সৈয়দ হক এবং

>সৈয়দ শামসুল হকের জীবন অবলম্বনে ‘হেমিংওয়ের সঙ্গে’ নামে উপন্যাস লিখছেন হাসনাত আবদুল হাই। প্রথমা প্রকাশন থেকে উপন্যাসটি প্রকাশিত হবে শিগগির। সৈয়দ হকের মৃত্যুদিনে হাসনাত আবদুল হাই জানাচ্ছেন তাঁর উপন্যাসের নির্মাণ–প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
সাড়ে তিন বছর প্রেমের পর সৈয়দ শামসুল হক ও আনোয়ারা সৈয়দ হক যখন পরিণয়াবদ্ধ, ১৯৬৫। ছবি: সংগৃহীত
সাড়ে তিন বছর প্রেমের পর সৈয়দ শামসুল হক ও আনোয়ারা সৈয়দ হক যখন পরিণয়াবদ্ধ, ১৯৬৫। ছবি: সংগৃহীত

সবার জীবন নিয়ে উপন্যাস লেখা যায় না, কেউ কেউ তেমন জীবন যাপন করেছেন বলেই তাঁরা উপন্যাসের বিষয় হতে পারেন। এই ‘তেমন’ জীবন যে গড়পড়তা আর দশজনের চেয়ে আলাদা—বেশ ব্যতিক্রমী, বিচিত্র এবং বর্ণাঢ্য হওয়ার জন্য—তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেবল বিখ্যাত হলেই চলে না এ ক্ষেত্রে, থাকতে হয় ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এক্স ফ্যাক্টর’, যার জন্য একজন হাজার মানুষের ভিড়ে অসাধারণ হয়ে ওঠেন এক দৃষ্টিতেই। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন এমনি একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। আপাদমস্তক লেখক, শয়নে-স্বপনে কেবল লেখার কথাই ভেবেছেন, এমনকি নিশ্চিত মৃত্যু এগিয়ে আসছে জেনেও নিদ্রাহীন রাতের গভীরে, জাগরণের মুহূর্তে লেখার তাগিদ অনুভব করেছেন, লিখে গিয়েছেন মরিয়া হয়ে মৃত্যুকে প্রতীক্ষায় রেখে, নিজের হাত অবশ হয়ে এলে সহধর্মিণীকে ব্যাগ্র কণ্ঠে বলেছেন, লেখো, আমি বলে যাই—এমন দৃষ্টান্ত আর কজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়? সাহিত্যের জন্য আজীবন স্ব-আরোপিত দায়ভার বহন আর সেই দায়মুক্তির জন্য আমৃত্যু জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো আবেগবিহ্বল হয়ে লেখার জন্য নিবেদন করে সৈয়দ শামসুল হক স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে চিরকাল।

তাঁর বহুমুখী সাহিত্য রচনা আমাকে মুগ্ধ করেছে আরও অনেকের মতো। কিন্তু এ জন্যই আমি তাঁকে নিয়ে জীবনী উপন্যাস লিখতে উদ্বুদ্ধ হতাম কি না, তা নিয়ে আমার নিজেরই সংশয় রয়েছে। রোগশয্যায় থেকে অবধারিতভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শারীরিকভাবে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাওয়া দিনগুলোতে তিনি যেভাবে লেখায় সমর্পিত হয়েছেন, সেই বিষয় আমাকে এমন আলোড়িত করছে যে মনে হয়েছে তাঁকে নিয়ে উপন্যাস না লিখলেই নয়। এবং তাঁর জীবন ও কর্মের উল্লেখে উপন্যাস লিখতে গিয়ে অচিরেই উপলব্ধি করি যে লেখা শুধু লেখকের নিজের ইচ্ছাতেই হয় না, কখনো কখনো বিষয়ও বাধ্য করে অমোঘ শক্তি নিয়ে।

অন্য আরও যে সব জীবনী-উপন্যাস লিখেছি, প্রায় সেভাবেই লেখার পরিকল্পনা নিয়ে লিখতে বসে উপলব্ধি করলাম, সৈয়দ হকের জীবন ও কর্ম অন্যদের তুলনায় পৃথক আরও এক কারণে, এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবেই। জীবনসঙ্গী আনোয়ারা সৈয়দ হকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এতটাই নিবিড় ও নির্ভরশীল যে তাঁকে বাদ দিয়ে কেবল সৈয়দ হকের জীবনী-উপন্যাস সম্পূর্ণ হতে পারে না। সৈয়দ হক তাঁর অন্যতম স্মৃতিকথার নাম দিয়েছেন প্রণীত জীবন, যে প্রণয়ন বা নির্মাণ তাঁর একার ছিল না, সমান্তরালে নিরলসভাবে নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গিয়েছেন আনোয়ারা সৈয়দ হক, যার জন্য ভিন্নতরভাবে নামকরণ হতে পারে প্রণীত যৌথ জীবন। 

