় তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউটে। সম্ভবত অর্থসাহায্য না পেয়ে সেখান থেকে চলেও আসেন। এসে কাজ নেন রেলওয়ের এক গার্ডের বাড়িতে—‘ভৃত্যের কাজ’। এরপরে ১৯১১ সালের দিকে এক টাকা মাসিক বেতনে কাজ নেন আসানসোলের এক রুটির দোকানে। সেখানে খাওয়া ফ্রি। কিন্তু রাতে থাকতেন রুটির দোকানের কাছাকাছি এক তিনতলা বাড়ির সিঁড়ির নিচে। সিঁড়ির নিচে এই কিশোরকে দেখে দয়াপরবশ হয়ে ওঠেন ওই বিল্ডিংয়ের এক পুলিশ অফিসার। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের রফিজউল্লাহ। নজরুল তাঁর সঙ্গে চলে যান ত্রিশালে পড়াশোনা করতে। সেখানে সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠে আবার চলে আসেন। এসে বিশেষ কিছু আর্থিক ছাড়ের আওতায় অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে। এই প্রথম নজরুল টানা তিন ক্লাস স্কুলে পড়েন। এখান থেকেই ১৯১৭ সালে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। গোলাম মুরশিদ বলেছেন, ‘ছিন্নশিকড়, পিছুটানহীন নজরুল হুজুগের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলেন।’ সেনাবাহিনী থেকে ১৯২০ সালে তিনি আসেন সরাসরি কলকাতায়। আশ্রয় নেন মুজফ্ফর আহ্‌মদের মেসে। এখানে তিনি একপ্রকার সহায়সম্বলহীন আশ্রিতই ছিলেন বটে। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ১৯২২ সালে অগ্নি-বীণা কাব্যের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলামের।

নজরুলের নজরুল হয়ে ওঠার এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে আমরা লক্ষ করি স্থিরতার জন্য, খাদ্যনিরাপত্তার জন্য দিগ্‌বিদিক ছুটে বেড়ানো একজন মানুষকে। কিন্তু নিরাপত্তা আর স্থিরতা তাঁর আসেনি। আরও লক্ষ করি পারিবারিক বন্ধনহীন এক নজরুলকে। নজরুলের এই জীবনপ্রবাহের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ কোনো জীবনীকারই দেখাতে পারেননি। ক্ষুৎপিপাসার তাড়না নজরুলের পরিবারের বন্ধনকে আলগা করে দিয়েছিল। মানুষের সিঁড়ির নিচে রাত্রি যাপন করা, ‘গৃহভৃত্যের’ কাজ করা নজরুল দারিদ্র্যের নির্মমতার মধ্যে পড়ে জীবনের–জগতের নগ্ন সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন আপন আলোয়। সেই সত্যের উন্মোচনও করেছেন নিজের মতো করে। আমাদের মতো বই পড়ে তাঁকে শিখতে হয়নি। তাঁর উচ্চারণ মানেই যে ধ্বংসের একটা হইচই নিনাদ, এর মূলে ছিল তাঁর জীবনের এই অসহ দারিদ্র্য। দারিদ্র্য তাঁর চোখ খুলে দিয়েছিল। নজরুলকে নিয়ে রচিত জীবনীগুলো শুধু গরিবি হালতের বর্ণনায় ভরা। দারিদ্র্যের এই বর্ণনার বাস্তব ভিত্তি ছিল এ কথা ঠিক, কিন্তু আমরা দেখেছি জীবনীকারদের নজরুলের দুঃখ-দারিদ্র্যের জমকালো বর্ণনার উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্য এটি দেখানো যে নজরুলের দারিদ্র্য আর প্রতিভার হিসাব-কিতাব মেলে না। জীবনীগুলোতে দারিদ্র্যের পারদ যত ওঠে, নজরুলের প্রতিভার অলৌকিকত্ব বিষয়ে জীবনীকারের বিস্ময় তত বাড়ে। তাঁরা শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে নজরুল আসলে গোবরে পদ্মফুল—খুবই ব্যতিক্রমী প্রতিভা। এ কথা খুব কমই বলতে শুনি যে নজরুলের অর্থনৈতিক শ্রেণি অবস্থানই তাঁর সাহিত্যকর্মের যাবতীয় শক্তি-সাহস আর শোভা-সৌন্দর্য। কেউ না বলুক, অগত্যা নজরুল কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় সিন্ধু হিন্দোল (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের ‘দারিদ্র্য’ কবিতায় নিজেই আবিষ্কার করেছেন যে তাঁর সাহিত্যকর্মের শক্তির মূলে আছে দারিদ্র্য।

