অরূপের সন্ধান

‘শিরোনামহীন’, শিল্পী: সুখময় মজুমদার
‘শিরোনামহীন’, শিল্পী: সুখময় মজুমদার

মালিবাগের কসমস সেন্টারের গ্যালারিটি একটু ভিন্ন রকম । এটি মূলত ‘আর্ট স্টুডিও’ স্পেস। দৃষ্টিনন্দন সজ্জা। একাধিক প্রিন্ট মেশিন, বসার জায়গা, সারিবদ্ধ শিল্পবিষয়ক বই—এসবের মধ্যে দেয়ালে ঝুলছে ভারতীয় শিল্পী সুখময় মজুমদারের চিত্রকর্মগুলো। গ্যালারির একটি ঘরে মুখাবয়ব-প্রধান কাজ এবং অন্য ঘরে বিমূর্ত ধরার 

কাজ। তবে এই দুই ধরনের কাজের নামই ‘আনটাইটেলড’ অর্থাৎ শিরোনামহীন।

ঘুম থেকে উঠে ঘুমানোর আগপর্যন্ত প্রতিনিয়ত আমরা যে মানুষের মুখ দেখি, তাদের দুঃখ–বেদনা–হতাশা–ক্রোধের অভিব্যক্তি আঁকেন সুখময়। ড্রয়িংপ্রধান এসব মুখের ভ্রু, কান, নাক ও ঠোঁট আঁকা হয়েছে বিশেষ ভঙ্গিতে। অন্যদিকে প্রকৃতি অনুপ্রাণিত বিমূর্ত সিরিজের কাজগুলো প্রথম দেখায় মনে হয় ডিজিটাল প্রিন্টের মতো। কারণ অ্যাক্রেলিক মাধ্যমের কাজগুলোর ওপরিতল পলিশ ইল্যুশন। ভেতরের আকৃতি চোখে দেখা পরিচিত বস্তুর সঙ্গে মেলে আবার মেলে না। তাই ক্রমাগত দুলতে হয় একটা ধরা–অধরার দোলাচলে। অবশ্য কোনো নির্দিষ্ট আকার দেওয়ার চেষ্টাও শিল্পীর ছিল না। এটা ছিল তাঁর নিরাকার বা অরূপ সাধনা। অজানা এক নিরাকারের আকার যেন রূপ দিয়েই খোঁজেন তিনি। ফলে সহজাত প্রবণতায় দর্শক এই ইমেজে মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কোনো অজানা সভ্যতার নিদর্শন, অজানা ভাষার লিপিচিহ্ন, সমুদ্রের ঢেউ, বালুচর প্রভৃতি খুঁজে নিতে পারেন। কিন্তু রং, তুলি আর ক্যানভাসে পরমানন্দে আঁকা এসব কম্পোজিশনগুলো বহুবিচিত্র নয়, বরং শিল্পীর ধ্যান-ধারণার রূপদর্শন ঘুরপাক খায় একই সীমার মধ্যে। সব কটি কাজের ফর্ম, টেক্সচারের মধ্যে একটি অন্ত্যমিল লক্ষণীয়। 

মুখপ্রধান সিরিজের কাজ শিল্পী যোগেন চৌধুরীর আঁকা মুখের আদলের মতো। তবে সুখময়ের সব কটি মুখের ভঙ্গি পাশফেরা । কেবল নাক, ভ্রু, ঠোঁট ও কান বলিষ্ঠ রেখায় চিহ্নিত। নেই চুল এবং গলার অংশও। কখনো একরঙা জমিনের ওপর ড্রয়িং, কখনো চিত্রজমিনে ইংরেজি ভাষার বর্ণমালাযুক্ত টেক্সচার, কখনো সিলভার কিংবা গোল্ডেন রঙে নতোন্নতো টেক্সচার যুক্ত করে চিত্রজমিন তৈরি করেছেন। আবার কখনো রঙের টেক্সচারের ওপর মুখের ড্রয়িং করেছেন। এসব মুখের ভঙ্গিতে, অভিব্যক্তিতে অনেক বেশি বৈচিত্র্য আছে, তা বলা যাবে না; তবে একটা রহস্যময়তা আছে, একটা জিজ্ঞাসা আছে​।

স্বশিক্ষিত এই শিল্পী ছবি আঁকার বিশেষ উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বাংলাদেশি শিল্পী শাহাবুদ্দিনের কাছে। মানুষ ও প্রকৃতি প্রত্যবেক্ষণ সূত্রে অরূপের সন্ধান তাঁর চিত্রভাষার মূল প্রতিপাদ্য।

২৬ আগস্ট শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে আজ ১৩ সেপ্টেম্বর।