অতএব, যা সত্য এবং একান্ত বাস্তব, শুধু সৈয়দ হকের জীবন ও কর্ম নিয়ে নয়, আনোয়ারা সৈয়দ হককে নিয়েও লিখতে হবে, এই অবশ্যম্ভাবী উপসংহারে আসি আমি কাগজে কলম স্পর্শ করার আগেই। আর তিনি যে শুধু সহধর্মিণী নন, নিজ গুণে ও শক্তিতে অসাধারণ এক লেখক, যা অনালোচিতই রয়ে গেছে, তার জন্যও সৈয়দ হকের জীবনী-উপন্যাস সত্যিকারভাবে লিখতে হলে আনোয়ারা সৈয়দ হকও এসে যান সাহিত্যের অঙ্গনে সহ-অভিযাত্রী হবার সূত্রে।

একজনের জীবন ও কর্ম নিয়ে উপন্যাস লেখা যতটা সোজা, একসঙ্গে দুজনের যাপিত জীবন ও সৃষ্টিকর্মভিত্তিক উপন্যাস লেখা ততই কঠিন। এ শুধু আকারের, পৃষ্ঠাসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নয়। কীভাবে, কোন রসায়নে মেলানো হবে দুটি মানুষের সমান্তরাল জীবন, যার সঙ্গে সঙ্গতি থাকবে বাস্তবের, সমস্যাটা দাঁড়ায় এই প্রশ্ন নিয়ে। এমন যদি হতো, আনোয়ারা সৈয়দ হক কেবলি গৃহিণী এবং সেই সঙ্গে একজন দক্ষ চিকিৎসক, তাহলে সমস্যার কিছুটা লাঘব হতো। কিন্তু তা তো নয়, আনোয়ারা সৈয়দ হক নিজের গুণে, নিজের দাবিতেই মনোযোগ আকর্ষণ করেন, সৈয়দ হকের মতোই যে বহুমুখী তাঁর সৃষ্টি-সাধনা, এই বিষয়ও উপেক্ষার নয়। 

এভাবে পূর্বপরিকল্পিত না হলেও তিনি আমার উপন্যাসে এসে গেলেন প্রায় অতর্কিতে, কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি নেই আমার। বেশ বেসামাল হয়ে পড়লাম লেখার আগেই। এমন জটিলতার মুখোমুখি এর আগে কখনো হইনি।