নজরুল বাংলা কাব্যের জগতে স্বকীয়তাসহ পা রাখেন ২০ শতকের দ্বিতীয় দশকে অগ্নি-বীণা (১৯২২) কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। তাঁর আগে উনিশ শতকের শেষভাগ আর বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত যাঁরা বাংলা সাহিত্যের জগতে দাপটের সঙ্গে দাপিয়ে বেরিয়েছেন, তাঁদের বড় অংশই ছিল হয় ব্রিটিশ সরকারের সুবিধাভোগী, নতুবা সুবিধাপ্রত্যাশী। তাঁদের শিক্ষাদীক্ষা অথবা চিন্তাচেতনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পর্ক ছিল। বিত্তের বিচারে তাঁরা ছিলেন মধ্যবিত্ত অথবা বিত্তবান। মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, এই শ্রেণি সাধারণত মুখচোরা হয়। কথা চাবায়। খোলসের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে। তারা স্বপ্নবানও হয়। শ্রেণিটি তার স্বপ্ন পূরণ করতে চায়, কিন্তু সাধারণত ঝুঁকি নিতে চায় না। সুযোগ বুঝে বিপ্লবী হতে চায়। চতুরতা এই শ্রেণির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সব কুল রক্ষা করেই এই শ্রেণি কোনো কিছু অর্জন করতে চায়। পিছুটান তার পিছ ছাড়ে না। অন্যদিকে, উচ্চবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতার কাছাকাছি থাকে বা থাকতে চায় বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সুযোগসন্ধানী ও লুটেরা হয়। এই দুই শ্রেণি মিলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলে এবং চালকের আসনে থাকলে সেই রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন হয়, তা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দিকে তাকালে সহজেই বোঝা যায়। এই রাষ্ট্র মূলত বড়লোক আর শিক্ষিত মধ্যবিত্তের রাষ্ট্র হয়েছে, যেখানে মধ্যবিত্ত মুখচোরা, নাজুক, সুযোগসন্ধানী আর উচ্চবিত্তদের অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়ায় ব্যস্ত। যাহোক, বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে আত্মপ্রকাশ করা নজরুল আসলে এই দুই শ্রেণির কোনোটার মধ্যেই পড়তেন না। তিনি গরিব শ্রেণির। এই গরিবিই তাঁকে অমর করেছে। নজরুলের নিজের ভাষায় ‘মহান’ করেছে। কীভাবে মহান করেছে, সেটাই দেখার বিষয় বটে।

নজরুলের কাব্য–কবিতা আর চেতনা প্রবলভাবে মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তসুলভ চাতুরি ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত। যেখানে আঘাত করার, সেখানেই তাঁর আঘাত। ঈশ্বরের ঐশ্বর্য, ভাবগাম্ভীর্য, আলখাল্লা, ছদ্মবেশ, তখ্ত—সবকিছু তছনছ হয়ে যায় তাঁর মুহূর্তের উচ্চারণে। পাশার দানের ঘুঁটি তিনি ফুৎকারে উল্টে দেন। রাজাকে বানান গোলাম আর প্রজাকে রাজা। ‘রাজদ্রোহী’ শব্দের বিপরীতে তিনি দাঁড় করান ‘প্রজাদ্রোহী’ শব্দবন্ধ। প্রশ্ন তোলেন খোদ রাষ্ট্রের মালিকানা নিয়ে ‘কে মালিক? কে সে রাজা?/ কে দেয় সাজা...?’ এই প্রশ্ন তুলে নজরুল অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। বলেন, ‘হা হা হা পায় যে হাসি’। এই হাসির মধ্যে আছে ‘কুচ পরোয়া নেহি’ একটা ভাব। মধ্যবিত্তোচিত দ্বিধা আর ভয়শূন্য এই হাসি। আর সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি! সে তো অভাবনীয়! তিনি আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, শোষণ, নির্যাতন, অবরুদ্ধতার বিরুদ্ধে ‘হায়দরি হাঁক’ মারতে বলেই এক নিশ্বাসে বলেন, ‘ওরে ও পাগ্‌লা ভোলা, দে রে দে প্রলয়-দোলা’, ‘কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক’। এই যে নজরুল কবিতাকে প্রতিরোধের হাতিয়ার করে তুলতে পারলেন, চিত্তকে ভয়শূন্য করে বিপজ্জনক সব উচ্চারণ করতে পারলেন, এর পেছনে ক্রিয়াশীল ছিল তাঁর দারিদ্র্যের আগুনে পোড়া একটা সর্বহারা চেতনা। নজরুলের ভাষায় শোনা যাক তাঁর এই দুঃসাহসী আর বিপজ্জনক উচ্চারণ করতে পারার কারণ, ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে ক’রেছ মহান্‌!/ তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীস্টের সম্মান/ কণ্টক-মুকুট শোভা।—দিয়াছ, তাপস,/ অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;/ উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি; বাণী ক্ষুরধার,/ বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!’