অনেকভাবেই দুজনের যৌথ জীবন নিয়ে লেখা শুরু করা যেতে পারে, কিন্তু আমি বেছে নিলাম তাঁদের প্রণয়পর্বের সময় থেকে, দীর্ঘ এক ভালোবাসার কাহিনির সূত্রপাত বর্ণনা করে। কিন্তু তাঁদের প্রণয়কাল তো কয়েক মাসের ভালোবাসা বা অনুরাগের অভিজ্ঞতা ছিল না। ইংরেজি কোর্টশিপ বলতে যা বোঝায়, সেই সংজ্ঞা বহুদূর বিস্তৃত করে দিলেন তাঁরা ঝাড়া সাড়ে তিন বছর, যাকে কথ্য ভাষায় বলে চুটিয়ে প্রেম করে। পরিচয় এবং লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট ধরনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে করা গেল না, কেননা আনোয়ারা চৌধুরী তখন মেডিকেলে পড়ছেন, ফাইনাল পরীক্ষা হবে আড়াই বছর পর। শুরু হলো দুজনের রিকশায় ঘোরাঘুরি, রেস্তোরাঁয় গিয়ে অগুনতি চায়ের কাপে প্রেমের তুফান তোলা। আমি এই অভূতপূর্ব ঘটনার সুযোগ নিলাম, লেখায় দেখালাম যে সৈয়দ হক তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গিনীকে নিয়ে যাচ্ছেন পুরান ঢাকার সেই সব রেস্তোরাঁয় এবং অন্যান্য স্থানে, যেখানে পঞ্চাশের দশকে হতো পূর্ববঙ্গের (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান) সাহিত্যিকদের তুমুল আড্ডা। এভাবে তাঁদের প্রেমের কাহিনি বলতে গিয়ে আমি পঞ্চাশের ঢাকা, সেই সময়ের রাজনীতি, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, বিশেষ করে সাহিত্যচর্চার বর্ণনা দিয়েছি। এই কাজে সহায়তা করেছে সৈয়দ হকেরই লেখা স্মৃতিকথা তিন পয়সার জ্যোছনা। কিন্তু তাতেই যেন সব হয় না, এমন মনে হলো, যার জন্য দুজনের শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের অভিজ্ঞতার কথা বলার ক্ষেত্রে শরণ নিতে হয় তাঁদের স্মৃতিচারণা—সৈয়দ হকের প্রণীত জীবন, হে বৃদ্ধ সময় এবং আনোয়ারা সৈয়দ হকের নরকের ফুল—এই গ্রন্থগুলোর। সেই সঙ্গে কল্পনা করি যে তাঁরা শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের দিনগুলো নিয়ে আলাপচারিতায় মগ্ন হন আড়াই বছরের প্রণয়কালে দেখা-সাক্ষাতের সময়। যে দীর্ঘ সময়ব্যাপী দুজনের কোর্টশিপ চলে এবং যখন তাঁরা ঢাকার অলিগলি মুখস্থ করে ফেলছেন ঘোরাঘুরি করে, তখনকার রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক জগতের ঘটনাও যুক্ত করি আমি প্রায় অবিচ্ছেদ্য পটভূমি হিসেবে। দুজনের প্রণয়কথা, তাঁদের অতীতের স্মৃতিচারণা এবং সমকালের সাহিত্যচর্চা লিপিবদ্ধ হয় বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। ফলে তাঁদের দুজনের সেই সময়ের জীবন ও অভিজ্ঞতা কেবল ব্যক্তিপর্যায়ে থাকে না, হয়ে যায় সমকালের প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্রপট। প্রণয় শেষে আড়াই বছর পর শুভ বিবাহে দুজনের সেই পর্বের জীবন সমাপ্ত হওয়ার আগেই সৈয়দ হককে আনোয়ারা একান্তে ডাকতে শুরু করেছেন ‘হেমিংওয়ে’ নামে। কারণ, তাঁর হেমিংওয়েপ্রীতি এবং তাঁর অনুসরণে প্রথম জীবনে গল্পে, উপন্যাসে গদ্যশৈলী ব্যবহার। আমৃত্যু এই প্রিয় নামে সম্বোধন করেছেন আনোয়ারা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে।

দ্বিতীয় খণ্ড লিখতে গিয়ে বেশ কঠিন এক সমস্যায় পড়ি। সেই একই, কোথা দিয়ে শুরু করা যাবে অতঃপর? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগে। অচিরেই উপলব্ধি করি যে তাঁদের দুজনের বিশাল ও বিচিত্র জীবন, সৈয়দ হকের ক্ষেত্রে যা প্রধানত সাহিত্যচর্চা, তার বয়ান সময়ের ক্রমানুসারে দিতে হলে উপন্যাসটি লিখতে হবে কয়েক খণ্ডে। তেমন সুযোগ নেই এবং তা কাম্যও নয় ভেবে শুরু করি সৈয়দ হকের কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকে। ছয় মাসব্যাপী দেশে এবং বিদেশে চিকিৎসা চলাকালীন বিভিন্ন ঘটনা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা হয়েছে দ্বিতীয় খণ্ড, যা এখনো অপ্রকাশিত। উল্লেখ্য, যে প্রথম খণ্ডটি বেশ বড় হওয়ার কারণে তিনটি পত্রিকার ঈদসংখ্যায় খণ্ডে খণ্ডে ছাপা হয়, একই শিরোনামে: হেমিংওয়ের সঙ্গে। দ্বিতীয় খণ্ড লিখতে গিয়ে সাহায্য নিই আনোয়ারা সৈয়দ হকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আমার কথোপকথনের এবং তাঁর প্রকাশিত, অপ্রকাশিত দিনলিপির। কাহিনি এগিয়েছে চিকিৎসার নানা ঘটনার বর্ণনা অবলম্বনে এবং সেই সঙ্গে তাঁদের দুজনের স্মৃতিচারণায় অতীতের বর্ণনা দিয়ে। 