পৃথিবীর ইতিহাস গরিব মানুষের আত্মত্যাগ আর বেপরোয়া উচ্চারণের ইতিহাস। সে যখন উচ্চারণ করে, তখন তার কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকে না। কোনো কিছুকে, কাউকে পরোয়া করে তাকে কথা বলতে হয় না। নজরুলের ক্ষেত্রে তা–ই হয়েছে। অসহ দারিদ্র্যের কারণে জীবনের কাছে তাঁর কোনো উচ্চাশা ছিল না। ছিল না রাষ্ট্রের কাছে কিছু চাওয়ার। এ কারণেই নজরুল প্রতিষ্ঠা, প্রতিষ্ঠান, মেকি রাষ্ট্রযন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা আর শোষণের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক সব উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন। তাঁর সমকালের অন্যরা পারেননি। নজরুল ছিলেন তাঁর সমকালের মুখচোরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বপ্নময় মুক্ত প্রকাশ। এ কারণে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে দেশ যখন ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বোঝায় কুঁজো হয়ে যাচ্ছিল, সাম্প্রদায়িকতার বিষে বিষাক্ত হয়ে উঠছিল, তখন নজরুলের অসংকোচ আত্মপ্রকাশে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল, বাহবা দিয়েছিল। নজরুল রাতারাতি মেকআপঢাকা মধ্যবিত্তের স্বপ্নের নায়কে পরিণত হয়েছিলেন। স্বপ্নের নায়ক, কারণ মধ্যবিত্তের তো ‘উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি’ তখন ছিল না (কখনো থাকেও না)।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাসের দিকে চোখ বুলালে দেখব, এখানে যত আত্মত্যাগ, সব গরিব মানুষেরই আত্মত্যাগ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে রক্ত ঝরল যাঁদের, তাঁরা প্রায় সবাই প্রান্তিক মানুষ। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন যাঁরা, তাঁরাও তো নাম না–জানা প্রান্তিক মানুষ। ১৯৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থানকে সফল করে তুলেছিল মূলত কৃষক-শ্রমিক শ্রেণি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রক্তাক্ত হয়েছে গ্রামের প্রান্তিক মানুষের ঘরদোর–উঠোন-আঙিনা–বাস্তুভিটা। কিন্তু মূল ধারার ইতিহাসে তাঁরা নেই। আছে ওই মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের ‘কৃতিত্বের’ কথা, নেতৃত্বের কথা। প্রতিটি আত্মত্যাগের ইতিহাস বেহাত হয়েছে। কিন্তু সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম সাক্ষ্য দেয় যে বাঙালির অর্জন মূলত গরিব মানুষের জাগরণের ফসল। বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৬) উপন্যাসে। সেখানে আমরা দেখি, ঠিকই ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থানের তাৎপর্যপূর্ণ নায়ক হয়ে উঠেছে বাধাবন্ধনহীন গরিব মানুষ হাড্ডি খিজির। আইয়ুবি স্বৈরশাসনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যে কথা যেভাবে ও ভাষায় বলা দরকার, তা তো ওই হাড্ডি খিজিররাই বলেছে। যেমনটি বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে তীব্র ও প্রয়োজনীয় সব কথাবার্তা ধ্বনিত হয়েছিল নজরুলের মুখে। নজরুল বেঁচে থাকবেন মুখচোরা বাঙালি মধ্যবিত্তের বাস্তবে নয়, স্বপ্নে।