প্রথম খণ্ডে আনোয়ারা সৈয়দ হকের নিজের কথা জানার জন্য ব্যবহার করেছি তাঁর সঙ্গে আমার কথোপকথনের, তাঁর লেখা স্মৃতিকথা নরকের ফুল এবং আমার কল্পিত তাঁর লেখা ডায়েরি। দ্বিতীয় খণ্ডে এসে কথোপকথন ও স্মৃতিকথার ব্যবহার অপরিবর্তিত থাকল, কিন্তু আনোয়ারা সৈয়দ হকের ডায়েরি লেখা কল্পনা করতে হলো না, পেয়ে গেলাম লিখিত অবস্থায়, যার কিছুটা ছাপা হয়েছে প্রথম আলোর ঈদসংখ্যায়। প্রথম খণ্ডের তুলনায় দ্বিতীয় খণ্ড লেখার জন্য বেশ কয়েকবার আলাপচারিতায় মিলিত হয়েছি আনোয়ারা সৈয়দ হকের সঙ্গে, গবেষক-কবি পিয়াস মজিদও সহায়তা করেছে মাঝেমধ্যে। আলাপচারিতার সময় আনোয়ারা সৈয়দ হকের প্রখর স্মৃতিশক্তি দেখে অবাক হয়েছি। তিনি শুধু সব মনে রাখেন না, আবেগহীন হয়ে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে, এমনকি যখন খুব ব্যক্তিগত এবং বেদনাদায়ক বিষয় এসে যায়, তখনো। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় আমার অনেক বিভ্রান্তি দূর হয়েছে, যার জন্য কাহিনির শূন্যস্থানগুলো পূরণে বেগ পেতে হয়নি।

দ্বিতীয় খণ্ডে কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং তার জন্য চিকিৎসার অভিজ্ঞতা, যা প্রত্যক্ষভাবে সৈয়দ হকের এবং পরোক্ষে আনোয়ারা সৈয়দ হকের, প্রাধান্য পেয়েছে। এই পর্বের বর্ণনা হয়েছে ধারাবাহিক, সময়ের ক্রম অনুসরণ করে, অনেক ক্ষেত্রে আনোয়ারা সৈয়দ হকের দিনপঞ্জি অবলম্বনে। প্রকৃত দিনপঞ্জির পাশাপাশি আমার কল্পিত দিনপঞ্জিও ব্যবহার করা হয়েছে, তবে বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। 

এই সময়কালে তাঁরা দুজন একে অন্যকে যা বলেছেন বা তাঁরা যা ভেবেছেন, তারই প্রসঙ্গে নিয়ে এসেছি অতীতের কথা, তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের গল্প। স্কেচের মতো এই চরিত্রচিত্রণ কখনো দুজনের মুখের বর্ণনায় অথবা প্রকাশিত কোনো বই থেকে নিয়ে, কখনো আমার কল্পনায় সম্পূর্ণ হয়েছে। তাঁদের পরিচিত মানুষের মধ্যে লেখক-শিল্পীদের কথাই বেশি করে এসেছে দ্বিতীয় খণ্ডের কাহিনিতে। সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতিও উঠে এসেছে, অতীত থেকে বর্তমানে। বিশেষ স্থান ও গুরুত্ব পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন ঘটনা, যখন তাঁদের দুজনকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়েছিল বেশ কিছু দিন। 

এ উপন্যাসটি দুজনের যাপিত জীবনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়, কালি-কলমে স্কেচ আঁকার মতো একটা কিছু তৈরি করে পাঠককে ভাবতে দেওয়া, এ–ই ছিল আমার লেখার উদ্দেশ্য। এটি লেখা হয়েছে মূলত আনোয়ারা সৈয়দ হকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। যেভাবে তিনি তাঁদের দুজনের জীবনকে দেখেছেন, সেই অভিজ্ঞতাই উঠে এসেছে লেখায়। 

সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে যে যৌথ জীবন যাপন করেছেন আনোয়ারা সৈয়দ হক, তা তাঁর কাছে এক বর্ণাঢ্য অ্যাডভেঞ্চারের মতো। সেই জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি নিজেকে ‘হেমিংওয়ে’র সহযাত্রী বলেই মনে করেছেন শেষ পর্যন্ত। সেই জন্য উপন্যাসটির নামকরণ হয়েছে হেমিংওয়ের সঙ্গে। এই নামকরণ শুধু বাস্তবের বর্ণনা নয়, সেই বর্ণিল অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনির স্মারকও বটে, যা ছিল বাংলা সাহিত্যের প্রায় বিরল এক দম্পতির জীবনযাপনের উদ্ভাস।